“আমি বিশ্বাস করি, মানুষের গাছ হওয়া উচিত।”
Published : 13 Oct 2024, 01:12 AM
দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান কাং এ বছর প্রথম কোরিয়ান লেখক এবং এশিয়ার প্রথম নারী হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। লেখালেখির প্রতি তার আগ্রহ শুরু হয় ১৪ বছর বয়সে, কবিতা আর জার্নাল লেখার মাধ্যমে।
আনুষ্ঠানিকভাবে সাহিত্যজীবন শুরু করেন কবিতা দিয়ে। ১৯৯৩ সালের শীতকালে ‘সাহিত্য ও সমাজ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার ৫টি কবিতা, যার মধ্যে ‘সিউলের শীত’ অন্যতম। পরের বছর ‘স্কারলেট অ্যাঙ্কর’ শিরোনামের ছোটগল্পের মাধ্যমে তিনি কথাসাহিত্যে আত্মপ্রকাশ করেন, যা সিউল শিনমুন বসন্ত সাহিত্য প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হয়।
এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম গল্প সংকলন ‘ইওসু-র প্রেম’, যা নিখুঁত ও সংক্ষিপ্ত বর্ণনার জন্য প্রশংসিত হয়। কলেজে পড়ার সময়, কোরিয়ার আধুনিকতাবাদী কবি ই সাং-এর একটি পঙক্তি তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে, “আমি বিশ্বাস করি, মানুষের গাছ হওয়া উচিত।”
এই পঙক্তিটিকে তিনি জাপানের অধীনে কোরিয়ার ঔপনিবেশিক ইতিহাসের সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। এটি তাকে তার ফ্ল্যাগশিপ কাজ ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ লিখতে অনুপ্রাণিত করে, এটি তার পঞ্চম উপন্যাস এবং ইংরেজিতে অনূদিত প্রথম সাহিত্যকর্ম।
উপন্যাস ও গল্প লেখার পাশাপাশি কবিতা বরাবরই তার লেখালিখির শক্তির অন্যতম উৎস। গবেষকদের মতে, কবিতা প্রভাবিত গদ্য তার লেখনীর প্রধান শক্তি। ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয় তার কবিতা সংকলন ‘ড্রয়ারে ভরে রেখেছি সন্ধ্যাকে’। হানের পিতা দক্ষিণ কোরিয়ার ঔপন্যাসিক হান সিউং-ওন।
কেন লিখেন? এই প্রশ্নে হানের বক্তব্য, “কারণ, আমি পৃথিবীকে আলিঙ্গন করতে চাই, জীবনের সঙ্গে কোলাকুলি করতে চাই। কিন্তু নিশ্চয়ই কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, যেখানে আমরা তা করতে পারি না।…আমি আমার লেখার শক্তি দিয়ে পথ চলি।”
ইংরেজি থেকে অনূদিত হানের দুটি কবিতা
গাঢ়-কালো আলোর ঘর
সেই দিন উই-ডং-এ
বরফবৃষ্টি পড়ছিল,
আর আমার দেহ, আত্মার সঙ্গী,
প্রতিটি ঝরা অশ্রুবিন্দুর সঙ্গে
উঠছিল কেঁপে।
উঠে পড়
সংকোচ করছ কীসের?
কী স্বপ্ন দেখছ, যা এমন ভাসমান?
দুইতলা বাড়িগুলো ফুলের মতো রয়েছে জ্বলে
আর তার নিচে আমি শিখেছি যন্ত্রণার পাঠ,
আর এক অস্পর্শিত আনন্দভূমির দিকে,
বোকামি করে বাড়িয়েছিলাম এই হাত।
পথে বেরিয়ে পড়ো।
কী স্বপ্ন দেখছ? চলতে থাকো।
হাঁটছিলাম স্মৃতির দিকে,
সড়কবাতির নিচে গড়ে উঠেছে যা
উপরে তাকাতেই দেখি;
আলোছায়ার মধ্যে গাঢ় অন্ধকারের একটি ঘর।
আকাশ ছিল কালো, আর সেই অন্ধকারে
উড়ে গিয়েছিল কিছু আবাসিক পাখি
শরীরের ভার ঝেড়ে ফেলে।
কতবার মরতে হবে যদি চাই এইভাবে উড়তে?
কেউই ধরতে পারল না আমার হাত
কোন স্বপ্ন মধুর এত?
কোন স্মৃতি
এতটা উজ্জ্বল?
মায়ের আঙুলের ডগার মত বরফ-বৃষ্টি
আঁচড়াচ্ছিল আমার এলোমেলো ভ্রুকে;
জমাট গালে করছিল আঘাত
আর সেই একই জায়গায়
বারবার বোলাচ্ছিল হাত।
দ্রুত, বেরিয়ে পড়ো তোমার পথে।
সিউলের শীত
কোনো একদিন যখন আসবে সেই দিন
আর সেই একদিন তুমি আসবে
যদি তুমি আসো প্রেম হয়ে সেদিন
হৃদয় আমার মুহূর্তে ছেয়ে যাবে
ঝিলমিল জলের ঝিলিকে।
আমার অতল অন্তর ঠাসা
তোমার ভালোবাসায়,
শ্বাস নিতে পারবো না ঠিকঠাক।
আমি তোমার শ্বাসক্রিয়া হবো
কালো কালি লেপা তোমার ঠোঁটে
হবো শ্রান্ত নিশ্বাস।
যদি তুমি আসো, প্রিয়তম
শুধু যদি তুমি আসতে পারতে
আমার বরফ-ঢাকা গালে
শোনাবো তোমায় সেই নদীর কলকল
যা তুমি এত ভালোবাসো।