সাম্প্রতিক সময়ে চীন থেকে আসা ৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে কারও শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পায়নি সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট-আইইডিসিআর।
Published : 04 Feb 2020, 03:55 PM
ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।
চীনে নতুন ধরনের করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় দেশটি থেকে যারা ফিরছেন, তাদের সবার ‘হেলথ স্ক্রিনিং’ হচ্ছে বিমানবন্দরে। তাতে জ্বর-সর্দির মত উপসর্গ যাদের থাকছে তাদের পরীক্ষা করছে আইইডিসিআর। এছাড়া সারা দেশ থেকে কোনো সন্দেহজক সংক্রমণের তথ্য পেলে তাদেরও পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এরকম মোট ৩৯ জনের রক্ত ও লালার নমুনা পরীক্ষা করে কারও মধ্যেই করোনাভাইরাসে সংক্রমণের প্রমান পাওয়া যায়নি বলে জানান অধ্যাপক ফ্লোরা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের ক্ষেত্রে তারা পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) পরীক্ষা করে নিশ্চিত হচ্ছেন। তারপর নিয়ম অনুযায়ী ওই নমুনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় পাঠানো হচ্ছে পুনঃপরীক্ষার জন্য।
বাংলাদেশে পিসিআর পরীক্ষার সুযোগ আছে কেবল আইইডিসিআরে। সে কারণে কারও মধ্যে সংক্রমণের সন্দেহ দেখা গেলে আইইডিসিআরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ভেল করোনাভাইরাস সাধারণ ফ্লুর মত হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে, ছড়াতে পারে মানুষ থেকে মানুষে।
করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত।
চীনের উহান শহরে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। এরপর এক মাসে ৪২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছড়িয়েছে।
এ ভাইরাস অন্যান্য দেশে ছড়াতে থাকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বৈশ্বিক সতর্কতা জারি করেছে। বাংলাদেশ সরকারও ইতোমধ্যে ৩১২ জনকে চীনের উহান শহর থেকে ফিরিয়ে এনে ঢাকায় পর্যবেক্ষণে রেখেছে। এ ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর উপসর্গ প্রকাশ পেতে এক থেকে ১৪ দিন সময় লাগতে পারে। সে কারণে উহানফেরতদের অন্তত ১৪ দিন পরীক্ষা করা হবে।
তাদের মধ্যে দুজনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে রাখা হয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, “দুজনের মধ্যে একজনকে জ্বর। আরেকজনের মাথাব্যথা থাকায় তাকেও গতকাল কুর্মিটোলায় আনা হয়েছে। যদিও করোনাভাইরাসের লক্ষণ বা উপসর্গের মধ্যে পড়ে না, তারপরও আমরা সতর্কতা হিসেবে তাকে এখানে রেখেছি। দুজন এখন ভালো আছেন, তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চলছে।”
গত শনিবার দেশে ফেরা ওই বাংলাদেশিদের মধ্যে তিন পরিবারের আটজন আছেন সিএমএইচে। বাকিদের আশকোনা হজ ক্যাম্পে রেখে পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং তারা সবাই ‘ভালো আছেন’ বলে জানান আইইডিসিআরের পরিচালক।
“করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কেউ আক্রান্ত হলে আইইডিসিআর তাকে দ্রুত অন্যদের থেকে আলাদা করে ফেলার কৌশল নিয়েছে, যাতে তার কাছ থেকে ভাইরাসটি অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে। এর অংশ হিসেবেই চীনফেরতদের ক্যাম্পে রেখেছি।”
বাংলাদেশে অবস্থান করা চীনের নাগরিকদের বিষয়ে তথ্য জানাতে গত ২৯ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের কাছে একটি নিদের্শনা পাঠিয়েছিল আইইডিসিআর। তাতে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে প্রায় ১০ হাজার চীনা নাগরিক কর্মরত থাকার প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।
আর গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪ হাজার চীনা নাগরিক বাংলাদেশে এসেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানোহয়।