ম্যাডোনার সংক্রমণ ‘গুরুতর’ এবং আইসিইউতে বেশ কয়েকদিন তাকে থাকতে হতে পারে।
Published : 29 Jun 2023, 11:47 AM
ব্যাক্টেরিয়াজনিত মারাত্মক সংক্রমণের কারণে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি হয়েছেন মার্কিন পপস্টার ম্যাডোনা; ফলে তার ‘ওয়ার্ল্ড ট্যুর’ স্থগিত করা হয়েছে।
‘পপ সম্রাজ্ঞীর’ ম্যানেজার গাই ওসেরি জানান, তার সংক্রমণ ‘গুরুতর’ এবং আইসিইউতে বেশ কয়েকদিন থাকতে হতে পারে। তবে শিগগিরই পুরোপুরি সেরে ওঠার প্রত্যাশা জানিয়েছেন তিনি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, নিউ ইয়র্ক সিটির একটি হাসপাতালে ম্যাডোনা চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে গাই ওসেরি বলেন, “ম্যাডোনার স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে, তবে এখনও তার চিকিৎসা চলছে।”
বিবিসি জানিয়েছে, ৬৪ বছর বয়সী এই সংগীত তারকা তার ৮৪ দিনের ওয়ার্ল্ড ট্যুর ফের আগামী মাস থেকে শুরু করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ম্যাডোনাকে প্রথমবার ‘সুপার হিট’ শব্দটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল তার প্রথম অ্যালবামের গান ‘হলিডে’; সেই সাফল্যের ৪০ বছর পূর্তি তিনি উদযাপন করছেন ‘গ্রেটেস্ট হিটস ট্যুরে’ ভক্তদের গান শুনিয়ে।
‘সেলিব্রেশন ট্যুরে’ ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত নিজের নামের প্রথম অ্যালবাম থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের ‘ম্যাডোনা এক্স’ অ্যালবামের সুপারহিট সব গানই গাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তার। বিভিন্ন শহরে ৩৫টি শো নিয়ে হবে ‘ম্যাডোনা-দ্য সেলিব্রেশন ট্যুর’।
সর্বশেষ ম্যাডোনাকে পারফর্ম করতে দেখা গেয়েছিল ২০১৯ সালের ম্যাডাম এক্স-এর শোগুলোতে। কিন্তু হাঁটু ও কোমরের ইনজুরির কারণে সেসময় বেশ কয়েকটি শো বাতিল করতে হয়। থিয়েটারভিত্তিক এক্সপেরিমেন্টাল সেই ট্যুরের শেষ দশটি শো ছিল প্যারিসে, সেগুলো বাতিল হয় কোভিড মহামারীর কারণে।
২০২০ সালে পর্তুগালের লিসবনে একটি অনুষ্ঠান বাতিল করে দুঃপ্রকাশ করেছিলেন ম্যাডোনা। সেসময় তিনি বলেছিলেন, “আমাকে অবশ্যই আমার শরীরের অবস্থাও বুঝতে হবে এবং বিশ্রাম নিতে হবে।”
ম্যাডোনার সাম্প্রতিক সফরের তারিখ রয়েছে কানডারে ভ্যাঙ্কুভারে ১৫ জুলাই। এরপর ৩০ জানুয়ারি মেক্সিকো সিটিতে এই ট্যুর শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
কিন্তু তার ম্যানেজার জানান, শনিবার ম্যাডোনার ‘গুরুতর ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ’ শুরু হয়। ফলে সমস্ত প্রতিশ্রুতি স্থগিত করা প্রয়োজন।
এখন পর্যন্ত লন্ডনে একটি শোর তারিখ রয়েছে। ১৪ অক্টোবর সেই শো হবে ওটু অ্যারিনায়। তবে আপশাশের তারিখে যুক্তরাজ্যে আরও শো করার সম্ভাবনা ছিল।
ছয় সন্তানের জননী ম্যাডোনা একাধারে গায়ক ও গীতিকার। কেবল যুক্তরাজ্যেই তার ৬৩টি গান বিভিন্ন সময়ে শীর্ষ দশে স্থান করে নিয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি গান ছিল নম্বর ওয়ান সিঙ্গেল।
রোলিং স্টোনের সমালোচকের মতে, ম্যাডোনার কণ্ঠ ছিল আশির দশকের সবচেয়ে মাদকতাময় স্বরগুলোর একটি। ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে ম্যাডোনাকে এমটিভি, বিলবোর্ড এবং মিউজিশিয়ান ম্যাগাজিন ‘দশকের সেরা শিল্পী’ আখ্যা দেয়।
একাধিক সিংগেলসের সাফল্যের পর ১৯৮৩ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম অ্যালবাম ‘ম্যাডোনা। অ্যালবামটি বিলবোর্ড ২০০-এ আট নম্বর জায়গা দখল করে এবং ‘বর্ডারলাইন’ ও ‘লাকিস্টার’ গান দুটি সিংগেলসের সেরা ১০ এ জায়গা করে নেয়।
১৯৮৪ সালে দ্বিতীয় স্টুডিও অ্যালবাম ‘লাইক আ ভার্জিন’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক তারকায় পরিণত হন ম্যাডোনা। এটা যে কোনো নারী সংগীত শিল্পীর প্রথম অ্যালবাম, যা যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ লাখ এবং বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়।
তার তৃতীয় অ্যালবাম ‘ট্রু ব্লু’ মুক্তি পায় ১৯৮৬ সালে, যা তিনি তৎকালীন স্বামী শন পেনকে উৎসর্গ করেছিলেন। ওই অ্যালবামের পাঁচটি এককের মধ্যে তিনটিই যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে ছিল এক নম্বর গান।
‘ব্লন্ড অ্যামবিশন ওয়ার্ল্ড ট্যুর’-এর লাইভ রেকর্ড তাকে এনে দেয় গ্র্যামি পুরস্কার।
গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে নেওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য রেকর্ড ভেঙেছেন ম্যাডোনা। তিনি ২০০৪ সালে যুক্তরাজ্যের মিউজিক হল অফ ফেমের পাঁচ প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের একজন নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে যুক্ত হন ‘রক অ্যান্ড রোল হল অফ ফেম’-এ।
রোলিং স্টোন তাকে সর্বকালের সেরা ১০০ শিল্পীর বিশেষ তালিকায় ৩৬-তম স্থান দেয়। আর বিলবোর্ড ২০১৬ সালে তাকে বর্ষসেরা নারীর তকমা দেয়।