পুলিশের ধারণা, আত্মহননের পথ বেছে নেন এই শিল্পী।
Published : 14 Mar 2024, 05:53 PM
রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সাদি মহম্মদকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর জামে মসজিদ কমপ্লেক্স কবরস্থানে মা-বাবার পাশে সমাহিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বাদ জোহর মোহাম্মদপুর জামে মসজিদে জানাজার পর তাজমহল রোডের ওই কবরস্থানে তাকে শায়িত করা হয়।
বুধবার রাতে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে সাদি মহম্মদদের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার ভাই শিবলী মহম্মদ বলেন, বুধবার সন্ধ্যা ৭টার পর কোনো এক সময় মোহাম্মদপুরের বাসায় তার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। পুলিশের ধারণা, আত্মহননের পথ বেছে নেন এই শিল্পী।
বৃহস্পতিবার বাসার নিচেই সাদির মৃতদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানান স্বজনেরা। এরপর বাদ জোহর তাকে দাফন করা হয় বাসার পাশের কবরস্থানে।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলম, অভিনেতা খায়রুল আলম সবুজ, গাউসুল আলম শাওন, গীতিকার কবির বকুলসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বহু পরিচিত মানুষ। এসেছিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, লাইসা আহমেদ লিসা, অণিমা রায়সহ অনেকে।
শহীদ সলিম উল্লাহর ছেলে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদ এবং নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ বাংলাদেশে সংস্কৃতি অঙ্গনে খুবই চেনা মুখ।
সলিম উল্লাহ ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে তার ছিল সখ্য। একাত্তরের ২৩ মার্চ মোহাম্মদপুরের বাসার ছাদে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছিলেন তিনি।
২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিনই অবাঙ্গালিরা ওই বাড়িতে চড়াও হয়ে আগুন দেয়। হত্যা করা হয় সলিম উল্লাহসহ তার পরিবারের কয়েকজনকে। পরে স্বাধীন বাংলাদেশে তার নামেই ঢাকার মোহাম্মদপুরের সলিম উল্লাহ রোডের নামকরণ করা হয়।
বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্র সংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা সাদি মহম্মদ একাধারে শিল্পী, শিক্ষক ও সুরকার ছিলেন। ২০০৭ সালে 'আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে' অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
২০০৯ সালে তার 'শ্রাবণ আকাশে' ও ২০১২ সালে তার 'সার্থক জনম আমার' অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। অসংখ্য সিনেমা ও নাটকে প্লেব্যাক করেছেন সাদি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক।
২০১২ সালে সাদি মহাম্মদকে আজীবন সম্মাননা দেয় চ্যানেল আই। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি তাকে রবীন্দ্র পুরস্কার দেয়।
নিজের বাসায় সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদের ঝুলন্ত লাশ
স্যার সলিমুল্লাহর পরিচিতির আড়ালে চাপা শহীদ সলিম উল্লাহর নাম
তবে গত কয়েক বছর ধরে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠানে খুব একটা দেখা যাচ্ছিল না সাদিকে। গতবছর জুলাই মাসে মারা যান সাদি-শিবলীর মা বেগম জেবুন্নেসা সলিম উল্লাহ। তারপর থেকে সাদি নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছিলেন বলে পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য।
নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা তো বুঝতে পারিনি কোন অভিমান বুকে চেপে রেখেছিলেন? এমন একটি কাজ করলেন, আমরা স্তব্ধ। শুধু বলব, সবাই উনার জন্য দোয়া করবেন। অনেক ভালো একজন মানুষ ছিলেন। তার এমন মৃত্যু আমাদের স্তব্ধ করে দিয়েছে।"