মাত্র ৩২ বছর বয়সে ব্রুস লির মৃত্যুর কারণ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ব্যাখ্যা এসেছে, আছে ষড়যন্ত্র তত্ত্বও।
Published : 22 Nov 2022, 01:02 PM
জীবনাবসানের অর্ধশতক পর মার্শাল আর্ট কিংবদন্তি ব্রুস লির মৃত্যুর কারণ ফের আলোচনায় এসেছে; নতুন এক গবেষণা বলছে, অতিরিক্ত পানি পান হয়ত তার মৃত্যু ডেকে এনেছিল।
১৯৭৩ সালের ২০ জুলাই হংকংয়ের কাউলুন টংয়ের এক বাড়িতে মারা যান ব্রুস লি, তার বয়স তখন ৩২ বছর।
এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘এন্টার দ্য ড্রাগন’ সিনেমার অভিনেতা লি ওই বছর মে মাস থেকেই শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। মৃত্যুর আগে জানিয়েছিলেন, তার মাথা ধরেছে, মাথাব্যথার ওষুধ খেয়ে তিনি ঘুমাতে গিয়েছিলেন। সেই ঘুম আর ভাঙেনি।
চিকিৎসকরা সে সময় ধারণা করেছিলেন, ‘সেরিব্রাল ইডিমা’ বা মস্তিষ্কে এক ধরনের প্রদাহ ব্রুস লির মৃত্যুর কারণ। ব্যথানাশক ওষুধই ওই প্রদাহের কারণ বলে সে সময় তারা মনে করেছিলেন।
স্পেনের একদল গবেষক এখন বলছেন, ব্রুস লির সেরিব্রাল ইডিমার কারণ হয়ত হাইপোন্যাট্রিমিয়া। তাদের সেই গবেষণা প্রতিবেদন সম্প্রতি ক্লিনিক্যাল কিডনি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমে গেলে তখন তাকে বলে হাইপোন্যাট্রিমিয়া, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কে। এর লক্ষণ অনেকটা ডিহাইড্রেশনের মত। মাথা ব্যথা, কোমা থেকে শুরু করে মৃত্যুও হতে পারে।
স্পেনের গবেষকরা বলছেন, শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছিল ব্রুস লির কিডনি। ওই অবস্থায় বেশি পানি খেলে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমতে থাকে। এর প্রতিক্রিয়ায় ফুলতে শুরু করে মস্তিষ্কের কোষ।
হলিউডের সিনেমায় মার্শাল আর্টকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া ব্রুস লির মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা তত্ত্ব সামনে এসেছে। তিনি গ্যাংস্টারদের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন কিনা, ইর্ষান্বিত হয়ে প্রেমিকা বিষ প্রয়োগ করেছেন কি না- এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্বের পাশাপাশি ‘পারিবারিক অভিশাপের’ কথাও এসেছে আড্ডায়-আলোচনায়।
ব্রুস লি কেন হাইপোন্যাট্রিমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন, তার কয়েকটি কারণও গবেষকরা ব্যাখ্যা করেছেন। গাঁজা সেবনে মানুষের তৃষ্ণা বেড়ে যায়, তাতে করে পানি পানের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
আবার কোনো ওষুধ বা অ্যালকোহলের কারণে তার কিডনির পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
শেষমেশ গবেষকরা এই উপসংহার টেনেছেন, “আমরা মনে করি, ব্রুস লির মৃত্যুর কারণ নির্দিষ্ট এক ধরনের কিডনি জটিলতা, যার কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়ার সক্ষমতা কমে গিয়েছিল। আর সেটা হাইপোন্যাট্রিমিয়ার কারণ ঘটায়, তাতে সেরিব্রাল ইডিমা (মস্তিষ্ক ফুলে যাওয়া) দেখা দেয়। অতিরিক্ত পানি পান করার পর শরীর থেকে সেই অনুপাতে পানি নির্গমন না হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হতে পারে। এই কারণগুলো লির মৃত্যুর সময়ের ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
লির স্ত্রী লিন্ডা লি ক্যাডওয়েল একবার তার স্বামী তরল খাদ্য তালিকা প্রকাশ করেছিলেন, যেখানে গাজর ও আপেলের রসের কথাও ছিল।
নিউ ইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, লেখক ম্যাথিউ পলি তার ‘ব্রুস লি: আ লাইফ’ বইটিতে লির অসুস্থতার আগে বেশি বেশি পানি পানের অভ্যাসের কথা লিখেছেন।
ভাগ্যের পরিহাস, ‘বি ওয়াটার মাই ফ্রেন্ড’ উক্তিটি ব্রুস লিই বিখ্যাত করে তুলেছিলেন। সেই পানিই তার মৃত্যুর কারণ বলে এখন মনে করছেন গবেষকরা।
ব্রুস লির জন্ম হয়েছিল ১৯৪০ সালের ২৭ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর চায়নাটাউনে। শিশু বয়সে ‘গোল্ডেন গেট গার্ল’ সিনেমা দিয়ে তিনি প্রথম পর্দায় আসেন। ১৮ বছর হওয়ার আগেই তিনি ২০টির বেশি সিনেমায় অভিনয় করেন।
মার্শাল আর্টে ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছায় হলিউড থেকেও একসময় নিজেকে সরিয়ে নেন ব্রুস লি। তাছাড়া হলিউডের সিনেমায় পার্শ্বচরিত্র করে করে বিরক্ত লি ভেবেছিলেন হংকংই তার ভবিষ্যৎ। হংকংয়ে থাকতে শুরু করার দুই বছরের মাথায় তার মৃত্যু হয়।