‘ওপেনহাইমার’ দেখে বিশ্বের নানা দেশের দর্শক, সমালোচকরা ‘ধন্য ধন্য’ করলেও সিনেমাটি দেখে মন খুলে প্রশংসা করতে পারেননি জাপানের দর্শকরা।
Published : 31 Mar 2024, 09:13 PM
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রধান বিজ্ঞানীকে নিয়ে তৈরি অস্কার জয়ী হলিউডি সিনেমা ‘ওপেনহাইমার’ জাপানে মুক্তি পেলেও দর্শকদের মধ্যে ‘অস্বস্তি’ তৈরি করেছে।
এই সিনেমাটি দেখার ক্ষেত্রে হলে ‘সতর্কতাও’ টানানো হয়েছে। স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, এটি আট দশক আগে দেশে পারমাণবিক বোমা হামলার স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে পারে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শেষ পর্যায়ে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহর দুটি প্রায় ধ্বংস হয়ে যায় মার্কিন বাহিনীর পারমাণবিক বোম হামলায়, প্রাণহানি হয় দুই লাখের বেশি মানুষের।
যুদ্ধে ক্ষত সারিয়ে উঠে দাঁড়ানো সেই দেশটিতে ‘ওপেনহাইমার’ এর মুক্তি দেওয়া হয়েছে তুলনামূলক বেশ পরে।
রয়টার্স লিখেছে, জাপান হলিউডি সিনেমার ভালো বাজার হলেও ‘ওপেনহাইমার’ এতদিন মুক্তি পায়নি। কারণ, প্রাথমিকভাবে ইউনিভার্সাল পিকচার্স 'ওপেনহাইমার'র বিশ্বব্যাপী মুক্তির পরিকল্পনায় জাপানকে অন্তর্ভুক্ত করেনি।
বিশ্বব্যাপী মুক্তির আট মাস পরে শুক্রবার জাপানে মুক্তি পায় নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলানের এই সিনেমা।
এই সিনেমার মূল উপজীব্য ‘পারমাণবিক বোমার জনক’ বিজ্ঞানী জে রবার্ট ওপেনহাইমারের পারমাণবিক বোমা তৈরি নিয়ে বৈজ্ঞানিক কাজকর্ম। পাশাপাশি একজন মেধাবী এক বিজ্ঞানীর সংবেদনশীল, করুণ আর ভঙ্গুর এক সত্তা তুলে ধরা হয়।
সিনেমাটি এবারে অস্কারে সেরা সিনেমা, সেরা নির্মাতা, সেরা অভিনেতাসহ সাত শাখায় পুরস্কার জিতে। এর আগে গোল্ডেন গ্লোব এবং বাফটা পুরস্কারও পায় ‘ওপেনহাইমার’। বিশ্বব্যাপী প্রায় এক বিলিয়ন ডলার রোজগারও করেছে এই সিনেমা।।
‘ওপেনহাইমার’ দেখে বিশ্বের নানা দেশের দর্শক, সমালোচকরা ‘ধন্য ধন্য’ করলেও সিনেমাটি দেখে মন খুলে প্রশংসা করতে পারেননি জাপানের দর্শকরা।
হিরোশিমার বাসিন্দা ৩৭ বছর বয়সী কাওয়াই বলেন, "বলার অপেক্ষা রাখে না যে এটি একটি অসাধারণ সিনেমা যা একাডেমি পুরস্কার জেতার যোগ্য। কিন্তু সিনেমাটি পারমাণবিক বোমাকে এমনভাবে চিত্রিত করেছে যা দেখে মনে হয় সেটি যথেষ্ট প্রশংসার যোগ্য। হিরোশিমার একজন বাসিন্দা হিসেবে আমি সিনেমাটি দেখতে অস্বস্তি বোধ করেছি।"
কাওয়াই বলেছেন, তিনি ওপেনহাইমার’ নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলানের একজন ভক্ত। জাপানের মুক্তির প্রথম দিনই তার বাসা থেকে বেশ দূরের একটি হলে গিয়ে সিনেমাটি দেখেন।
“আমি সবার কথা নিশ্চিত করে বলতে পারব না, তবে আমার মনে হয় এটা এমন একটি সিনেমা নোলান বানিয়েছেন, যা জাপানিদের দেখতে বিশেষ ধরনের ধৈর্য ধরতে হবে”, বলেন কাওয়াই।
‘ওপেনহাইমার’ জাপানে মুক্তির পর সোশাল মিডিয়ায় কিছু ছবিতে দেখা গেছে, টোকিওর কিছু প্রেক্ষাগৃহের প্রবেশপথে দর্শকদের জন্য সতর্ক নোটিশ টানানো হয়েছে।
ওই নোটিশে বলা হয়েছে, সিনেমাতে পারমাণবিক পরীক্ষার দৃশ্য রয়েছে যা জাপানের নাগরিকদের পারমাণবিক বোমার জন্য সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে পারে।“
সিনেমাটি দেখে অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন হিরোশিমার ৬৫ বছর বয়সী বাসিন্দা এগেমি কানেগা।
“সিনেমাটি দেখার মত, অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু কয়েকটি দৃশ্য দেখে অস্বস্তি বোধ করেছি। যেমন শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওপেনহাইমারের বিচার প্রক্রিয়া।"
পারমাণবিক বোমার ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া তেরুকো ইয়াহাতার বয়স এখন ৮৬, তিনি রয়টার্সকে সিনেমাটি দেখার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।
ইয়াহাতা বলেন, “এই বোমার পেছনে থাকা পদার্থবিজ্ঞানী ওপেনহাইমারের জন্য আমি কিছুটা সহানুভূতি অনুভব করি।“
১৯ বছর বয়সী জাপানি ছাত্র রিশু কানেমোতো সিনেমাটি দেখে বলেন, "হিরোশিমা এবং নাগাসাকি অবশ্যই পারমাণবিক বোমার শিকার হয়েছে। জাপানের কি পরিণতি হয়েছিল তা আমি কেবল নই, বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষই জানেন। কিন্তু আমি মনে করি, বোমার উদ্ভাবক অপরাধীদের মধ্যে একজন হলেও তিনি অবশ্যই যুদ্ধের শিকার হয়েছিলেন।"
আরও পড়ুন
শান্তির দূতদের অস্কার উৎসর্গ মার্ফির, আপ্লুত নোলান
সেরা চলচ্চিত্র, সেরা নির্মাতা, সেরা অভিনেতাসহ সাতটি অস্কার ‘ওপেনহাইমার’ এর ঝুলিতে