শান্তির দূতদের অস্কার উৎসর্গ মার্ফির, আপ্লুত নোলান

“আমরা সেই ব্যক্তিকে নিয়ে সিনেমা বানিয়েছি, যিনি বানিয়েছিলেন পারমাণবিক বোমা। এর ফলাফল ভালো বা মন্দ যাই হোক না কেন, আজকের পৃথিবীতে আমাদের সবার বসবাস ওপেনহাইমার জগতে।”

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2024, 10:15 AM
Updated : 11 March 2024, 10:15 AM

সিনেমার পর্দায় আমেরিকার পারমাণবিক বোমার জনক জে রবার্ট ওপেনহাইমারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে কিলিয়ান মার্ফি আউড়েছিলেন- ‘নাউ আই অ্যাম বিকাম ডেথ, দ্য ডেস্ট্রয়ার অব ওয়ার্ল্ডস’। আর অস্কার মঞ্চে সেরা অভিনেতার টফ্রি হাতে তিনি বললেন, এ পুরস্কার তিনি উৎসর্গ করছেন পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনকারীদের উদ্দেশে।

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে রোববার বিশ্ব চলচ্চিত্রের মর্যাদাপূর্ণ এই আসরে সেরা নির্মাতা, সেরা অভিনেতা, সেরা পার্শ্ব অভিনেতাসহ সাত শাখায় অস্কার জিতে বাজিমাত করেছে নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলানের ‘ওপেনহাইমার’।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ‘ম্যানহাটন প্রজেক্টের’ প্রধান বিজ্ঞানী জে রবার্ট ওপেনহাইমারের গল্প নিয়ে এ সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করে আগে থেকেই প্রশংসায় ভাসছেন মার্ফি। মেধাবী এক বিজ্ঞানীর সংবেদনশীল, করুণ আর ভঙ্গুর এক সত্তা পর্দায় ফুটিয়ে তোলার দায়িত্ব ছিল তার ওপর।

পুরস্কার হাতে নিয়ে আপ্লুত মার্ফি শুরুতেই বলেন, ‘আমি অভিভূত’। তারপর কিছুক্ষণ চুপ। দর্শক সারিতে তখন নিস্তব্ধতা।

এরপর অভিনেতা বলেন, “একজন আইরিশ নাগরিক হয়ে আমি গর্বিত। তবে সব কৃতিত্ব নির্মাতা নোলান এবং প্রযোজক এমা টমাসের। যারা একটি সৃজনশীল যাত্রায় আমাকে ভরসা করে সঙ্গী করেছেন। বলা যায়, সিনেমার দৃশ্যায়নে প্রতিটি মুহূর্তে নোলান আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আমি আর কেউ নই, কেবলমাত্র জে রবার্ট ওপেনহাইমার হয়ে বেঁচে আছি।“

মাথা নুইয়ে টিমের প্রত্যেক সদস্যকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান মার্ফি। সেরা অভিনয়ের জন্য পাওয়া অস্কার তিনি উৎসর্গ করেন পৃথিবীতে শান্তিস্থাপনকারীদের উদ্দেশে।

তিনি বলেন, “আমরা সেই ব্যক্তিকে নিয়ে সিনেমা বানিয়েছি, যিনি বানিয়েছিলেন পারমাণবিক বোমা। এর ফলাফল ভালো বা মন্দ যাই হোক না কেন, আজকের পৃথিবীতে আমাদের সবার বসবাস ওপেনহাইমার জগতে।”

নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলানকে বলা হয় নতুন নতুন কাজ দিয়ে নিজেকে ‘ছাড়িয়ে যাওয়া’ এক পরিচালক। সিনেমা দিয়ে বক্স অফিসকে ব্যবসার মুখ দেখানো নোলানের সঙ্গে জুটি বাঁধতে প্রযোজকরাও আগ্রহী থাকেন।

তার ‘মেমেন্টো’, ‘দ্য ডার্ক নাইট’, ‘ইনসেপশন’ বা ‘ডানকার্ক’ তুমুল আলোচিত হয়েছে, কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোনো পুরস্কার জেতেনি। গত দুই দশকে অস্কার আসরে সেরা নির্মাতার মনোনয়নের তালিকায় আটবার জায়গা হয়েছে নোলানের। কিন্তু ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি।

এবার ‘ওপেনহাইমার’ সিনেমার জন্য 'গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডস’ ও ‘বাফটা’ জিতে নেওয়ায় নোলান অস্কারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সেই অনুমান সত্যি হল।

পুরস্কার হাতে নোলান বলে, “ তাদের প্রতি আমার অপার ভালোবাসা যারা আমার জন্য এখানে আছেন, আমার পুরো ক্যারিয়ারকে গুরুত্ব দিয়েছেন। চলচিত্রের এক অবিশ্বাস্য যাত্রায় পুরো বিশ্ব আমার পাশে দাঁড়িয়েছে স্বজন হয়ে। “

মার্ভেলের ‘আয়রনম্যান’ চরিত্রের জন্য খ্যাতি পাওয়া রবার্ট ডাউনি জুনিয়র ‘ওপেনহাইমার’ সিনেমায় পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান লুইস স্ট্রসের চরিত্রে অভিনয় করেন। ডাউনিকে নিয়ে সমালোচকদের ভাষ্য ছিল, অভিনয়ের কারিশমা দেখাতে মূল চরিত্র সবসময় মুখ্য হয়ে ওঠে না।

অস্কারে সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার উঠেছে ডাউনির হাতে।

এই প্রাপ্তিটুকু ‘প্রয়োজন ছিল’ মন্তব্য করে ডাউনি বলেন, “আমি অ্যাকাডেমিকে ধন্যবাদ জানাই। এই প্রাপ্তিটুকু প্রয়োজন ছিল। চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে জীবনে যা যা করেছি, তা বৃথা যায়নি। বরং বড় ধরনের অর্থবহ হয়ে ধরা দিয়েছে এই আসর।”

এ অস্কার তার স্ত্রীকে উৎসর্গ করে বলেন, “আমি মাদকের হাতে বন্দি ছিলাম, গ্রেপ্তার হয়েছি, জেলও খেটেছি। আমার স্ত্রী সুসান ডাউ আমাকে পথে কুড়িয়ে পাওয়া বেড়াল ছানার মত তুলে নিয়ে এসে তার জীবনে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে দাঁড়াতে শিখিয়েছিলেন, তাই আমি আছি।”