“এক কোটি টাকা বাজেটের সিনেমা কখনোই একশ কোটির সাথে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারবে না। ”
Published : 26 Jan 2023, 05:45 PM
বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে হিন্দি সিনেমা দেখানোর বিরোধিতা করছেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান; তার আশঙ্কা, এতে দেশের চলচ্চিত্র শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।
সিনেমা হলগুলোর মালিকরা দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় সিনেমা দেখানোর তদ্বির করে আসছেন। তথ্যমন্ত্রী বলছেন, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো সম্মত হলে সরকারের আপত্তি নেই।
এর মধ্যেই চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস ‘সাফটা’ চুক্তির আওতায় শাহরুখ খানের সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘পাঠান’ বাংলাদেশে মুক্তি দেওয়ার কথা বলেছেন।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বৃহস্পতিবার গ্লিটজকে বলেন, “আমাদের সিনেমা কেবল গুটি গুটি পা পা করে আগাচ্ছে। পরাণ, হাওয়ার মতো সিনেমাগুলো নতুন প্রজন্মের দর্শকদের হলে টানছে। এ অবস্থায় হিন্দি ছবি মুক্তি দিলে দেশের চলচ্চিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে।”
প্রতিবেশী দেশ নেপালের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “নেপাল পরীক্ষামূলকভাবে হিন্দি ছবি মুক্তি দিয়েছিল। তারপর তাদের সিনেমা দর্শক হারিয়েছিল। পরে বাধ্য হয়ে হিন্দি ছবি বন্ধ করতে হয়েছে। আমাদের অবস্থাও হবে নেপালের মতো। চলচ্চিত্র শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। হাজার হাজার শিল্পী বেকার হয়ে যাবে।”
‘ফেব্রুয়ারির শুরুতেই’ বাংলাদেশকে পাঠান দেখাতে চান হল মালিকরা
সবাই রাজি হলে বছরে ১০টি হিন্দি সিনেমা আমদানি: তথ্যমন্ত্রী
এই চিত্রনায়কের মতে, বলিউডের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার সক্ষমতা এখনও অর্জন করেনি ঢালিউড। ফলে এখন ভারতীয় সিনেমা আমদানির সুযোগ দেওয়া হবে আত্মঘাতী।
তিনি বলেন, “ওদের বড় ইন্ডাস্ট্রি। একশ কোটি টাকা বাজেটে সিনেমা বানায়। আমাদের সিনেমার বাজেট থাকে এক কোটি টাকা। এক কোটি টাকা বাজেটের সিনেমা কখনোই একশ কোটির সাথে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারবে না। বাংলা ছবি তখন কেউ দেখবে না।
“আমাদের দেশের সিনেমা সাঁতাও মুক্তি পাবে। একজন পরিচালক গাঁটের টাকা খরচ করে কত কষ্টে সিনেমাটা বানিয়েছেন। এখন যদি পাঠান মুক্তি পায়, সাঁতাও কোথায় যাবে?”
জায়েদ খান বলেন, “ডিশের সহজলভ্যতার কারণে টেলিভিশনের বাজার পুরোপুরি ভারতীয় সিরিয়ালের দখলে চলে গেছে। হিন্দি ছবি দেশে আনলে হলের বাজারও ওদের দখলে চলে যাবে।
“আমাদের শিল্পীরা কাজ পাবে না। না খেয়ে মরবে। সে অবস্থা আমি কোনোভাবেই দেখতে চাই না। ফলে শুরু থেকে যেমন হিন্দি ছবি আনার বিরুদ্ধে ছিলাম, এখনও বিরুদ্ধেই আছি। আমি কোনোভাবেই হিন্দি ছবি আনার পক্ষে না।”
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি এক সময় ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির ঘোর বিরোধিতা করলেও এখন সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা নিপুণ আক্তার শর্ত সাপেক্ষে ছঝাড় দেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, পাঠান মুক্তি দেওয়া যাবে, তবে আয়ের ১০ শতাংশ শিল্পী সমিতিকে দিতে হবে।
নিপুণের এই বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন জায়েদ খান, যিনি নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষিত হওয়ার পর আপিলে বাদ পড়েন। তবে জায়েদ খান আদালতে যাওয়ায় সাধারণ সম্পাদক পদে কে থাকবেন, তার চূড়ান্ত মীমাংসা এখনও হয়নি।
জায়েদ খান বলেন, “সে (নিপুণ) নিজে যেমন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে, তার কথাবার্তাও অবৈধ।
“পাঠানের আয়ের ১০ শতাংশ যদি দিতেই হয়, শিল্পী সমিতিকে কেন দেবে? চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট আরও কত সংগঠন আছে। ক্ষতিগ্রস্ত তো সবাই হবে। তাছাড়া ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে সিনেমা আনবে কি শিল্পী সমিতিকে টাকা দেওয়ার জন্য? এগুলো অযৌক্তিক, শিশুসুলভ কথাবার্তা।”
সাফটা চুক্তির আওতায় হিন্দি সিনেমা আমদানি হলে বাংলাদেশের সিনেমাও ভারতে সমানভাবে দেখানোর দাবি জানান জায়েদ খান।
তিনি বলেন, “সাফটা চুক্তির আওতায় ছবি যদি আনতেই হয়; আমাদের ছবিও যথাযথভাবে ভারতে চালাতে হবে। আমাদের ছবি নিয়ে নামে মাত্র একটা-দুইটা হল দিয়ে ওরা আমাদের হল দখল করে নেবে, তা হবে না।”