গত শতকের ষাটের দশকে বলিউড নায়িকাদের মধ্যে পরিচিত মুখ ছিলেন আশা পারেখ; কুমারী থেকেছেন বলে কোনো আক্ষেপ নেই তার। বরং জীবনের ৮০ বছর পেরিয়ে এসে তার উপলব্ধি, বিয়ে না করে ভালোই করেছেন তিনি।
এদিকে আশা পারেখের পর সত্তরের দশকে হিন্দির সিনেমার আবেদনময়ী নায়িকা জিনাত আনামের উপলব্ধি, একজন অভিনেত্রীর সফল বিবাহিত জীবন যাপন করা অত্যন্ত ‘কঠিন’।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ‘আইডিয়াস অব ইন্ডিয়া সামিটে’ আড্ডায় বসেছিলেন এই দুই নায়িকা।
এর আগে স্মৃতিকথা ‘দ্য হিট গার্ল’-এ আশা পারেখ পরিচালক নাসির হুসেনের (আমির খানের চাচা) সঙ্গে তার প্রণয় কাহিনী তুলে ধরেন। ‘আইডিয়াস অব ইন্ডিয়া সামিটে’ আশা ফের তার প্রেম বিয়ে নিয়ে কথা বলেন রাখঢাক না রেখেই।
আশার ভাষ্য, তার এবং নাসির হুসেনের পরিবারের প্রতি সম্মান রেখেই তিনি বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেন। এবং একা জীবন কাটানোর ওই সিদ্ধান্তের জন্য তার কোনো হা হুতাশ নেই।
আশা পারেখ বলেন, “বিয়ে বিষয়টি বোধহয় শুধু স্বর্গেই ঘটে থাকে। যদি ভাগ্যে বিয়ে লেখা থাকে, তাহলে সেটি হবেই। আর বিধাতা যদি চান, হবে না, তাহলে হবে না। ঈশ্বর সম্ভবত আমার ভাগ্যে বিয়ে নিয়ে কিছু লিখতে ভুলে গিয়েছিলেন। তবে আমি খুশি যে বিয়ে হয়নি।”
‘কাটি পতঙ্গ’, ‘ক্যারাভাঁ’, ‘দো বদন’সহ বেশ কয়েকটি আলোচিত সিনেমায় কাজ করা আশা পারেখ বলিউড ছাড়ার পর টিভি সিরিয়াল প্রযোজনায় যুক্ত হন; করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাণও।
অন্যদিকে দেব আনন্দ, অমিতাভ বচ্চন, ধর্মেন্দ্র, বিনোদ খান্নাসহ ওই সময়ের সেরা নায়কদের বিপরীতে কাজ করা জিনাত আনাম অভিনয় থেকে সরে দাঁড়ান ১৯৮৫ সালে তার দ্বিতীয় বিয়ের পর।
৭১ বছর বয়সী জিনাত আনামের সরাসরি কথা হল, সুখী দাম্পত্য জীবন এবং সফল ক্যারিয়ার সমান্তরালে চলে না।
“নারী তারকারা এমনি এমনি স্টার হন না, ব্যক্তি বা সাংসারিক জীবনে বহু ত্যাগ স্বীকার করতে হয় তাদের। বিষয়টি কেউ স্বীকার করুক বা না করুক।”
জিনাত আনাম আরও বলেন, তিনি মনে করেন একটি ‘ভুল’ বিয়ে হওয়ার চেয়ে না হওয়া অনেক ভালো।
“ এ কথা অনেকেরই জানা নেই যে একজন অভিনয় শিল্পী তার বিবাহিত জীবনে শান্তিপূর্ণ রাখতে যারপরনাই চেষ্টা করেন। দাম্পত্য জটিলতা এড়াতে তাকে তটস্থ থাকতে হয়। এত ছাড় দিয়ে হয়তো তিনি আলোর মুখ নাও দেখতে পারেন।“
তবুও কেন বিয়ে করতে হবে? আশা পারেখের এই প্রশ্নে জিনাত জানান, তারা বিবাহিত জীবন চায় বলেই বিয়ে করেন।
“আমি জানি, সিনেমা জগতের অনেক মেয়েই এমন অনেক কিছু সহ্য করেন, যা সাধারণ মানুষ ভাবতেই পারবেন না।”
জিনাত ১৯৭০ সালে ‘মিস ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় সেরা হয়ে ‘মিস এশিয়া প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনালে’ মুকুট জয়ের পর সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন জিনাত আমান। তারপর মডেলিং থেকে নেমেছিলেন সিনেমায়।অল্প সময়েই বলিউডে শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি।
ব্লাউজবিহীন, সাদা শাড়িতে ঝর্ণার জলে স্নান- গত শতকের সত্তরের দশকে সত্যম শিবম সুন্দরম সিনেমায় এমন দৃশ্যে আসা জিনাত আমানকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল।
১৯৭৮ সালে সেই সিনেমা মুক্তির পর বলিউডে ‘সেক্স সিম্বল’ তকমাটি জিনাত আমানের গায়ে সেঁটে গিয়েছিল।
‘ইয়াদোঁ কা বারাত’, ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’, ‘ডন’, ‘হরে রাম হরে কৃষ্ণ’, ‘কুরবানি’, ‘দোস্তানা’, ‘ধর্ম বীর’, ‘দ্য গ্রেট গ্যাম্বলার’র মতো অনেক হিট সিনেমা এসেছে জিনাতের কাছ থেকে।
জিনাত প্রথমে বিয়ে করেছিলেন অভিনেতা-নির্মাতা সঞ্জয় খানকে, যিনি দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান টিভি সিরিজের জন্য। তাদের বিয়ে টিকেছিল মাত্র এক বছর।
পরে অভিনেতা মাজহার খানকে বিয়ে করেন জিনাত আমান। ১৩ বছর পর ১৯৯৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে।
আর আশা পারেখ তার সিনেমা জগতকে বিদায় জানানোর কারণ খোলাসা করে বলেন, এক সময় প্রধান চরিত্রের বাইরে মায়ের চরিত্রের অফার পেতে শুরু করেন তিনি। ইচ্ছা না থাকলেও কয়েকটি কাজ করেছিলেন তিনি।
এছাড়া একদিন সিনেমার সেটে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একজন পুরুষ অভিনয়শিল্পীর অপেক্ষায় থাকতে হয়েছিল তাকে; বিষয়টি নিয়ে অপমানবোধ করেছিলেন আশা। সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সিনেমায় আর একদিনও নয়।
মাঝে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে ‘কালিয়া’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও নিজের মঞ্জিল ততদিনে বলিউড থেকে সরিয়ে নেন ‘তিসরি মঞ্জিল’ চলচ্চিত্রের এ নায়িকা।