জন্মদিন আনন্দেই কাটে দেশের মঞ্চ-নাটকের দাপুটে অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদারের, কারণ একই দিনে তার একমাত্র মেয়ে অভিনেত্রী ত্রপা মজুমদারেরও জন্মদিন। এবারের দিনটি একটু বেশি আনন্দের, কারণ রোববার এই অভিনেত্রীর ৮০তম জন্মবার্ষিকী আর মেয়ের ৫০তম। স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অংসখ্য সম্মাননায় ভূষিত এই শিল্পী জীবন সায়াহ্নে এসে মানুষের ভালোবাসাকেই জীবনের সবচেয়ে ‘বড় পুরস্কার’ বলে মনে করেন। এই দীর্ঘ জীবনকে ‘সার্থক’ বর্ণনা করে তিনি বললেন, তার বিশ্বাস ‘সার্থক মৃত্যু’ও হবে তার। এছাড়া আমৃত্যু অভিনয় করে যেতে চান বলেও জানিয়েছেন ফেরদৌসী মজুমদার। জীবনের বিশেষ দিনে সেইসব কথাই বলছিলেন গ্লিটজের সঙ্গে।
Published : 18 Jun 2023, 07:43 PM
৮০ বছর পূর্ণ করলেন। জীবনের এই দীর্ঘযাত্রায় এই সময়ে দাঁড়িয়ে নিজের জীবনকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এটা দীর্ঘ আলাপে বলতে হবে। এখন শুধু এটুকু বলতে পারি। স্বার্থক জীবন পেয়েছি আমি, আমার বিশ্বাস আমার স্বার্থক মৃত্যুও হবে। খ্যাতি, যশ, ভালোবাসা, মায়া, স্নেহ সবই পেয়েছি এই একজীবনে। জীবন নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই, আফসোস নেই। অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। সব মিলিয়েই আমি সার্থক জীবন পেয়েছি। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমার এই জীবন আরও সার্থক হয়ে উঠবে।
আপনি তো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কারও পেয়েছেন।
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছি। এর জন্য আমি গর্বিত। তবে এই পুরস্কার পেয়েছি, তার কারণ মানুষ আমাকে ভালোবেসেছে। তাই সকল পুরস্কার, সম্মাননার চেয়ে আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানুষের ভালোবাসা। এই ভালোবাসায় বড় পুরস্কার এবং এই ভালোবাসার শক্তিতেই আমি আমার জীবনকে স্বার্থক মনে করি।
আজ তো আপনার মেয়ে ত্রপা মজুমদারেরও জন্মদিন; একই দিনে মা-মেয়ের জন্মদিনের বিষয়টি কেমন লাগে?
এটা ভীষণ উপভোগ করি। আমরাই তো প্রথম নয়, পৃথিবীতে আরও অনেকের এমন ঘটনা আছে। আলী যাকের এবং ইরেশ যাকেরের জন্মদিনও একই দিনে। তবে মেয়ের সঙ্গে নিজের জন্মদিনটা খুব আনন্দের কাটে। আমি ৮০তে পা দিলাম, আর আমার মেয়ে ত্রপা ৫০এ পা দিয়েছে। ফলে এই বছরটা একটু বেশিই আনন্দের।
জন্মদিন কীভাবে কাটছে?
সকালে অফিসে গিয়েছিলাম, সেখানে সবাই আনন্দ করেছে। আর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আনন্দ করব। আনন্দের মধ্য দিয়েই জন্মদিন কাটছে। খুব বেশি আড়ম্বর কিছু হচ্ছে না। কিন্তু সবাই আমাকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, এটা উপভোগ করছি। সবার ভালোবাসায় আমি আপ্লুত। সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
আপনার অভিনীত 'লাভ লেটারস' নাটকটি মঞ্চায়িত হবে আগামী ২৩ ও ২৪ জুন। ৮০ বছরে এসেও মঞ্চে অভিনয় করছেন। এই শক্তির উৎস কী?
অভিনয় করার জন্য প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি, আর দর্শকের ভালোবাসা। আমি যতদিন বাঁচব, অভিনয় করে যেতে চাই। দর্শক যতদিন আমার অভিনয় ভালোবাসবেন, ততদিনই অভিনয় করে যেতে চাই। এখন শরীরের জোর পাই না। এজন্য হেঁটে-চলে অভিনয়টা করতে পারি না। 'লাভ লেটারস' যারা দেখেছেন, তারা জানেন- এই নাটকেও আমি বসে বসেই অভিনয় করি। আমার সহশিল্পী থাকেন রামেন্দু মজুমদার এবং আরও কয়েকজন। নাটকটি নির্দেশনাও দিয়েছেন আমার মেয়ে ত্রপা মজুমদার।
ফেরদৌসী মজুমদারে জন্ম ১৯৪৩ সালের ১৮ জুন, পৈত্রিক নিবাস নোয়াখালীতে হলেও জন্ম বরিশালে, তবে তার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। বাবা খান বাহাদুর আব্দুল হালিম চৌধুরী, তার বড় ভাই কবীর চৌধুরী এবং মেজ ভাই মুনীর চৌধুরী। লেখাপড়ার শুরু নারী শিক্ষা মন্দির স্কুলে, ম্যাট্রিক পাস করেন মুসলিম গার্লস স্কুল থেকে। ইডেন কলেজে পড়াশোনার সময় প্রথম অভিনয় ‘ডাক্তার আবদুল্লাহর কারখানা’ নাটকে। ১৯৭০ সালে বিয়ে করেন রামেন্দু মজুমদারকে। ১৯৭২ সালে ‘থিয়েটার’ গঠনের শুরু থেকে এই নাট্যদলের সঙ্গী। বিটিভিতে তিনশ’র মতো নাটক করেন তিনি, অভিনয় করেন চলচ্চিত্রেও। ফেরদৌসী মজুমদারকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈ করেন আবদুল্লাহ আল মামুন, শিরোনাম ‘জীবন ও অভিনয়’। ঢাকার উইল্স্ লিট্ল্ ফ্লাওয়ার স্কুলের শিক্ষকতাও করেছিলেন তিনি।
মেয়ের নির্দেশনায় মঞ্চে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা শুনতে চাই?
মেয়ের নির্দেশনায় অভিনয় করাটা আমার জন্য বিরল প্রাপ্তি। কোনোদিন ভাবিনি মেয়ের সাথে অভিনয় করব, সেটাও করলাম। ভাবিনি মেয়ের নির্দেশনায় কাজ করব, সেটাও করলাম। মেয়ের নির্দেশনায় যখন অভিনয় করি, তখন তো আমি শিল্পী হিসেবেই কাজ করি। তখন তো সে থাকে নির্দেশক। আমিও নির্দেশকের কথামতো নিজের অভিনয়টুকু করার চেষ্টা করি। ফলে সেখানে মা-মেয়ের পরিচয় ছাপিয়ে নির্দেশকের পরিচয়টাই বড় হয়ে উঠে।
মার্কিন নাট্যকার এ আর গার্নির বিখ্যাত নাটক ‘লাভ লেটারস’ এর বাংলা রূপান্তর করেছেন আবদুস সেলিম। এতে পাঠ-অভিনয় করেছি আমি এবং রামেন্দু মজুমদার। আরও আছেন রবিন বসাক ও নাজমুন নাহার নাজু। ২৩ ও ২৪ জুন ঢাকার নাটক সরণির মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে নাটকটির দুটি প্রদর্শনী হবে। সবাইকে দেখার আমন্ত্রণ জানাই।
আপনাকে ধন্যবাদ এবং শুভ জন্মদিন।
তোমাকেও ধন্যবাদ। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদেরও শুভেচ্ছা।