অপর্ণার ভাষ্য, চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয়ে মৃণাল সেন একেবারে জীবন্ত হয়ে উঠেছেন।
Published : 23 Aug 2024, 01:20 PM
ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেন রূপে বাংলাদেশের অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর ‘মুন্সিয়ানা’ দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন কলকাতার অভিনেত্রী ও পরিচালক অপর্ণা সেন।
কলকাতার প্রেক্ষাগৃহে এক সপ্তাহ ধরে চলছে সৃজিত মুখার্জি পরিচালিত ‘পদাতিক’ সিনেমাটি।
সিনেমায় মৃণাল সেনের চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরীর প্রশংসা করে ফেইসবুকে এক দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন অপর্ণা সেন।
অপর্ণা লিখেছেন, "চঞ্চল চৌধুরীর কথা বিশেষভাবে বলছি শুধু তার চেহারায় মৃণাল সেনের একটা আদল খুঁজে পাওয়া যায় (যে আদলকে অত্যন্ত চমৎকারভাবে কাজে লাগিয়েছেন পরিচালক) বলেই নয়; চঞ্চলবাবুর পর্দার উপস্থিতি এতটাই জোরালো যে, প্রায় যেকোনো চরিত্রেই তিনি ভালো অভিনয় করবেন। মৃণাল সেনের কণ্ঠস্বর, তার বসার ভঙ্গি, দাঁতের ফাঁকে পাইপ ধরে তাকাবার ধরণ, সবকিছু সম্পন্ন হয়েছে আপাত অনায়াস দক্ষতায়।
“কিন্তু আমরা সকলেই জানি প্রকৃতপক্ষে অন্য একজন মানুষকে আত্মস্থ করাটা ঠিক কতটা আয়াসসাধ্য। তাই পর্দায় বিশ্বাসযোগ্য মৃণাল সেন হয়ে ওঠার জন্যে চঞ্চলবাবুকে কুর্নিশ জানাই। আশা করবো উনি পশ্চিমবঙ্গে আরও অনেক ছবিতে অভিনয় করে আমাদের সিনেমাকে সমৃদ্ধ করবেন।"
অপর্ণার ভাষ্য, চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয়ে মৃণাল সেন একেবারে জীবন্ত হয়ে উঠেছেন। এছাড়া মৃণালের স্ত্রী গীতা সেনের চরিত্রটি করা অভিনেত্রী মনামী ঘোষের অভিনয়েরও প্রশংসা করেছেন তিনি।
“চমৎকার লাগলো গীতা এবং মৃণাল সেনের দাম্পত্য জীবনের ওঠাপড়া-ভালোবাসা-বন্ধুত্ব-অভিমানে তরঙ্গায়িত দুই কমরেডের পথচলা যেমন বাস্তব, তেমনই মধুর। অভিনয় এই ছবির মস্ত বড় সম্পদ। বিশেষ করে পাশাপাশি মনামীও খুবই বিশ্বাসযোগ্য গীতা সেনের চরিত্রে।"
পরিচালক সৃজিতকে এই সিনেমায় নতুন করে আবিষ্কার করেছেন অর্পণা। বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রী মনে করেছেন, এই সিনেমায় সৃজিত অনেক গভীরতা নিয়ে হাজির হয়েছেন।
“এক নতুন সৃজিতকে খুঁজে পেলাম। সৃজিতের সিনেমাগুলোতে এর আগে নতুন নতুন চমক পেয়েছি। পেয়েছি চাকচিক্য, অভিনবত্ব, টেকনিকের খেলা। কিন্তু এতটা গভীরতা কোথায় ছিল এতদিন? আসলে ভালো সিনেমার প্রতি, পূর্বসূরিদের কাজের প্রতি, পরিচালকের একটা আন্তরিক ভালোবাসা জড়িয়ে রয়েছে এই ছবির পরতে পরতে।
“মৃণাল সেনের সিনেমা ও জীবন নিয়ে সৃজিত যে গভীরভাবে গবেষণা করেছেন এবং তার চেয়েও বড় কথা তার সারমর্ম অন্তরে উপলব্ধি করেছেন, ‘পদাতিক’ সিনেমাটি তার প্রমাণ। সেই উপলব্ধিই খুঁজে নিয়েছে এই সিনেমার ভাষা। ‘পদাতিক’ এখানে মৃণাল সেন, ‘পদাতিক’ এখানে সৃজিতও। তাই ‘পদাতিক’ সিনেমাটি সার্থকনামা।"
অভিনেত্রী একজন নির্মাতার চোখে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন ‘পদাতিক’। সম্পাদনা, সিকোয়েন্স, দৃশ্য ইন্টারকাট সব কিছুই উঠে এসেছে তার লেখায়।
শুধু নির্মাতা ও নির্মাণ নিয়ে নয়, সিনে সমালোচকদেরও সচেতন করেছেন অর্পণা সেন। সিনেমাটি দেখতে হলে মৃণাল সেনের বা সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে কিছুটা ‘হোমওয়ার্ক’ করে যাওয়ারও পরামর্শ দিলেন অভিনেত্রী।
তিনি বলেন, “খুব ভালো লাগল মৃণাল সেন আর সত্যজিৎ রায়ের সম্পর্কের দিকটা। দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও দ্বন্দ্ব, বিতর্ক ও বন্ধুত্ব সাবলীলভাবে ধরা পড়েছে। যে দৃশ্যে শোকাচ্ছন্ন দুজনেই হাসপাতালে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সদ্য-প্রয়াত ঋত্বিক ঘটকের মরদেহের পাশে, সেখানে তিনজন লেজেন্ডের একত্র উপস্থিতি, সিনেমাপ্রেমী আমার চোখে জল এনে দিয়েছিল। বারবার মনে হচ্ছিল কাদের হারিয়েছি আমরা!’
'পদাতিক' সিনেমার কাহিনীতে মৃণালের ‘পরিচালনা’ জীবন প্রাধ্যান্য পেয়েছে, সঙ্গে ব্যক্তিজীবনও কিছুটা উঠে এসেছে। এছাড়া ‘ইন্টারভিউ’ (১৯৭১), ‘ক্যালকাটা ৭১’ (১৯৭২) এবং ‘পদাতিক’ (১৯৭৩) এই কলকাতা ট্রিলজির নির্মাণের কথা বিশেষভাবে জায়গা পেয়েছে বায়োপিকে।
চঞ্চল ছাড়াও সিনেমায় অভিনয় করছেন মনামী ঘোষ এবং সম্রাট চক্রবর্তী। আরো আছেন জীতু কমল, কোরাক সামন্ত।
বয়োপিকের চিত্রনাট্যও লিখেছেন সৃজিত, এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেছেন মৃণাল সেনের ছেলে কুণাল। সিনেমাটি প্রযোজনা করছেন ফিরদৌসুল হাসান।
ঢাকায় এই সিনেমাটি ১৬ অগাস্টে মুক্তির কথা থাকলেও, সরকার পতনের পর চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান।