আগামী কয়েকদিন কলকাতায় বোনের বাড়িতে বিশ্রামে থাকবেন মিঠুন চক্রবর্তী।
Published : 13 Feb 2024, 07:05 PM
'ইস্কিমিক স্ট্রোকে' আক্রান্ত ভারতীয় অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়েছেন।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়ে সোমবার কলকাতায় বোনের বাড়িতে গেছেন এই অভিনেতা। আপাতত সেখানেই কয়েকদিন বিশ্রামে থাকার কথা রয়েছে মিঠুনের।
অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী বলেন,“চিকিৎসক দাদাকে আপাতত বিমানে উঠতে নিষেধ করেছেন। তাই মুম্বাইয়ে যাননি দাদা। আগামী কয়েক দিন কলকাতায় আছেন।“
সোহম প্রযোজিত ‘শাস্ত্রী’ সিনেমার শুটিং করার সময়ই শনিবার অসুস্থ হয়ে পড়েন মিঠুন।
সেদিন সকালে শরীরের ডান দিকের উপর ও নিচের অংশে ব্যাথা নিয়ে কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যান মিঠুন। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তার মস্তিষ্কে ইস্কেমিক সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাক্সিডেন্ট (স্ট্রোক) ধরা পড়ে।
ওই হাসপাতালেই নিউরোলজি, কার্ডিয়োলজি এবং গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল টিম মিঠুনের চিকিৎসা করে।
মিঠুনের সুস্থ হওয়ার খবর দিয়ে সোহম বলেন, “আমার ছোটবেলা থেকে মানুষটার সঙ্গে সম্পর্ক। শেষে আমার সিনেমার শুটিং করতে গিয়েই উনি অসুস্থ হলেন! আমার নিজেরই খুব খারাপ লাগছিল। দাদা বাড়ি ফিরেছেন, আমি প্রচণ্ড খুশি। “
অ্যাপোলোর চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে সোহম বলেন, “হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও বারবার আমাকে অসুস্থতার জন্য সরি বলেছেন মিঠুনদা! বলেছেন যে, দুদিন শুটিং বন্ধ রয়েছে, তার জন্য তিনি বাড়তি দুদিন শুটিং করবেন।“
সোহম বলেছেন, আগামী ২২ তারিখ থেকে ‘শাস্ত্রী’ সিনেমার পরবর্তী শুটিংয়ের পরিকল্পনা নেওয়া হলেও আরও দুদিন আগে অর্থাৎ ২০ তারিখেই কাজে ফিরতে চান মিঠুন।
‘শাস্ত্রী’ সিনেমার নির্মাতা পথিকৃৎ বসুর ভাষ্য, “মিঠুনদা দ্রুত শুটিংয়ে ফিরতে চান। তার স্পিরিটটাই অন্যরকম। অনুপ্রেরণা যোগায়।“
‘শাস্ত্রী’ সিনেমার প্রেক্ষাপট জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর। এ সিনেমার মূল চরিত্রে মিঠুনের সঙ্গে আছেন অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়। এ সিনেমার মধ্য দিয়ে প্রায় ১৬ বছর পর মিঠুন-দেবশ্রীর জুটি বেঁধে পর্দায় আসার কথা রয়েছে।
গত বছর মুক্তি পায় মিঠুন অভিনীত ‘কাবুলিওয়ালা’ সিনেমা। ওই সিনেমায় মিঠুনের অভিনয় প্রশংসা কুড়ায় দর্শক মহলে। এর আগে আসে মিঠুনের হাস্যরসের সিনেমা ‘প্রজাপতি'। এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান মিঠুন।
বছরখানেক ধরে কলকাতার বাংলা সিনেমায় ফের আগ্রহী হয়েছেন মিঠুন। কিছুদিন আগে বলেছিলেন, এখন তিনি ভিন্নধর্মী গল্পে কাজ করতে চান। বিশেষ করে হাস্যরসের চিত্রনাট্যকে ইদানিং গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি।
অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর পর্দার পেছনের নাম হল গৌরঙ্গ চক্রবর্তী। তার জন্ম ১৯৫০ সালের ১৬ জুন কলকাতার জোড়াবাগানে।
কলকাতা স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন মিঠুন। ৭৪ বছর বয়সী মিঠুনের অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের হাত ধরে। মৃণালের পরিচালনায় ‘মৃগয়া’ মিঠুনের প্রথম সিনেমা। অভিষেকেই পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এরপরের যাত্রা বলিউড।
কেবল অভিনয় নয়, বহু গুণে গুণী মিঠুন মার্শাল আর্টসেও সমান পারদর্শী। অর্জন করেছেন ‘ব্ল্যাক বেল্ট’।
১৯৮২ সালের সিনেমা ‘ডিসকো ডান্সার’ এ জিমি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মিঠুন। জিমি চরিত্রটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০০৮ সালে ‘জিমি ঝিনচক, এজেন্ট অফ ডিসকো’ শিরোনামের একটা কমিক প্রকাশিত হয়, যা যুক্তরাষ্ট্রে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। সেই থেকে মিঠুন খ্যাত 'ডিস্কো ডান্সার' নামে।
‘ডিস্কো ডান্সার’ মুক্তির পর তা পূর্ব সোভিয়েত ইউনিয়নে দ্বিতীয়-সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র হয়। এছাড়া পূর্ব ইউরোপ, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যেও বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
১৯৮৯ সালে মোট ১৯ সিনেমায় অভিনয় করে ‘লিমকা বুক অফ রেকর্ড’ গড়েন মিঠুন। এখনো পর্যন্ত সে রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেনি। এরপর ১৯৯১ সালে ‘অগ্নিপথ’ সিনেমায় ‘কৃষ্ণন ইয়ের নারিয়াল পানিওয়ালা’ ভূমিকায় অভিনয় করে সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার জেতেন।
‘তাহাদের কথা’ (১৯৯২) ও ‘স্বামী বিবেকানন্দ’ (১৯৯৮) সিনেমার জন্য জেতেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ক্যারিয়ারে চারশর বেশি সিনেমা করা মিঠুন অভিনয় করেছেন হিন্দি, পাঞ্জাবি, ওড়িয়া, ভোজপুরি, তামিল, তেলেগু ও কন্নড় সিনেমায়।
পুরনো খবর
মিঠুনের শরীরের ডান দিক 'দুর্বল', সাড়া দিচ্ছেন চিকিৎসায়
শুটিংয়ে হঠাৎ অসুস্থ মিঠুন, পাঠানো হল হাসপাতালে
ফিল্ম ফেয়ার বাংলা: সেরা অভিনেতা মিঠুন, আজীবন সম্মাননা অপর্ণাকে
রবি ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ হয়ে আসছেন মিঠুন
অস্কারে মনোনীত ‘দ্য কাশ্মির ফাইলস’ নিয়ে যা বললেন মিঠুন