মিঠুনের মস্তিষ্কে ইস্কেমিক সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাক্সিডেন্ট (স্ট্রোক) ধরা পড়েছে। তবে এখন তিনি সম্পূর্ণ সচেতন আছেন।
Published : 11 Feb 2024, 12:16 PM
'ইস্কিমিক স্ট্রোকে' আক্রান্ত ভারতীয় অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর শরীরের ডান দিক 'দুর্বল' হয়ে গেছে; ডান হাত নাড়াতে ‘অস্বস্তি হচ্ছে' এ অভিনেতার।
তবে পুরোপুরি সজ্ঞান অবস্থায় থাকা মিঠুন চিকিৎসায় 'সাড়া দিচ্ছেন' বলে চিকিৎসকদের বরাতে জানিয়েছে ভারতীয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার।
কলকাতার এই সংবাদমাধ্যম লিখেছে, মিঠুন কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে আইসিইউতে রয়েছেন। তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে অল্প কথাও বলেছেন। আপাতত তাকে তরল খাবার দেওয়া হচ্ছে।
মিঠুনের চিকিৎসায় হাসপাতালের নিউরোলজি, কার্ডিয়োলজি এবং গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে একটি মেডিকেল টিম করা হয়েছে।এই মেডিকেল টিমের প্রধান হলেন নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় ভৌমিক।
আনন্দবাজার লিখেছে, আরও কিছু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মিঠুনের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসকরা।
কলকাতায় 'শাস্ত্রী’ সিনেমার শুটিং করছিলেন মিঠুন, এর মধ্যেই শনিবার সকালের দিকে অসুস্থ বোধ করেন। এরপর দ্রুত তাকে অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানায়, "মিঠুন চক্রবর্তী, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা শরীরের ডানদিকের উপর ও নিচের অংশে ব্যাথা নিয়ে শনিবার সকাল ৯.৪০মিনিটে কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন। তার মস্তিষ্কের 'এমআরআই'সহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা এবং রেডিওলজির বিভাগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। তার মস্তিষ্কের ইস্কেমিক সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাক্সিডেন্ট (স্ট্রোক) ধরা পড়েছে। তবে বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণ সচেতন এবং ভালো আছেন।"
হাসপাতালে মিঠুনকে দেখতে গিয়েছিলেন ভারতীয় সিনেমার নায়ক দেব ও সোহম চক্রবর্তী।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের দেব বলেন, "মিঠুনদা ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। মজায় আছেন। চিন্তার কিছু নেই। প্রার্থনা করি মিঠুনদা যাতে দ্রুত সেরে ওঠেন। মিঠুনদা আমার বাবার মত। আমার মনে হয় দ্রুতই ছেড়ে দেবে দাদাকে।"
সোহম চক্রবর্তী বলেন, "মিঠুনদা ভালো আছেন। চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন এখন।"
পথিকৃৎ বসু পরিচালিত ‘শাস্ত্রী’ সিনেমার প্রেক্ষাপট জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর। এ সিনেমার মূল চরিত্রে মিঠুনের সঙ্গে আছেন অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়। এ সিনেমার মধ্য দিয়ে প্রায় ১৬ বছর পর মিঠুন-দেবশ্রীর জুটি বেঁধে পর্দায় আসার কথা রয়েছে। সিনেমাটি প্রযোজনা করছেন অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী।
গত বছর মুক্তি পায় মিঠুন অভিনীত ‘কাবুলিওয়ালা’ সিনেমাটি। ওই সিনেমায় মিঠুনের অভিনয় প্রশংসা কুড়ায় দর্শক মহলে। এর আগে আসে মিঠুনের হাস্যরসের সিনেমা ‘প্রজাপতি'। ওই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান মিঠুন।
বছরখানেক ধরে কলকাতার বাংলা সিনেমায় ফের আগ্রহী হয়েছেন মিঠুন। কিছুদিন আগে বলেছিলেন, এখন তিনি ভিন্নধর্মী গল্পে কাজ করতে চান। বিশেষ করে হাস্যরসের চিত্রনাট্যকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর পর্দার পেছনের নাম হল গৌরঙ্গ চক্রবর্তী। তার জন্ম ১৯৫০ সালের ১৬ জুন কলকাতার জোড়াবাগানে।
কলকাতা স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন মিঠুন। ৭৪ বছর বয়সী মিঠুনের অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের হাত ধরে। মৃণালের পরিচালনায় ‘মৃগয়া’ মিঠুনের প্রথম সিনেমা। অভিষেকেই পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এরপরের যাত্রা বলিউড।
১৯৮২ সালের সিনেমা ‘ডিসকো ডান্সার’ এ জিমি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মিঠুন। জিমি চরিত্রটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০০৮ সালে ‘জিমি ঝিনচক, এজেন্ট অফ ডিসকো’ শিরোনামের একটা কমিক প্রকাশিত হয়, যা যুক্তরাষ্ট্রে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। সেই থেকে মিঠুন খ্যাত হয়েছেন 'ডিস্কো ডান্স্যার' নামে।
ক্যারিয়ারে চারশর বেশি সিনেমা করা মিঠুন অভিনয় করেছেন হিন্দি, পাঞ্জাবি, ওড়িয়া, ভোজপুরি, তামিল, তেলেগু ও কন্নড় সিনেমায়। মৃগয়া ছাড়াও ‘তাহাদের কথা’ (১৯৯২) ও ‘স্বামী বিবেকানন্দ’ (১৯৯৮) সিনেমার জন্য জিতেছেন ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
আরও পড়ুন:
রবি ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ হয়ে আসছেন মিঠুন
অস্কারে মনোনীত ‘দ্য কাশ্মির ফাইলস’ নিয়ে যা বললেন মিঠুন
রাজের অ্যাকশন সিনেমায় আসছেন মিঠুন
কমবয়সী দর্শকদের কথা ভেবেই 'কাবুলিওয়ালা': মিঠুন
শুটিংয়ে হঠাৎ অসুস্থ মিঠুন, পাঠানো হল হাসপাতালে
ফিল্ম ফেয়ার বাংলা: সেরা অভিনেতা মিঠুন, আজীবন সম্মাননা অপর্ণাকে