ক্যারিয়ারে ৪০০ সিনেমা করা মিঠুনের ভাষ্য, এখন তিনি ভিন্নধর্মী গল্পে কাজ করতে চান। বিশেষ করে হাস্যরসের চিত্রনাট্যকে ইদানিং গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি।
Published : 08 Dec 2023, 09:32 AM
কম বয়সী দর্শকদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই 'কাবুলিওয়ালা' সিনেমাটি করেছেন ভারতের হিন্দি ও বাংলা সিনেমার অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী।
ক্যারিয়ারে ৪০০ সিনেমা করা এই অভিনেতার ভাষ্য, এখন তিনি ভিন্নধর্মী গল্পে কাজ করতে চান। বিশেষ করে হাস্যরসের চিত্রনাট্যকে ইদানিং গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি।
আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাবুলিওয়ালা ও অন্যান্য কাজ নিয়ে কথা বলেছেন মিঠুন।
পরিচালক তপন সিংহ ‘কাবুলিওয়ালা’ বানিয়েছিলেন ১৯৫৬ সালে। এরপরে হিন্দিতেও দুবার রাবীন্দ্রনাথের কালজয়ী গল্পটি পর্দায় এসেছে সিনেমা আকারে। এবার মিঠুনকে কাবুলিওয়ালা ‘রহমত আলী’ বানিয়ে নতুন সিনেমা নির্মাণ করেছেন কলকাতার পরিচালক সুমন ঘোষ।
ছোট্ট মেয়ে মিনি আর কাবুলিওয়া রহমত আলীর বন্ধুত্ব এই গল্পের মূল বিষয়। ‘কাবুলিওয়ালা’ প্রযোজনা করছে ‘এসভিএফ’। সিনেমাটি মুক্তি পাবে এবারের বড়দিনে।
বাঙালির একটি চেনা গল্প (কাবুলিওয়ালা) নিয়ে কাজ করতে রাজি হলেন কেন প্রশ্নে মিঠুন বলেন, " যাদের বয়স ত্রিশের বেশি, তাদের মধ্যে কমবেশি অনেকেই কাবুলিওয়ালা পড়েছেন। কিন্তু ২০ থেকে ২৫ মধ্যে যাদের বয়স, তারা কে কতজন রবীন্দ্রনাথের এই গল্পটির সঙ্গে পরিচিতি আমার সন্দেহ আছে। আমি এই কাজটির মাধ্যমে অল্পবয়সীদের রবি ঠাকুরের এই সৃষ্টির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই।"
সবাইকে সিনেমাটি দেখার অনুরোধ জানিয়ে মিঠুন বলেন, "ভালোবাসা সত্যি হলে দুটো ধর্মের যে সব বাধা ভেঙে যেতে পারে, ‘কাবুলিওয়ালা’ তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। আজকের দিনে সবচেয়ে বড় সত্য হবে ‘কাবুলিওয়ালা’। তাই আমার জন্য সিনেমাটি দেখার দরকার নেই। কিন্তু নিজে সচেতন হওয়ার জন্য ছবিটা দেখা খুব প্রয়োজন। কারণ, এই ছবিটা এই সময়ে খুব প্রাসঙ্গিক।"
এই সময়ে এসে রবীন্দ্রনাথের সিনেমা তৈরির জন্য প্রশংসা করেছেন নির্মাতা সুমন ঘোষের।
“আমি অনুরোধ করব সবাইকে সিনেমাটি একবার দেখতে। কারণ, এটা এমন একটা গল্প, যেখানে ধর্ম নির্বিশেষে আবেগ রয়েছে। সুমনকে (পরিচালক) আমার কুর্নিশ যে, এই সময় দাঁড়িয়ে ও এই গল্পটা ভেবেছে। আমি মনে করি, সত্যিকারের অনুভূতির কাছে কোনও জাতি-ধর্ম বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।"
মিঠুনের কাছে আনন্দবাজার জানতে চেয়েছে, রীবন্দ্রনাথের গল্প অল্পবয়সীদের কতখানি ছুঁতে পারবে।
মিঠুন বলেন, "আমার তো মনে হয়, রবীন্দ্রনাথ চিরকাল প্রত্যেকের কাছে প্রাসঙ্গিক। কারণ, রবীন্দ্রনাথ ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদ করতে শেখান না। আমিও সে মতাদর্শেই বিশ্বাস করি। তবে কে কতটা মনোযোগ দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে গ্রহণ করবেন, তা তর্কসাপেক্ষ। বাবা-মায়েদের আগামী প্রজন্মকে শেখানো উচিত। আমি যেমন আমার ছেলেমেয়েদের শেখাই।"
মিঠুন পর্দায় ‘কাবুলিওয়ালা’ হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন কীভাবে জানতে চাইলে বলেন, তার এক পাঠান বন্ধুর কথা বলার ধরন এবং আচার-আচরণের কথা মাথায় রেখে নিজেকে তৈরি করেছেন।
"আফগানিস্তানের এক পাঠান আমার বন্ধু ছিল, নাম জামাল। ১৯৮৩-৮৪ সালে আমি যেখানেই শুটিং করতাম, ও ঠিক ওর ছোট্ট একটা ডাব্বা নিয়ে আমার জন্য কিছু না কিছু রান্না করে নিয়ে যেত। পরে সে দেশে ফিরে যায়। যদি ও আজ বেঁচে থাকে, তা হলে এই সিনেমটা আমি ওকে উৎসর্গ করতে চাই। আমি শুধু পরিচালককে ওর কথা বলার ধরনটা দেখিয়েছিলাম। সুমন বলল, ‘আমার এটাই চাই। আমার কাবুলিওয়ালা এ রকমই হবে’।"
কি ধরনের চিত্রনাট্য মিঠুন এখন পছন্দ করেন জানতে চাইলে বলেন, “গল্পে হাস্যরস না থাকলে এখন আর অভিনয় করতে ভালো লাগে না। একঘেঁয়েমি চলে এসেছে। তবে শেষ যে ক’টা ছবি করেছি সব আলাদা স্বাদের। ‘কাশ্মীর ফাইল্স’, ‘দ্য তাসকেন্ট ফাইল্স’, ‘রিওয়াজ়’, ‘বেহিসাব’, ‘প্রজাপতি’ সবই আলাদা।"
কলকাতায় মিঠুনের সবশেষ সিনেমা 'প্রজাপতি' দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছে। ‘প্রজাপতি’তে গৌর চক্রবর্তী নামে এক সত্তর বছর বয়সী বৃদ্ধ বাবার ভূমিকায় অভিনয় করে ‘বাংলা ফিল্ম ফেয়ারে’ সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন মিঠুন। গত বছরের ডিসেম্বরে কলকাতায় মুক্তি পায় সিনেমাটি।