সিদ্ধান্ত বদলের বিষয়ে কোনো সমালোচনাও চান না কবীর সুমন। তার ভাষ্য, “আমার এই ঘোষণা বিষয়ে কারুর কোনও মত বা মন্তব্য চাই না।”
Published : 05 Mar 2025, 08:31 PM
জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী কবীর সুমন তার মরণোত্তর দেহদানের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন।
বাংলাদেশ ও ভারতে সমান জনপ্রিয় এই গায়কের নতুন ইচ্ছা- মৃত্যুর পর যেন তার দেহ দাফন হয় ‘ইসলামি রীতিতে’।
চার বছর আগে ২০২০ সালের অক্টোবরে কবীর সুমন লিখিত ইচ্ছেপত্রে বলেছিলেন, “আমার মৃতদেহ যেন দান করা হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাজে।”
পাশাপাশি তখন স্বাক্ষর করেন একটি অঙ্গিকারপত্রও।
বুধবার ফেইসবুকে নতুন সিদ্ধান্ত জানান তিনি।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, “রমজান মোবারক। সবাইকে জানাতে চাই- কিছুকাল আগে এই ফেইসবুকেই ঘোষণা করেছিলাম, আমি আমার দেহ দান করেছি, কোনো ধর্মীয় শেষকৃত্য আমি চাই না। অনেক ভেবে আমি সেই সিদ্ধান্ত পাল্টালাম। দেহদানের ইচ্ছা প্রত্যাহার করছি আমি। আমার দেহ আমি দান করব না।
“আমি চাই, আমায় এই কলকাতারই মাটিতে, সম্ভব হলে গোবরায়, ইসলামি রীতিতে কবর দেওয়া হোক। এটাই আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমার কতিপয় স্বজনকে এটা জানিয়ে দিলাম।”
সিদ্ধান্ত বদলের বিষয়ে কোনো সমালোচনাও চান না কবীর সুমন।
তার ভাষ্য, “আমার এই ঘোষণা বিষয়ে কারুর কোনও মত বা মন্তব্য চাই না।”
নব্বই দশকের দিকে কবিতার ঢংয়ে সুরের মাধ্যমে গান পরিবেশন করে জনপ্রিয়তা পাওয়া সুমন চট্টোপাধ্যায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ২০০০ সালে করে হন কবীর সুমন।
১৯৯২ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের মাধ্যমে বাংলা গানে নতুন ধারা তৈরি করেন। সংগীতের সঙ্গে যুক্ত থাকা ছাড়াও অভিনয়েও রয়েছে তার দক্ষ পদচারণা।
ভারতে বিশেষ করে কলকাতার পাশাপাশি বাংলাদেশেও সমান জনপ্রিয় তিনি। সুযোগ পেলেই ছুটে আসেন বাংলাদেশে।
১৩ বছর পর ২০২৩ সালেও ঢাকায় এসে তিনদিন গান শুনিয়ে গেছেন সুমন। উপলক্ষ ছিল তার প্রথম অ্যালবাম ‘তোমাকে চাই’ এর তিন দশক পূর্তি।
‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের জন্য ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশেও তুমুল আলোচিত হন কবীর সুমন। সেই থেকে অব্যাহত তার সংগীতের চলার পথ। তখন তিনি পরিচিত ছিল সুমন চট্টোপাধ্যায় নামে। পরে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে কবীর সুমন নাম ধারণ করেন এই শিল্পী।
‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের তিন দশক পূর্তিতে তাকে নিয়ে ‘তোমাকে চাই-এর ৩০ বছর উদ্যাপন’ শীর্ষক গানের আয়োজন করা হয় ঢাকায়।
এর আগে ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর তৈরিতে তহবিল সংগ্রহের জন্য আয়োজিত কনসার্টে প্রথম ঢাকায় আসেন সুমন। এরপর বিভিন্ন সময়ে ঢাকায় এসে অনুষ্ঠান করে গেছেন এই শিল্পী।
বাংলা আধুনিক গানকে নতুন এক দিশা দেখানো ৭৫ বছর বয়সী কবীর সুমন এখন আর নতুন গানের অ্যালবাম বের না করলেও শাস্ত্রীয় সংগীত ও খেয়াল সংগীত নিয়ে মেতে থাকেন। সোশাল মিডিয়ায় খেয়াল সংগীত করে থাকেন প্রায়ই।
‘তোমাকে চাই’ ছাড়াও, ‘বসে আঁকো’, ‘ইচ্ছে হল’, ‘গানওয়ালা’, ‘ঘুমাও বাউন্ডুলে, ‘চাইছি তোমার বন্ধুতা’, ‘জাতিস্মর’, ‘পাগলা সানাই’, ‘যাব অচেনায়’, ‘নাগরিক কবিয়াল’, ‘আদাব’সহ আরও কিছু অ্যালবাম সুমন প্রকাশ করেছেন গত তিন দশক ধরে।
ছেলেবেলায় বাবার হাতে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেওয়া সুমন একসময়ে রবীন্দ্রসংগীত ও আধুনিক বাংলা গান গাইতেন রেডিওতে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পড়ালেখা করা এই শিল্পী জীবনের শুরুর দিকে কাজ করেন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে এবং পরে ভয়েস অব আমেরিকা এবং ডয়েচে ভ্যালেতে।
মার্কিন লোকসংগীতশিল্পী ও নাগরিক অধিকার কর্মী পিট সিগারের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পরে সাংবাদিকতা ছেড়ে একসময় হাতে গিটার ধরেন সুমন।
গানের অ্যালবাম ছাড়াও সুমন বেশি পরিচিত হন তার ওপেন কনসার্টগুলোয়। গিটার, পিয়ানো, মাউথঅর্গান বাজিয়ে গান গাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে দর্শকদের সঙ্গে কথোপকথনে সুমনের জুড়ি পাওয়া দুষ্কর।
সুমন সিনেমাতেও গান করেছেন, করেছেন চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনাও। কলকাতার নির্মাতা সৃজিত মুখার্জির পরিচালনায় ‘জাতিস্মর’ সিনেমায় সংগীত পরিচালনার জন্য সুমন পান জাতীয় পুরস্কার।
একসময় স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছিলেন তিনি। নন্দীগ্রাম আর সিঙ্গুর আন্দোলনে দাঁড়িয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পাশে। তারপর যাদবপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে সংসদ সদস্য হন। কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় পরে তৃণমূল ছাড়েন সুমন।
পুরোনো খবর