কবীর সুমনের ইচ্ছেপত্র

ফেইসবুকে নিজের হাতের লেখা পত্রের ছবি পোস্ট করে জানিয়ে দিলেন মৃত্যুর পর তার ইচ্ছের কথা।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2020, 10:56 AM
Updated : 24 Oct 2020, 11:41 AM

‘ইচ্ছে হল এক ধরনের গঙ্গাফড়িং, অনিচ্ছেতেও লাফায় খালি তিড়িং বিড়িং’- কবীর সুমনের এই গানের মতোই যেন তার মৃত্যুর পরের ইচ্ছেগুলো লিখে গেলেন পত্রে।

আর সেই পত্রের ছবি তুলে নিজের ফেইসবুকের পাতায় ছাপিয়ে দিলেন।

শুক্রবার পোস্ট করা ফেইসবুকের সেই পোস্টে তিনি লেখেন, “খুব জরুরি বিষয়। আবেগহীনভাবে সকলকে জানিয়ে রাখছি, কারণ হঠাৎ কিছু ঘটে গেলে কঠিন সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় অনুরূপ একটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল ২০১২ সালে আমি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হবার পর। খোলাখুলি সকলকে জানিয়ে রাখছি।  অনুগ্রহ করে মতামত দেবেন না। ভাল মন্দ কিছু লিখবেন না। এটা এক প্রবীন মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি।”

“অনেক অভিজ্ঞতার পর, অনেক ভেবেচিন্তে লিখছি। ফেসবুকে, যাতে অনেকেই এটা জেনে যান। অনুগ্রহ করে আবেগের বশবর্তী হবেন না, উপদেশ পরামর্শ দেবেন না। আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি, যাবো। আমার জীবনে কোনও হতাশা, দু:খ, ব্যর্থতাবোধ, অবসাদ নেই।”

এভাবেই পত্রের ছবির ওপর নিজের ভাব প্রকাশ করে তিনি আরও লেখেন, “আমার স্বহস্তে লেখা ইচ্ছাপত্রর ছবি তুলে ছাপিয়ে দিলাম –”

ইচ্ছেপত্রে কবীর সুমন মৃত্যুর পর তার সমস্ত শিল্পকর্ম ধ্বংস করার জন্য লিখেছেন।

তার লেখনিটা হল, “আমার মৃতদেহ যেন দান করা হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাজে। কোনো স্মরণসভা, শোকসভা, প্রার্থণাসভা যেন না হয়। আমার সমস্ত পাণ্ডুলিপি, গান, রচনা, স্বরলিপি, রেকর্ডিং, হার্ড ডিস্ক, পেনড্রাইভ, লেখার খাতা, প্রিন্ট আউট যেন কলকাতা পুরসভার গাড়ি ডেকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সেগুলি ধ্বংস করার জন্য। আমার কোনো কিছু যেন আমার মৃত্যুর পর পড়ে না থাকে। আমার ব্যবহার করা সব যন্ত্র, বাজনা, সরঞ্জাম যেন ধ্বংস করা হয়। এর অন্যথা হবে আমার অপমান।”

 

নব্বই দশকের দিকে কবিতার ঢংয়ে সুরের মাধ্যমে গান পরিবেশন করে জনপ্রিয়তা পাওয়া সুমন চট্টোপাধ্যায়, ২০০০ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হন কবীর সুমন।

১৯৯২ সালে ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের মাধ্যমে বাংলা গানে নতুন ধারা তৈরি করেন। সংগীতের সঙ্গে যুক্ত থাকা ছাড়াও অভিনয়েও রয়েছে তার দক্ষ পদচারণা।

কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা আরও জানায়, “কালক্রমে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। জড়িয়ে পড়েন সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সঙ্গে। পরে তৃণমূলের টিকিটে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদও হন। তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে একটা সময় টানাপড়েন চললেও আপাতত তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থক এবং বিজেপি-র কড়া বিরোধী।”

শিল্পকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকা এই শিল্পী কেনো তার মৃত্যুর পর সমস্ত শিল্পকর্ম ধ্বংস করার কথা বললেন সেই উত্তর মেলেনি।

তবে তিনি ইচ্ছেপত্রে আরও লেখেন, “সজ্ঞানে, সচেতন অবস্থায়, স্বাধীন ভাবনাচিন্তা ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আমি জানাচ্ছি, আমার কোনো অসুখ করলে, আমায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে, অথবা আমি মারা গেলে, আমার সম্পর্কিত সব কিছুর, প্রতিটি বিষয় ও ক্ষেত্রে দায়িত্বগ্রহণ এবং সিদ্ধান্তগ্রহণের অধিকার থাকবে একমাত্র মৃন্ময়ী তোকদারের (মায়ের নাম প্রয়াত প্রতিমা তোকদার, বাবার নাম দেবব্রত তোকদার)। অন্য কারওর কোনো অধিকার থাকবে না এই সব বিষয় ও ক্ষেত্রে।”

ফেইসবুকের পোস্টের লেখার নিচে, এই নগরকবি নিজেকে ‘জন্মস্বাধীন, স্বপরিশ্রমে ও স্বখরচায় স্বেচ্ছাচারী’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।