সাংবাদিকদের সংগঠন ‘এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ’ (এটিজেএফবি) এই দৌড় উৎসবের আয়োজন করে।
Published : 25 Apr 2025, 04:57 PM
‘বিউটিফুল বাংলাদেশ রান-২০২৫' ম্যারাথন প্রতিযোগীদের ছোটাছুটি আর হাঁকডাকে ছুটির দিনের ভোরবেলা রাজধানীর হাতিরঝিল ভাসছিল উৎসবের আমেজে।
দেশের পর্যটন খাতের প্রচার ও প্রসারের জন্য আয়োজিত এই দৌড় উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, খাত সংশ্লিষ্ট উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধিসহ সাত শতাধিক দৌড়বিদ।
মায়েদের হাত ধরে এসেছিল ছোট শিশুরাও। কেউ ঘাম ধরিয়ে দৌড় শেষ করেছেন, আর কেউ ব্যস্ত ছিলেন ছবি তোলা নিয়ে। একই রকম জার্সি পড়ার কারণে বোঝার উপায় ছিল না কে সরকারি কর্মকর্তা আর কে বিদেশি রাষ্ট্রদূত।
সাংবাদিকদের সংগঠন ‘এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ’ (এটিজেএফবি) এই দৌড় উৎসবের আয়োজন করে।
শুক্রবার সকাল ৬টায় হাতিরঝিলের পুলিশ প্লাজা প্রান্তে এই দৌড় উৎসব শুরু হয়। দৌড় শেষে হাতিরঝিলের এম্ফিথিয়েটারে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয় এই উৎসব।
এ আয়োজনে বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভাণ্ডারি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলি আব্দুল্লাহ আল হমৌদি, ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত নিনা পি কাইংলেট, ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফেরনান্দো ডায়াস ফেরেস, থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত পানওয়ামসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদরা উপস্থিত ছিলেন।
পাশাপাশি বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের, ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মাইনুল হাসানসহ দেশ বিদেশের এভিয়েশন ও পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট কর্মী, ভ্রমণকারী ও পেশাদার দৌড়বিদসহ সাত শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
এবার প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাড়ে ৭ কিলোমিটার এবং মা ও শিশুদের জন্য ২ কিলোমিটার 'ফান রানের’ আয়োজন ছিল।
সাড়ে ৭ কিলোমিটার (পুরুষ) ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন এলাহী সরদার, দ্বিতীয় আশরাফুল আলম এবং তৃতীয় হয়েছেন সাজ্জাদ হোসেন।
সাড়ে ৭ কিলোমিটার (নারী) ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন সাদিয়া শাওলিন সিগমা, দ্বিতীয় স্বর্ণা এবং তৃতীয় হয়েছেন ফারজানা। ২ কিলোমিটার ফান রানের প্রথম হয়েছেন জিসান, দ্বিতীয় অভি ইসলাম এবং তৃতীয় হয়েছেন জহুরুল।
দৌড়ে অংশ নেন রাষ্ট্রদূতরাও। নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভাণ্ডারী পুরো সাড়ে সাত কিলোমিটার দৌড় সম্পন্ন করেন।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশে এরকম কোন আয়োজনে এটাই প্রথম। সকলের সঙ্গে দৌড়ে খুব মজা পেয়েছি, নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে এরকম আয়োজনের অংশীদার হতে চাই।"
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলি আব্দুল্লাহ আল হমৌদিকে দেখা গেল সঙ্গী সাথীদের নিয়ে দৌড়াচ্ছেন। লোকজন তাকে থামিয়ে ছবি তোলার বায়নাও করছে। ঘেমেনেয়ে একাকার হয়েও থামছিলেন না তিনি।
এই রাষ্ট্রদূত বলেন, "খুবই চমৎকার আয়োজন। সুন্দর বাংলাদেশকে তুলে ধরতে এরকম আয়োজন আরো হওয়া উচিত, আমরা মুখিয়ে থাকবো এরকম আয়োজনের অংশীজন হতে।"
ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত মিজ নিনা পি কাইংলেটের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য ভিড় করেছিলেন নারী ও শিশুরা।
দৌড় শেষ করে জার্সি পরে এদিকওদিক ঘুরে ঘুরে লোকজনের সঙ্গে কথাও বলতে দেখা যায় তাকে।
এই রাষ্ট্রদূত বলেন, "আমি মাত্র ডিসেম্বরে বাংলাদেশে এসেছি। এরকম খোলা আবহাওয়ায় কোন অনুষ্ঠানে এই প্রথম। এখানকার পরিবেশটা খুবই উৎসবমুখর। মানুষ খুবই আন্তরিক। অনেক শিশুরা এসছে, তাদের রঙিন উপস্থিতি পরিবেশটাকে আরো উৎসবমুখর করেছে।"
দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন ট্যুরিজম বোর্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের।
দৌড় শেষ করে তিনি বলেন, "আয়োজনটি অত্যন্ত উপভোগ্য ছিল। পর্যটনের প্রসারে এটি উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখবে বলে আশা করছি।"
হাতিরঝিল এম্ফিথিয়েটারের সামনের ফাঁকা জায়গায় বসানো হয়েছিল ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন, এয়ার ইন্ডিয়া, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশ ও এয়ারলাইন্সের প্রচারণামূলক স্টল। আয়োজনের মূল স্পন্সর হৃদম গ্রুপের কর্মীরা সুগন্ধীর একটি স্টল নিয়ে বসেছিলেন। যেখানে দৌড় শেষে ঘর্মাক্ত দৌড়বিদরা পরিচ্ছন্ন হয়ে শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার করতে পেরেছেন বিনামূল্যে।
আয়োজক সংগঠন এটিজেএফবির সভাপতি তানজিম আনোয়ার বলেন, “এটি এটিজেএফবির প্রথম ম্যারথন ইভেন্ট। প্রতিটি রানারের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আমরা অভিভূত। বাংলাদেশের পর্যটনকে বিশ্ব দরবারে পৌছে দিতে এটিজেএফবি আগামীতে উইন্টার ম্যারাথনের ঘোষণা দিচ্ছি। আশা করছি উইন্টার রানে আপনাদের সবাইকে পাশে পাবো।”
এসময় বিউটিফুল বাংলাদেশ রান-২০২৫ এর চিফ কো-অর্ডিনেটর শফিউল্লাহ সুমন বক্তব্য রাখেন।
রান আয়োজন শেষে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি র্যাফেল ড্রয়েরর মাধ্যমে ৫ জনতকে ঢাকা থেকে মিলান, জোহান্সবার্গ, ব্যাংক, মালদ্বীপ এবং কক্সবাজারের রিটার্ন টিকেট দেওয়া হয়।