এবার ২২০টি সিনেমা দেখানো হবে, যার মধ্যে বাংলাদেশের ৪৪টি। উদ্বোধনী চলচ্চিত্র ছিল চীনের নির্মাতা চিউ ঝ্যাংয়ের ‘মুন ম্যান’।
Published : 11 Jan 2025, 08:55 PM
‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ স্লোগান নিয়ে ঢাকায় শুরু হল ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, যা চলবে আগামী ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।
শনিবার শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে উৎসব উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের উদ্যোগে হচ্ছে এই উৎসব, যেখানে ৭৫টি দেশের ২২০টি সিনেমা দেখানো হবে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র থাকছে ৪৪টি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে মঞ্চে আসে ‘জলের গান’। তারা একে একে গেয়ে শোনায় 'সূয়া যাও যাওরে, যাওরে তেপান্তর', 'চান্দের আলো লাগে ভালো', 'এমন যদি হতো আমি পাখির মতো' এবং 'বকুল ফুল' গানগুলো।
এরপর জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় আলোচনা পর্ব।
উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, "এটি শুধু একটি উৎসব নয়, এর মধ্যদিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ তৈরি হবে।"
অনুষ্ঠানের ফাঁকে বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চীনা চলচ্চিত্রের পোস্টার প্রদর্শনী কর্নার উদ্বোধন করা হয়।
১৯৯২ সাল থেকে 'ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব' করছে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ। চলচ্চিত্র বিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা 'সেলুলয়েড' প্রকাশনার পাশাপাশি নিয়মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, সেমিনার ও শুদ্ধসংগীত আসর আয়োজনও করে তারা।
নাহিদ ইসলাম বলেন, "ঢাকায় এরকম একটি আন্তর্জাতিক উৎসব আয়োজন গর্বের ব্যাপার। আমাদের চলচ্চিত্র আরও কীভাবে বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারি, সে ব্যাপারে সরকারের জায়গা থেকে সহযোগিতা করব। আমাদের ইতিহাস, আন্দোলন-সংগ্রামের গল্প সিনেমায় তুলে ধরবেন বলে প্রত্যাশা করি।"
ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, "সিনেমা সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে সিনেমার ভাষা সর্বজনীন, যার মধ্যদিয়ে বৈশ্বিক যোগাযোগ গড়ে ওঠে।"
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপনের বিভিন্ন আয়োজন চীনেও হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
চীনা চলচ্চিত্র প্রশাসনের আন্তর্জাতিক বিভাগের পরিচালক শু ইয়াং বলেন, "উৎসব কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই এবার কান্ট্রি ফোকাস হিসেবে চীনকে রাখার জন্য। এই উৎসবের সাফল্য কামনা করি এবং চীনের সিনেমা দেখার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাই।"
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও উৎসব কমিটির নির্বাহী সদস্য জালাল আহমেদ। তিনি বলেন, "অর্থ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিত অর্থ বরাদ্দের জন্য যদি এই উৎসবকে তালিকাভুক্ত করা হয়, তাহলে উৎসব নিয়ে প্রতিবছর যে দুশ্চিন্তা, সেটি আর থাকে না।"
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন এবং উৎসবের চেয়ারপারসন কিশওয়ার কামাল উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা পর্বের পর উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে দেখানো হয় চীনের নির্মাতা চিউ ঝ্যাং পরিচালিত ‘মুন ম্যান’।
আয়োজকরা জানান, উৎসবে এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানারোমা, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিল্ড্রেনস ফিল্ম, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেন্স সেকশনে দেখানো হচ্ছে সিনেমা।
২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে থাকছে কয়েকটি বিশেষ প্রদর্শনী। যার মধ্যে ১২, ১৫, ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি সাতটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেখানো হবে।
উৎসবের অংশ হিসেবে ৯ থেকে ১৭ জানুয়ারি অলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ল্যা গ্যালারি মিলনায়তনে থাকছে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। তাতে নবীন ও প্রবীণ শিল্পীদের কাজ স্থান পেয়েছে।
উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল বলেন, "আশা করছি চলচ্চিত্র দেখানোর পাশাপাশি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের অংশগ্রহণে এবারের উৎসব আরো বেশি প্রাণবন্ত ও সাফল্যমণ্ডিত হবে।"
এবারের উৎসবে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা, অলিয়ঁস ফ্রঁয়েজ মিলনায়তন, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি মিলনায়তন ও গ্রিন ইউনিভার্সিটি মিলনায়তনে সিনেমা দেখানো হচ্ছে।
এসব মিলনায়তনের সব প্রদর্শনী সবাই বিনামূল্যে উপভোগ করতে পারবেন। আসন সংখ্যা সীমিত থাকায় 'আগে এলে আগে পাবেন' ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা হবে।
আগের খবর-