আপনি নির্বাচনে এলেন কেন?
রুবেল: মিশা ও জায়েদ আমার বাসায় এসে যখন নির্বাচনের কথা বলেছিল তখন ওদের একটা শর্ত দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমাদের সিনেমার অবস্থা খুবই খারাপ। এখান থেকে পরিত্রাণের জন্য সিনেপ্লেক্স তৈরি করতে হবে।
এজন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো। যে কোনোভাবে আমাদের চার’শটি ডিজিটাল সিনেমা হল করে দিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, তখন সিনেমা হল হলে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া প্রডিউসাররাও সিনেমায় লগ্নি করতে চলে আসবেন।
প্রতি হলে ২০ হাজার করে হলেও ৮০ লাখ টাকার গ্যারান্টি পাবেন প্রযোজকরা। এক কোটি টাকায় ছবি বানালে ৮০ লাখ টাকার গ্যারান্টি পেলে প্রযোজকরা আরও উৎসাহিত হবেন। কিন্তু এখনকার ছবিতে মাত্র ১০ লাখ টাকার গ্যারান্টি পাওয়া যায়।
প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণের সক্ষমতা তো শিল্পী সমিতির থাকার কথা না; সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহ মালিক সমিতি এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে।
রুবেল: হ্যাঁ। শিল্পী সমিতি কিংবা প্রযোজক সমিতি হল করতে পারবে না। এটা করলে হলমালিকরা করবেন। সরকারের তরফ থেকে যদি বলে দেওয়া হয়, বহুতল বিল্ডিংয়ে সিনেপ্লেক্স রাখা বাধ্যতামূলক; অন্যথায় পারমিশন দেওয়া হবে না। তাহলে সিনেপ্লেক্সের সংখ্যা বাড়বেই।
আমি মনে করি, সরকার চাইলেই এটা সম্ভব। যদিও ইতোমধ্যে ৬০টি সিনেপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে যদি চার’শটি সিনেমাহল নির্মাণ করা যায় তাহরে আমি নিশ্চিত, চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা পরিবর্তন হবে।
আগামী দুই বছরে আপনারা কীভাবে চলচ্চিত্রের অবস্থার পরিবর্তন আনবেন?
রুবেল: প্রযোজক সমিতি ও শিল্পী সমিতির শিল্পীরা যদি রাস্তায় নামে তাহলে কিন্তু অনেক কিছু করা সম্ভব। ফিল্মকে বাঁচানোর জন্য আমরা রাস্তায় নামবো। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই এফডিসিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভালোবাসেন। অনেক কথা হয়তো উনার কানে পৌঁছায় না। উনার কানে যে আমাদের কথা যায় তার জন্য প্রয়োজনে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে, আমাদের অবস্থা খারাপ। আমাদের দিকে নজর দিতে হবে।
কিন্তু আপনি যে প্যানেল (মিশা-জায়েদ) থেকে নির্বাচন করছেন সেই প্যানেলই তো গত দুই বছর নেতৃত্বে ছিল। আপনি তাহলে মিশা-জায়েদ পরিষদকে ব্যর্থ বলছেন?
রুবেল: এটা আসলে চিন্তাধারার ব্যাপার। ওদের চিন্তাধারা শিল্পীদের নিয়ে ছিল। তারা অন্য বিষয়ে অনেক সক্রিয় ছিল। কিন্তু এই সাইডে (চলচ্চিত্রের উন্নয়ন) ওরা সেইভাবে চিন্তা করতে পারেনি। কিন্তু আমি শুনেছি, ওরা চেষ্টা করেছিল।
আমেরিকার নির্বাচনে প্রেসিডেন্টকে দুই টার্মে জনগণ রেখে দেয়। কারণ এক টার্মে কাজ করা সম্ভব না। ওরা গতবার যা করেছে; আর এই টার্মে যদি জিততে পারলে আমার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, ওদের (মিশা-জায়েদ পরিষদ) ভালো কাজের সঙ্গে এই ভালো কাজটা যোগ করা।
নির্বাচনকে ঘিরে এফডিসিতে দুই পক্ষের প্রার্থীদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে; জ্যেষ্ঠ শিল্পী হিসেবে নিজেদের মধ্যে বিষয়গুলো সুরাহা করতে পারতেন না?
রুবেল: আমি বেশ কয়েকদিন বাইরে ছিলাম। বিষয়গুলো আমি জানি না। কী হয়েছে, বলেন তো।
আপনার প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মৌসুমীর অভিযোগ, আপনাদের প্যানেলের সদস্যরা তাদের প্যানেলের সদস্যদের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন; আপনাদের তরফ থেকে বাধা পেয়ে তিনি এবার কোনো প্যানেল দিতে না পেরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
রুবেল: বিষয়টি নিয়ে বড়ভাইয়ের (সোহেল রানা) সঙ্গে কথা বললে ভালো হবে। ডি এ তায়েব (মৌসুমীর প্যানেলে নির্বাচনের কথা ছিল) সাহেবের যেদিন দাঁড়ানোর কথা সেদিন ভাইয়া এক ইন্টারভিউয়ে বলেছিলেন, ওনার (তায়েব) নির্বাচনের রাস্তা নেই।
নিয়ম নাকি আছে, সরকারি কোনো কর্মকর্তা এইসব জায়গায় নির্বাচন করতে পারবে না। সেখানে ভয়ভীতি দেখানোর প্রশ্ন আসে না। কারণ ব্যাপারটি নিয়মের সঙ্গে জড়িত। তারা ভয়ভীতির কথা বলে শুধু আমাদের কলঙ্কিত করছে।
মৌসুমীর প্রতি সম্মান রেখে বলছি, ডি এ তায়েব সাহেব দাঁড়াতে পারেনি কিন্তু পুরো প্যানেলে ২১ জনের মধ্যে একজনকেও পেলেন না কেন? স্বতন্ত্র প্রার্থী চারজনের মধ্যে উনার প্যানেলে উনি আর নানা শাহ এসেছেন। বাকি দুইজন স্বতন্ত্র।
মৌসুমীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, মৌসুমী ম্যাডামকে যারা নির্বাচনে নামিয়ে দিয়েছে (জানি না কারা কারা) সেই লোকগুলো তার পেছন থেকে সরে গিয়ে তাকে এই অবস্থায় ফেলে দিয়েছেন। এটা কোনোভাবেই আমার কাম্য ছিল না।
আমি মনে করি, মৌসুমী একজন শ্রদ্ধেয় নারী। শি ইজ অ্যা স্টার। মৌসুমী ফিল্মের জন্য কোনো কিছু্ই করেনি-এটা যদি কেউ বলে তাকে মিথ্যাবাদি বলব। তার সত্য বলার সৎ সাহস নেই। আমার প্রশ্ন হলো, তাকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে তারা পেছন থেকে কেন সরে গেলেন?
আপনাদের প্যানেলের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ, নির্বাচনের আগে শতাধিক ভোটারদের ভোটাধিকার খর্ব করেছেন; কথিত আছে, তারা আপনাদের বিরাগভাজন।
এখানে মাছ বিক্রেতারা শিল্পী হয় কী করে? আমরা যদি ইলেকশনে জিতে আসতে পারি আমরা আবার তাদের শিল্পী সমিতির সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কোনো শিল্পী যদি দীর্ঘদিন এর পেছনে লেগে থাকে আমি মনে করি, তার সদস্যপদ ফিরে পাবার অধিকার আছে।
নির্বাচনের বাইরে প্রশ্ন, সবশেষ কবে আপনার ছবি মুক্তি পেয়েছিল?
রুবেল: সেটা খেয়াল নেই। বলতে পারব না। গত বছর না…মনে হয়। গত বছরের শুরুর দিকে…নাকি তার আগের বছর মনে হয়।
আপনার হাতে এখন কয়টি চলচ্চিত্র আছে?
রুবেল: নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে ‘ধ্বংসমানব’ নামে আমার একটি ছবি রিলিজ হওয়ার কথা। তারপরে রিলিজ হবে ‘বিধ্বস্ত’; ছবিটার মান মনে হয় পরিবর্তন হয়েছে, ‘গার্মেন্ট শ্রমিক জিন্দাবাদ’। আরও দুইটি আছে ‘অপরাধ জগত’ ও ‘বীর বাঙালি’। এই তিনটি ছবি আগামী বছর রিলিজ হবে।
অভিনয়ের বাইরে আপনি কী করছেন?
রুবেল: একটা ফার্মের সঙ্গে জড়িত আছি। অফিস করি। বাসায় থাকি। ধর্মীয় চর্চা করি। মার্শাল আর্ট প্র্যাকটিস করি আর ক্লাব-এই সব নিয়েই আছি। আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি।