যারা দেশের বিজ্ঞাপন ভারতীয় চ্যানেলে নিয়ে যাওয়ার পেছনে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে তাদের ‘সাংস্কৃতিক রাজাকার’বলে অভিহিত করলেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অধিকর্তা মাহফুজুর রহমান। বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন বন্ধে সোচ্চার টেলিভিশনসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
Published : 05 Nov 2016, 06:26 PM
শনিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ ‘মিডিয়া ইউনিটি’ নামে নতুন এক সংগঠনের ব্যানারে এক হওয়ার ঘোষণা দেয়।
অনুষ্ঠানে মাহফুজুর রহমান বলেন, “আমি আজকে এখানে সবার পক্ষ থেকে বলতে চাই, যারা দেশের বিজ্ঞাপন ভারতীয় চ্যানেলে নিয়ে যাওয়ার পেছনে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে, তারা সাংস্কৃতিক রাজাকার। তাদেরকে নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিলাম, নভেম্বরের পর থেকে তারা যেন কোনো বিজ্ঞাপন বিদেশি চ্যানেলে না দেয়।”
তিনি আরও বলেন, “যদি তারা এরপরও তা না মানেন তাহলে আমরা সম্মিলিতভাবে তাদের প্রতিহত করব। উনাদেরকে বাংলাদেশের ‘সাংস্কৃতিক রাজাকার’বলে পরিচিত করে তুলব। আমরা আজ এতোদূর যেতাম না যদি তাদের মাতৃভূমির প্রতি নূন্যতম শ্রদ্ধা থাকত।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন টেলিভিশন নাটক নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি গাজী রাকায়েত, অভিনয়শিল্পী সংঘের আহসান হাবিব নাসিম, গানবাংলা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৌশিক হোসেন তাপস, অভিনয়শিল্পী শহীদুজ্জামান সেলিম, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, নাট্যকার মাসুম রেজা, নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী ও বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের কর্তাব্যক্তিরা।
বক্তাদের ভাষ্য, বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের বাজেটের একটি অংশ ভারতীয় চ্যানেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। তাই তারা বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, রাজস্ব বোর্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন, যাতে আইনের ফাঁক গলে দেশি অর্থ বিদেশে পাচারের সুযোগ বন্ধ হয়। যদি তাতেও কাজ না হয় তাহলে বিচার বিভাগের আশ্রয় নিতে তারা বাধ্য হবেন বলেও দাবি করেন বক্তারা।
শুধু বিজ্ঞাপন বন্ধেই নয়, দেশি চ্যানেলে বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন ঠেকাতেও কাজ করবে ‘মিডিয়া ইউনিটি’। এ লক্ষ্যে একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবুকে সংগঠনের আহ্বায়ক ও দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসানকে সদস্য সচিব করে সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
মোজাম্মেল বাবু বলেন, “সাংবাদিক, ক্যামেরাপার্সন, অভিনয়শিল্পী, নাট্যকর্মী, অনুষ্ঠান নির্মাতা, নাট্যনির্মাতা, বিজ্ঞাপন নির্মাতা, প্রযোজক ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিনিয়োগকারী, ব্রডকাস্টার- সবাই মিলে আজ ‘মিডিয়া ইউনিটি’ নামে নতুন একটি সংগঠনের ঘোষণা দিচ্ছি। এ সংগঠন বাংলাদেশের টেলিভিশন মিডিয়ার সকলের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সাথে আলোচনা ও প্রয়োজনে আন্দোলনের ঘোষণা দেবে।”
তিনি আরও বলেন, “বিদেশি চ্যানেলে টাকা পাচারের ইস্যুটা একটা উপলক্ষ্য মাত্র। আমাদের ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকে বাংলাদেশের ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, বাঙালি সংস্কৃতির ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া হিসেবে গড়ে তুলতে এবং সংশ্লিষ্ট সকলের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিতকরতে এ সংগঠন কাজ করে যাবে।”
সম্প্রতি ভারতীয় বেশকিছু টেলিভিশন চ্যানেলে বাংলাদেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছে। মূলত এ ঘটনার পরপরই বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেন টেলিভিশন মালিক কর্তৃপক্ষরা।
ছবি: আনিসুর রহমান তারেক