সেইসব গান ফেইসবুক, ইউটিউবে বেশ সাড়া ফেলেছে। গান গেয়ে আটক হয়েছেন র্যাপার হান্নান।
Published : 10 Aug 2024, 07:37 PM
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সম্মুখ যোদ্ধাদের সাহস জোগাতে তৈরি হয়েছে অসংখ্য গান, এবারের কোটা সংস্কার ও সরকারপতনের আন্দোলনও ব্যতিক্রম নয়।
১ জুলাই শুরু হওয়া এই আন্দোলন ৩৬ দিনের মাথায় চূড়ান্ত পরিণতি পায়, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
এর মধ্যে তৈরি হয়েছে চল্লিশটির মত গান। আবার অন্য গানের সুরে নতুন কথা বসিয়ে প্রচার করা হয়েছে প্রতিবাদের বার্তা।
সেইসব গান ফেইসবুক, ইউটিউবে বেশ সাড়া ফেলেছে। গান গেয়ে আটক হয়েছেন র্যাপার হান্নান।
আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশে ছেড়েছেন, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি এই বিজয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত সেসব গানের শিল্পীরাও। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে গ্লিটজের।
তারা বলছেন, সহিংস পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতেই লিখেছিলেন গান; সেসব গানে কণ্ঠ দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এই বিজয় দেখে নিজেদেরকে ইতিহাসের অংশ মনে করতে পেরে তারা আনন্দিত।
ব্যান্ড শহরতলির ভোকাল জিল্লুর রহমান সোহাগ গেয়েছেন ‘ও প্রধান তোমাকে বলছি শোনো' গানটি। ফেইসবুকে প্রকাশিত হওয়ার পর গানটি ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন পেইজে। গানের কথাগুলো বেশ পছন্দ করেন শ্রোতারা।
সোহাগ বলেন, “এই বিজয়ের উল্লাস অন্যরকম। অনেকটা সময় পর এই দেশটা মুক্তি পেয়েছে, যা খুব আনন্দের। খবরটি শোনার পর থেকে আনন্দের পাশাপাশি মন খারাপও হচ্ছিল, বারবার মনে হচ্ছিল এতগুলো প্রাণের বিনিময়ে এই দেশটা মুক্ত হল।
“এই ৩৬ দিনে যে পরিমাণ সেক্রিফাইস এই শিক্ষার্থীরা করেছে, এতোগুলো মানুষের রক্ত, নতুন করে বাংলাদেশ পাওয়া। এটা সারা জীবন নিজেকে নাড়া দিয়ে যাবে।”
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতা দেখে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া থেকে গানটি তৈরি করার কথা জানিয়ে এই শিল্পী বলেন, “এতগুলো হত্যা… মুগ্ধ মারা যাওয়ার পর সেই ভিডিওটা দেখে নিজেকে স্থির রাখা যায়নি। তখনই প্রতিক্রিয়া জানাতে গানটি তৈরি করা। মনে হচ্ছিল আমি আমার জায়গা থেকে যদি কিছু একটা করতে পারি। গানটি যদি ৩০০ মানুষের কাছেও পৌঁছায়, নিজের মধ্যে একটু শান্তি অনুভব হবে। এখন এই ঐতিহাসিক বিজয়ে গানের মাধ্যমে নিজেকে যুক্ত রাখার যে ব্যাপারটা, এতে আনন্দ হচ্ছে।"
'জাদুর দেশে জাদু দেখায় রাজা/ আমরা সবাই অবাক হয়ে রই' গানটি গেয়েছেন মল্লিক ঐশ্বর্য। ২০২০ সালে গানটি প্রকাশ করলেও নতুন করে ভাইরাল হয় এই কোটা আন্দোলনের সময়। বিভিন্ন পেইজে ছড়িয়ে পড়ে গানটি।
কাজী নজরুল ইসলামের ‘এই শিকল-পরা ছল’ গানটি নতুন করে গেয়েছেন পাঁচজন সংগীতশিল্পী। 'শিরোনামহীন' ব্যান্ডের শেখ ইসতিয়াক, 'ক্রিপটিক ফেইট' এর সাকিব চৌধুরী, 'অ্যাভোয়েড রাফার' রায়েফ আল হাসান রাফা, 'সোনার বাংলা সার্কাস' র প্রবর রিপন ও 'পাওয়ার সার্জ ব্যান্ড' এর জামশেদ চৌধুরী মিলে নতুন করে গানটি গেয়েছেন। গানের মাঝে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন নিয়েও কথা বলেছেন তারা।
তরুণ শিল্পী পারশা মাহজাবীনের গাওয়া ‘চলো ভুলে যাই’ গানটিও আন্দোলিত করেছে কয়েক লাখ শ্রোতার হৃদয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে রাতের মধ্যেই দশ মিনিটে গানটি লিখে সুর বেঁধেছিলেন এই শিল্পী।
খালি গলায় তার গাওয়া গানটি প্রকাশ্যে আসার পর বেশ আলোচনা তৈরি হয়। তবে এই শিল্পীর মনে বিজয়ের আনন্দ স্থায়ী হতে পারেনি বদলে যাওয়া পরিস্থিতির কারণে।
তিনি বলেন, "বিজয়ের উল্লাস করেছি, বিকেল পর্যন্ত বেশ আনন্দে ছিলাম, মিছিলে গিয়েছিলাম। কিন্তু আসার পর থেকে চারপাশের এমন ভয়াবহ সব খবর শুনছি, দেখছি। এসব কারণে আসলে মনটা খারাপ হয়ে গেছে।
“ভাস্কর্য ভাঙচুর, আগুন। গণভবনের জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া। পশুপাখি নিয়ে যাওয়া। সেখানে বেশ কিছু বিদেশি পাখি ছিল যেটা বাইরের পরিবেশে বাঁচতে পারে না। এসব নিতে পারছি না। আমার খুব কাছের মানুষদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছে। তারা আতঙ্কে বাড়ি থেকে সরে যাচ্ছে। এই স্বাধীনতা তো সবার, তাদের আতঙ্কে রেখে এই বিজয় নিতে কষ্ট হচ্ছে।"
র্যাপার হান্নান হোসাইন শিমুল গেয়েছিলেন ‘আওয়াজ উডা’ শিরোনামের একটি গান। গানটি প্রচারের পরপরই তাকে সরকারের রোষানলে পড়তে হয়। গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে পাঠানো হয় শিল্পীকে।
ব্যান্ড কাকতাল গেয়েছে 'রক্ত গরম মাথা ঠান্ডা কর'। অনি হাসান প্রকাশ করেছেন ‘আমরা বীর’ শিরোনামের একটি গান।
সৈয়দ আবির আহমেদ একা গেয়েছেন 'আমার রক্তের দাম দে', গ্লোড ক্লাব ও স্কেরি ক্রো নামের দুই শিল্পী গেয়েছেন 'দেশ সংস্কার', র্যাপার সেজান গেয়েছেন 'কথা ক'
২৪ এর গেরিলা নামের কয়েক জন শিল্পী গেয়েছেন ‘চব্বিশের গেরিলা’ শিরোনামের গান।
ইমতিয়াজ আকিব গেয়েছেন 'অসুস্থ বাংলাদেশ' । তিনি বলেছেন, ‘এই বিজয়ে তিনিও বেশ উচ্ছ্বসিত। গানটি অনেক আগের লেখা, আগে ছাড়া হয়নি, কোটা আন্দোলনের জন্য গানটি কমপ্লিট করে আপলোড করেছেন। পুরো বাংলাদেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই গান।"
ক্র্যাক হেড ক্রিয়েশন থেকে গাওয়া হয়েছে 'পাল্টে দে ইতিহাস', ম্যাক-ই-ম্যাক ও জিকে কিবরিয়ার 'স্লোগান', কোল্ডক্রাফটের ‘বায়ান্ন’, রেইন খলিলের 'আর কত?' গানগুলোও আন্দোলনের মধ্যে তরুণ প্রজন্মকে প্রেরণা যুগিয়েছে।
আন্দোলনের মধ্যে ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান গেয়েছেন 'ভয় বাংলা' ও 'এইবার'। বিজয়ের পর তিনি প্রকাশ করেছেন 'হুঁশিয়ারী' গানটি। আন্দোলনের সময় তার গাওয়া 'আমিই বাংলাদেশ' গানটিও বেশ আলোচিত ছিল।
ব্যান্ড শিল্পী হাসি গেয়েছেন 'দেশটা কারো বাপের না', লুনাটিক্স বীর ও রিদমাস্ত্রের ‘দেশ কার’, রাজেশ পালের 'শিকল ভাঙার মন্ত্র' গানগুলোও আলোচিত হয়েছে।
ইমতিয়াজ আকিব 'ছাত্র', ড. ক্রিটেডের 'সুবিচার চাই' , সালমান শেখ এর 'রক্তাক্ত বাংলাদেশ', ব্ল্যাক জাবু 'দমায় দেখা' গানটি গেয়েছেন।
তাছাড়া আন্দোলনের সময় প্যারডি করে বিভিন্ন গান ছড়িয়ে পড়ছে ফেসবুক ও ইউটিউবে। ‘ও দেশবাসী', 'দেশটা তোমার বাপের নাকি করছ ছলা কলা' সেরকমই দুটো গান।