‘এই যে করে খাচ্ছি, সেটা মৃণাল সেনের জন্য’

গুরু মৃণাল সেনকে অঞ্জন দত্ত বলেছিলেন, একটা তথ্যচিত্র তিনি এই পরিচালককে নিয়ে নির্মাণ করবেনই। গুরুর কাছ থেকে শিষ্যের প্রতি নির্দেশ ছিল, কাজটা যেন অঞ্জন নিজে করেন। দেরিতে হলেও মৃণালকে নিয়ে কাজ করেছেন। তবে তথ্যচিত্র নয়, একটি আস্ত সিনেমা বানিয়ে ফেলেছেন অঞ্জন।

গত বছর কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে মৃণালকে নিয়ে অঞ্জনের বানানো সিনেমা 'চালচিত্র এখন' দেখানো হয়। সেখানে ‘স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন অন ইনোভেশন ইন মুভিং ইমেজেস’ বিভাগে সিনেমাটি পুরস্কার পায়।

এরপর গেল জানুয়ারিতে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও সিনেমাটি দেখানো হয় এবং সেখানে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পান অঞ্জন। এবারে শুক্রবার প্রেক্ষাগৃহ এবং ওটিটির পর্দায় দর্শকদের জন্য আসলো সিনেমাটি।

১৯৮১ সালে মৃণাল সেনের ‘চালচিত্র’ সিনেমা দিয়ে অভিনয়ে নাম লিখিয়েছিলেন অঞ্জন। তখন অঞ্জন একজন তরুণ। সেই থেকে সম্পর্কের শুরু।

দুজনের সম্পর্কের বুনট বোঝাতে সংবাদ প্রতিদিনকে অঞ্জন বলেন, “মৃণালবাবুর সঙ্গে আমার ৪২ বছরের যোগাযোগ। বলব, এটা যোগাযোগের থেকেও বেশি কিছু। বন্ধুত্বের, ঝগড়াঝাঁটির, ভালোবাসার আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। আমার রাজনৈতিক মতবাদ, প্রথম থেকেই তার থেকে আলাদা ছিল। শেষদিন পর্যন্ত, ডাক্তার, কুণালের সঙ্গে আমার নামটাও ওর বাড়ির দেওয়ালের ওপর টানানো ছিল। যাতে অঞ্জনকে ফোন করলে চলে আসবে। আমার সিনেমা হলে মৃণালদাকে ডেকে আনতাম, দেখাতাম।”

মৃণাল সেনকে নিয়ে 'চালচিত্র এখন'র গল্প কিভাবে মাথায় আসল সে প্রসঙ্গে অঞ্জন বলেন, “এই যে আমি আজকে কাজ করে খাচ্ছি, কলকাতার ওপর গান লিখে, কলকাতাকে ভালোবাসে, সেটা মৃণাল সেন না হলে হতই না। আমি একসময় কলকাতাকে ঘৃণা করে কলকাতা ছেড়ে যেতে চাইলাম। তখন দেখি কলকাতাকে মিস করতে শুরু করলাম, মৃণালদার জন‌্য।

“এই গল্পটা আমার পেতে সময় লেগেছিল। কারণ একটা জিনিসকে দূর থেকে দেখতে হয়। আগে মৃণাল সেনকে আমি দূর থেকে দেখতে পাইনি। এখন দেখতে পাই। মজার, ইরেসপনসিবল, অদ্ভুত টাইপের ফাজিল, বোহেমিয়ান এই মানুষটার চেহারা। সেই সব আমি দেখতে পাচ্ছি বলে অনেস্টলি ছবিটা করেছি। ‘চালচিত্র’র সময় যা যা হয়েছে সেটাই রেখেছি।”

চালচিত্রের গল্প লিখতে লিখতে অঞ্জন ভেবেছিলেন, মৃণাল সেনের চরিত্রে নিজেই অভিনয় করবেন তিনি।

“ঠিক করেছিলাম এটায় আমিই অভিনয় করব। আমি মৃণাল সেনকে যতটা আত্মস্থ করেছি, তা অন‌্য কেউ করতে পারবে না। তার মধ্যে সারাক্ষণ একটা অস্থিরতা চলত। এইটা আরেকজনকে দিয়ে করাতে আমার অশান্তি হত। তার চেয়ে আমি একটু ম‌্যানেজ করে, চেহারা অন‌্যরকম করে, চশমা পরে বের নিজেই করেছি। অন‌্যকে এত বোঝাতে হত যে, এই লোকটা ভেনিসের ফেস্টিভ‌্যালের লোকের সঙ্গে কথা বলছে, কিন্তু মনে হবে মাছওলার সঙ্গে কথা বলছে।”

সিনেমায় আরও আছেন আরও আছেন শাওন চক্রবর্তী, সুপ্রভাত দাস, বিদীপ্তা চক্রবর্তী। শাওন অভিনয় করেছেন তরুণ অঞ্জনের ভূমিকায়।