“তারা তাদের গল্প শোনান, আমার ভালো লাগে। মনে হল অন্য রকম একটা কিছু করে দেখা যেতে পারে।“
Published : 10 Jan 2025, 07:27 PM
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কবি জয় গোস্বামীকে এবার অন্য পরিচয়ে পাওয়া যাবে।
দুই বাংলার জনপ্রিয় এই কবি ‘দ্য পারফেক্ট মার্ডার’ নামে একটি শর্টফিল্মের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন বলে খবর দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যম ‘এই সময়’।
কাজটি করতে কবির ‘ভালো লাগলেও’ অভিনেতা হিসেবে ‘তেমন কিছু করে উঠতে পারেননি’ বলে তার ভাষ্য।
এই শর্টফিল্মটি বানিয়েছেন কলকাতার ‘জর্জ টেলিগ্রাফ ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে’র শিক্ষার্থীরা। ১৪ মিনিট দৈর্ঘ্যের ওই সিনেমার গল্পের ধরন বা তার চরিত্রটি কেমন, সে বিষয়ে গোস্বামী কোনো তথ্য দেননি।
দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে কয়েক ডজন কাব্যগ্রন্থ ও উপন্যাস প্রকাশের পর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে জয় গোস্বামী ঘোষণা দেন, তার আর কোনো কবিতা ছাপার অক্ষরে আসবে না। হয়েছেও তাই। ফেলে আসা বছরে এই কবির নতুন কোনো লেখা কোথাও প্রকাশ হয়নি। এখন জানা গেল তার নতুন কাজের কথা।
হঠাৎ অভিনয়ে কেন? কবি বলেছেন, জর্জ টেলিগ্রাফ ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের একজনের সঙ্গে তার পরিচয় আছে। তার অনুরোধেই সিনেমায় কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।
“সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা একদিন আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তারা তাদের গল্প শোনান, আমার ভালো লাগে। মনে হল অন্য রকম একটা কিছু করে দেখা যেতে পারে। এটা তাদের পরীক্ষার পড়া বলতে পারেন, প্র্যাক্টিকাল কাজ।
“আমার মেয়ের থেকেও বয়সে ছোট ছেলেমেয়েরা বলেছেন কী কী করতে হবে, তারা মজা করে কাজ করেছেন, এটা বেশ অন্য রকম অভিজ্ঞতা। আমার ভালো লেগেছে।“
কবির কথায়, অভিনয় অনেক ‘পরিশ্রমের কাজ’।
শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় আগামীতে অভিনয় করা আর সম্ভব হবে না বলেও ধারণা করছেন তিনি।
আগে একবার সিনেমায় কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জয় গোস্বামী বলেন, “ঋতুপর্ণ ঘোষের একটা সিনেমায় আমি আমার লেখা একটা কবিতাই পাঠ করেছিলাম। সেটাকে অভিনয় করা বলতে পারি না।“
তার অভিনীত ‘দ্য পারফেক্ট মার্ডার’ ইউটিউবে ‘নিবেদিতা অনলাইন’ নামের একটি চ্যানেল দেখা যাচ্ছে।
এই চ্যানেলের পডকাস্টের সঞ্চালক নিবেদিতা দে ‘এই সময়কে বলেন, “যেহেতু জয় গোস্বামী এই প্রথম অভিনয় করেছেন, তাই এক্সক্লুসিভলি আমাদের চ্যানেলে সিনেমাটি দেখান হচ্ছে।“
‘কবিতা প্রকাশের ৫০ বছরে’ শিরোনামে এক পুস্তিকায় নিজের নতুন কোনো লেখা প্রকাশ না করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন এই সাহিত্যিক।
তার এমন ঘোষণায় ভক্তদের আক্ষেপ থাকলেও জয় গোস্বামী নিজেকে লেখক হিসেবে রাখতে চান ‘ব্যর্থদের’ দলে।
তার ভাষ্য, “নিজের ব্যর্থতার উপর নিজে রাগ করে কী করব? সেটা মেনে নিতে হবে। মেনে নাও, তুমি পারোনি। যতদিন আমি এই পূজাসংখ্যায় পরিবৃত্ত থাকব, ততদিন কবিতা লেখার অন্তরে ঢুকতে পারব না, সেটা ২০-২১ বছর ধরে আসছিলাম।”
লেখা প্রকাশ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ঘনিষ্ঠ মহলের প্রতিক্রিয়া নিয়ে গোস্বামী বলেন, “আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কেউই আসেনি। একটি মাত্র মেয়ে এসেছিল। একজন প্রকাশক, চোখে জল নিয়ে। বাকি কেউ আসেনি, কেউ ফোন করেনি।
“তাতেই বুঝে গেলাম আমি ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি লিখব না, তাতে কারুর কিছু যায়-আসে না। এটায় আমি একটা ফ্রিডম পাই, একটা শান্তি পাই।”
সত্তর বছরের জীবনে কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য বঙ্গভূষণ, বঙ্গবিভূষণ, সাহিত্য আকাদেমি ও আনন্দ পুরস্কারসহ বেশ কিছু সম্মাননা পেয়েছেন জয় গোস্বামী।