ঢাকা থিয়েটারের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান শুক্রবার বিকেল ৫টার পরিবর্তে শুরু জাতীয় নাট্যশালায় এক্সপেরিমেন্টাল হলে শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়।
Published : 28 Jul 2023, 01:06 PM
প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদযাপন করতে যাচ্ছে ‘ঢাকা থিয়েটার; সুবর্ণজয়ন্তীতে ঢাকার জাতীয় নাট্যশালায় দুদিনব্যাপী নাটক ও অনুষ্ঠানের পসরা নিয়ে আসছে দেশের পুরনো এই নাট্য সংগঠনটি।
এ উপলক্ষে প্রয়াত নাট্যকার সেলিম আল দীনের নাটক ‘প্রাচ্য’ মঞ্চে আনছে ঢাকা থিয়েটার।‘প্রাচ্য’ নাটকে অভিনয় করেছেন পুরনো-নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা।
‘ঢাকা থিয়েটারের’ প্রধান নাসির উদ্দীন ইউসুফ গ্লিটজকে বলেন, সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান শুরুর কথা ছিল শুক্রবার বিকেল ৫টায়। কিন্তু এদিন ঢাকায় একাধিক রাজনৈতিক সমাবেশ থাকায় অনুষ্ঠান দুঘণ্টা পিছিয়ে শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়, পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনের লবিতে।
অনুষ্ঠানে অতিথি থাকবেন রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, মামুনুর রশীদ, ম হামিদ ও সৈয়দ সালাউদ্দীন জাকী।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নাটকটির কারিগরি প্রদর্শনী হয়েছে। শুক্রবার রাত ৮টায় মঞ্চস্থ হবে নাটক ‘প্রাচ্য’।
এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবে ‘প্রাচ্য ও দ্বৈতাদ্বৈবাদী’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী, যা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে ‘প্রাচ্য’ নাটকের প্রদর্শনী হবে টিকেটের বিনিময়ে।
‘ঢাকা থিয়েটার’ এর পাঁচ দশক
স্বাধীন বাংলাদেশের থিয়েটার চর্চায় ‘পথিকৃৎ’ নাট্যদল ‘ঢাকা থিয়েটার’। যুদ্ধ ফেরত কয়েকজন তরুণ ১৯৭৩ সালের ২৯ জুলাই প্রতিষ্ঠা করেন এ নাট্যদলটি।
ওই বছরের নভেম্বরে প্রয়াত নাট্যকার ও অধ্যাপক সেলিম আল দীনের লেখা ‘সংবাদ কার্টুন’ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিল ঢাকা জেলা ক্রীড়া সমিতি মিলনায়তনে। ‘ঢাকা থিয়েটারের’ প্রথম সেই নাটকের টিকিটের দাম ছিল দুই টাকা। সেই থেকেই যাত্রা, তারপর পাঁচ দশকের পথ হেঁটে বাংলা নাটকের জমিনকে করেছে সমৃদ্ধ।
দীর্ঘ এ নাট্যযাত্রায় দলটির অন্যতম কাণ্ডারির ভূমিকায় ছিলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সেলিম আল দীন, শিমূল ইউসুফসহ আরও কয়েকজন।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, “প্রয়াত নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের নেতৃত্বেই মূলত ঔপনিবেশিকমুক্ত বাংলা ও বাঙালির নাট্যরীতি ও আঙ্গিকের উদগাতা এই দল। ঢাকা থিয়েটারের দীর্ঘ জার্নির সাথে মিশে আছেন তিনি। সেলিমের প্রয়াণে আমাদের যাত্রাটা হোঁচট খেয়েছে। যে জায়গায় আমরা পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখতাম, সেটি আমরা স্পর্শ করতে পারিনি। তবে পাঁচ দশকে ঢাকা থিয়েটারের অর্জনও কম নয়।”
বাংলা নাটকের শেকড়ে ফেরার স্বপ্নটা ঢাকা থিয়েটার অনেকের মাঝেই ছড়িয়ে দিতে পেরেছে বলে মনে করেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ।
‘ঢাকা থিয়েটারের’ তত্ত্বাবধানে ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার’। সে কথা স্মরণ করে নাসির উদ্দীন ইউসুফ গ্লিটজ বলেন, “বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার সৃষ্টির মধ্য দিয়ে এই দল বাংলাদেশের নাট্যান্দোলনে একটি বিপ্লবী পরিবর্তন ঘটিয়েছে।”
‘ঢাকা থিয়েটারে’ একসময় নিয়মিত অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী আফজাল হোসেন, হুমায়ুন ফরীদি, সুবর্ণা মুস্তাফা, রাইসুল ইসলাম আসাদ, জহির উদ্দিন পিয়ার, শহীদুজ্জামান সেলিম, শমী কায়সার, ফারুক আহমেদ, মাজনুন মিজান। যাদের অনেকেই পরে পর্দায় অভিনয় করে দেশজুড়ে পেয়েছেন তারকাখ্যাতি।
চলচ্চিত্রকার সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, নাট্য শিক্ষক ও নির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদও যুক্ত ছিলেন এই নাট্যদলের সঙ্গে।
এ নাট্যদলটির প্রথম আহ্ববায়ক ছিলেন তিনজন, তারা হলেন- সেলিম আল দীন, নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও ম হামিদ।
এছাড়া নাট্যদলে যুক্ত ছিলেন- শেখ কামাল, কাজী শাহ্জাহান বেবী, ফাইজুদ্দিন মাহতাব ইউসুফ, সাইদুল আনাম টুটুল, শাহজাহান কবির, ফখরুল আবেদীন লালু, শহীদুল ইসলাম মিঠু, আমিনুল ইসলাম তুহিন, মাহবুব গনি, সাইফুল ইসলাম মাহমুদ, সাজেদুল আউয়াল, আহমেদ নেওয়াজ বাবু, নজিবুল্লাহ জন, সোহেল সামাদ, কমল রড্রিকস, বেগমজাদী মেহেরুন্নেসা, হুমায়ুন ফরীদি, আফসার আহমেদ, ফওজিয়া ইয়াসমিন শিবলী, রেজাউল হায়দার, জহিরউদ্দিন রিপন, জিয়া আহমেদ, সাবিনা ইয়াসমিন সাবাসহ অনেকে।
১৯৭৩ সালে ঢাকা থিয়েটার মঞ্চে আনে ‘সংবাদ কার্টুন’, ‘সম্রাট ও প্রতিদ্বন্দ্বীগণ’। ১৯৭৪ সালে ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’, ‘বিদায় মোনালিসা’। এরপর ‘মুনতাসির’ [১৯৭৬], ‘চর কাঁকড়া’, ‘ফণিমনসা’ [১৯৭৭], ‘শকুন্তলা’ [১৯৭৮]।
‘মুনতাসির ফ্যান্টাসি’, ‘ধূর্ত ওই’, ‘কেরামত মঙ্গল’, ‘কিত্তনখোলা’, ‘ত্রিরত্ন’, ‘শকুন্তলা’, ‘হাতহদাই’, ‘যৈবতী কন্যার মন’, ‘চাকা’, ‘বনপাংশুল’, ‘বিনোদিনী’, ‘প্রাচ্য’, ‘একাত্তরের পালা’, ‘নিমজ্জন’, ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’, ‘দ্য টেম্পেস্ট, নাটকগুলো মঞ্চে এনেছে ঢাকা থিয়েটার।