জেমস ক্যামেরন কেন ‘সিকুয়েলের রাজা’?

সিনেমায় গল্পের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে কাহিনীরও যে বিবর্তন দরকার হয়, তা দারুণ বোঝেন হলিউডের এই নির্মাতা।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2023, 04:45 AM
Updated : 18 April 2023, 04:45 AM

আড়াই দশক আগে ১৯৯৮ সালে ‘টাইটানিক’ যখন অস্কারের আসরে সেরা সিনেমার পুরস্কার জিতল, এর নির্মাতা জেমস ক্যামেরন সেই সিনেমার বিখ্যাত লাইনটি বলেছিলেন, ‘আই অ্যাম দ্য কিং অব দ্য ওয়ার্ল্ড’।

কিন্তু আলোচনা ‘টাইটানিক’ ঘিরে নয়, বরং সিকুয়েল (একটি মূল সিনেমার পরের পর্ব হিসেবে আরেকটি সিনেমা) নির্মাণে ক্যামেরনের সাফল্য নিয়ে।

মূল সিনেমার ১৩ বছর পর এর সিকুয়াল ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’ এর সফল মুক্তি দিয়ে বাজিমাৎ করেছেন তিনি।

Also Read: জেমস ক্যামেরন: এক ‘সাহসী’ চলচ্চিত্র নির্মাতা

হলিউডে ক্যামেরনকে কেন ‘সিকুয়েলের রাজা’ বলা হয়, তা বিশ্লেষণ করেছে সিএনএন। তাদের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ‘এলিয়েনস’ ও ‘টারমিনেটর ২: জাজমেন্ট ডে’র পর অ্যাভাটারের সিকুয়েলের এই অভাবনীয় সাফল্যের পর জেমস ক্যামেরন বৈধভাবেই ‘কিং অব দ্য সিকুয়েল’র দাবিদার।

‘এলিয়েনস’ ও ‘জাজমেন্ট ডে’- প্রত্যেকটিই প্রথম সিনেমাটি নির্মাণের অন্তত সাত বছর পর মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং দুটো সিনেমাই পরে আরও একাধিক সিনেমা নির্মাণের পথ খুলে দিয়েছে।

প্রত্যেকটির ক্ষেত্রেই ক্যামেরন সিকুয়েলে কাহিনীর বিস্তার করেছেন, শুধু আগেরটির নকল করেননি। বিশেষ করে ‘এলিয়েনসে’র ক্ষেত্রে তার নির্মাণ শৈলীর মুন্সিয়ানা প্রশংসার দাবিদার, যেহেতু এর প্রথম সিনেমাটি তিনি নির্মাণ করেননি, সেটার পরিচালক ছিলেন আরেক হলিউড নির্মাতা রিডলি স্কট।

‘এলিয়েন’ এর মূল সিনেমায় ‘মহাকাশে পোড়বাড়ি’র যে ধারণাটি ছিল, সিকুয়েলে ক্যামেরন সেটাকে আরও বিস্তৃত ও জটিল করেন, মেরিন সেনাদের যুক্ত করে কাহিনীকে আরও উত্তেজনাকর করে তোলেন, যুক্ত করেন জটিল ভিনগ্রহের প্রাণীদের।

একইভাবে ‘টারমিনেটর’ সিনেমার সিকুয়েলেও তিনি মূল প্লটে আটকে থাকেননি। বরং তিনি মূল সিনেমার খলনায়ককে ‘জাজমেন্ট ডে’তে নায়কে বদলে দিয়েছিলেন এবং আরনল্ড শোয়ার্জনেগারের সাইবর্গ চরিত্রটির বিরুদ্ধে নতুন ও ভিন্ন ধরনের স্বয়ংক্রিয় হুমকি তৈরি করেছিলেন।

‘টারমিনেটর’ সিরিজের দ্বিতীয় সিনেমাটি কম্পিউটার উদ্ভাবিত ভিজুয়াল ইফেক্টস ব্যবহারের ক্ষেত্রে চলচ্চিত্র শিল্পকে এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে এর ‘তরল রোবট’ চরিত্রটির মাধ্যমে। যা আসলে ‘জুরাসিক পার্ক’ এবং এর পরের সিনেমাগুলোর জন্য প্রযুক্তিগত বিস্তারের পথ গড়ে দিয়েছে।

‘অ্যাভাটার’ও একইভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রযুক্তির ব্যবহারকে প্রভাবিত করেছে এবং ‘দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’ দেখে মনে হচ্ছে ডিজিটাল চলচ্চিত্র নির্মাণের দিগন্তকে আরও প্রসারিত করে দিয়েছে এই সিনেমা।

‘টারমিনেটর ২’সহ আরও অনেক সিনেমার স্পেশাল মেকাপ ইফেক্টের নকশা করা স্ট্যান উইনস্টন বলেন, “এই ক্ষেত্রে জিম ক্যামেরন সত্যিকারের পথপ্রদর্শক।”

শিকাগোর এক সাংবাদিককে দেওয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে ক্যামেরন সিকুয়েল নির্মাণে তার দৃষ্টিভঙ্গীকে সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “আপনি দর্শকদের এমন একটা অনুভূতি দিতে চলেছেন যে তারা সিকুয়েল দেখতে এসে প্রথম সিনেমার ভালোলাগার অনুভূতিগুলো ফিরে পাবার প্রত্যাশা করে, কিন্তু আসলে আপনি পুরো বিষয়টিকে একদম উল্টে দিলেন বা এমনভাবে জট পাকিয়ে দিলেন, যা তারা প্রত্যাশা করেনি।”

আর এই কৌশল তিনি সফলভাবে প্রয়োগ করেছেন ‘এলিয়েনস’, ‘টারমিনেটর ২: জাজমেন্ট ডে’ এবং ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’ নির্মাণে। কারিগরিগত উন্নতি সাধন ছাড়াও নতুন ‘অ্যাভাটার’ সিনেমার কাহিনীর উল্লেখযোগ্য বিষয় এর কেন্দ্রীয় পরিবারটির সম্পর্কগুলোর বিস্তৃতি, বিশেষ করে সন্তানদের চরিত্রগুলোকে আরও গভীরতা দেওয়া, একইসঙ্গে একদম নতুন একটি গোষ্ঠীকে দর্শকদের কাছে পরিচিত করানো।।

শুধু সিকুয়েলের সঙ্গে ‘২’ যুক্ত করেই সিনেমার কাহিনীর ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যায় না, বরং দর্শকের বিনোদনের ক্ষুধার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এর কাহিনীরও বিবর্তন দরকার হয়- এ বিষয়টি দারুণভাবে মূর্ত করতে পেরেছেন ক্যামেরন। তিনি এই গতিশীলতা বোঝেন। আর এ কারণেই সিকুয়েল নির্মাণে হলিউডে এক বিশেষ মর্যাদার দাবিদার জেমস ক্যামেরন।