এই নিয়ে দুইবার অস্কার জিতলেন ব্রডি।
Published : 03 Mar 2025, 01:16 PM
যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেতা অ্যাড্রিয়েন ব্রডি যখন বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার অস্কার নিতে মঞ্চের দিকে আগাচ্ছিলেন, দর্শক সারি থেকে তখন কেবল ভাসছিল ‘দ্য ব্রুটালিস্ট ও লাভি’ শব্দগুলো।
ব্র্যাডি করবেট পরিচালিত শরণার্থীর গল্পের সিনেমা ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ সেরা সিনেমার সম্মান অর্জন না করলেও ব্রডি পেয়েছেন সেরা অভিনেতার পুরস্কার। আর এই নিয়ে দুইবার অস্কার জিতলেন ব্রডি।
অভিনেতা হিসেবে ব্রডির ক্যারিয়ারে নতুন বাঁকবদল এনে দিল ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’। ২০০২ সালে ‘দ্য পিয়ানিস্ট’ সিনেমার জন্য ২৯ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে অস্কার জিতেছিলেন ব্রডি।
পরের এতগুলো বছরে বলার মত তেমন কোনো কাজ নেই ব্রডির। ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ দিয়ে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জেতা ব্রডির জন্যও তাই দুর্দান্ত ফেরা।
অস্কার মঞ্চে দাঁড়িয়ে পুরস্কার হাতে নিয়ে পাঁচ মিনিটের বক্তব্যে ব্রডি বলেছেন, তিনি একটি সুন্দর শান্তিময় পৃথিবীর প্রার্থনা করেন।
অভিনয় ও কর্মজীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ব্রডি বলেন, “আমি যুদ্ধ, নীপিড়ন, ইহুদী বিদ্বেষী মনোভাব এবং বর্ণবাদের কারণে তৈরি হওয়া দীর্ঘস্থায়ী ট্রমার বিরুদ্ধে প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছি। অতীত আমাদের শিক্ষা দিয়েছে, ঘৃণা থেকে কিছু শেখা যায় না।”
অভিনয়কে ‘ভঙ্গুর’ পেশা বর্ণনা করেও এটিকে ‘আকর্ষণীয়’ বলেও মন্তব্য করেছেন ব্রডি।
“আমার সৌভাগ্য যে আমি অভিনয়ে এসে যা পেয়েছি, সেটি হল দৃষ্টিভঙ্গি। আমার অভিজ্ঞতা হল, ক্যারিয়ারে যা কিছুই অর্জন করা হোক না কেন, সেটি চলে যেতে পারে কিন্তু থেকে যায় বিশেষ কিছু। আজকের সন্ধ্যাটি আমাকে বলছে যে আমাকে আমার পছন্দের কাজটি (অভিনয়) করে যেতে হবে।”
দ্বিতীয় অস্কার জেতা ব্রডির কাছে ‘নতুন করে শুরু করার সুযোগ’ হয়ে ধরা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন এই অভিনেতা।
“আমি আশা করছি আরও ২০ বছর পরও নিজেকে একটি অর্থপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র পাওয়ার যোগ্য মানুষ হিসেবে ধরে রাখতে পারব।”
অস্কারে প্রেমের সিনেমা 'আনোরার' জয়জয়কার
‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ শরণার্থীর জীবনের সংগ্রাম, তাদের স্বপ্ন, লড়াই ও নৈতিকতার টানাপোড়েনের গল্প বলে গেছে ৩ ঘন্টা ৩৫ মিনিট ধরে।
ব্যক্তিজীবনে ব্রডির মা এবং দাদা-দাদি ১৯৫০ এর দশকে হাঙ্গেরি ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয় পেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে।
ব্রডির ভাষ্য, নিজের পারিবারিক ইতিহাসের জন্য ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ তার কাছে ‘একান্তই ব্যক্তিগত’ হিসেবে ধরা দিয়েছে।
এই সিনেমায় হাঙ্গেরির গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া এক তরুণ স্থপতি মূল চরিত্র তার নাম লাভি। লাভির চরিত্রটি করেছেন অস্কারে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জেতা অ্যড্রিয়েন ব্রডি।
সিনেমায় লাভি সস্ত্রীক যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে তার ‘আমেরিকান ড্রিম’ বাস্তবায়ন করতে চায়। কিন্তু লাভির এই পরিচয় তৈরির পথটা জটিলতায় পূর্ণ। এই পথটা সহজ করতে হলে তার নৈতিকতা বিসর্জন দিতে হবে। যা দিতে নারাজ লাভি। সিনেমার গল্পে শরণার্থীর জীবনের সংগ্রাম, তাদের স্বপ্ন, লড়াই ও নৈতিকতার দিকটি তুলে ধরেছেন নির্মাতা করবেট।
গত ২০ ডিসেম্বর মুক্তি পায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাগৃহে। আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট ২০২৪ সালের যে সেরা ১০ সিনেমার তালিকা করেছিল, সেখানেও ছিল ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’। কেবল সমালোচকেরাই নন, সাধারণ দর্শকেরও ভালোবাসা পেয়েছে সিনেমাটি।
তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ সিনেমা সমালোচিতও হয়।
‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ সিনেমায় ব্রডি ও ফেলিসিটি জোনস অভিনীত চরিত্ররা হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় কথা বলেছে। তাদের উচ্চারণ বাস্তবসম্মত করতে সেখান ব্যবহার করা হয়েছে এআই প্রযুক্তি। প্রথমে বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল। ‘দ্য ব্রুটালিস্টের’ এক টেকনিশিয়ান এ তথ্য প্রকাশ্যে আনার পর শুরু হয় সমালোচনা। প্রশ্ন ওঠে নির্মাতাদের সততা ও সৃজনশীলতা নিয়েও।
পরে অস্কার কর্তৃপক্ষ নিয়ম জারি করে যে কোনো সিনেমায় যদি এআই ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেই অবশ্যই আগে জানাতে হবে। আর এই নিয়ম কার্যকর হবে আগামী আসর থেকে।
সেরা সিনেমা, সেরা নির্মাতা, সেরা অভিনেতাসহ ১০ শাখায় মনোনয়ন পেলেও, অস্কারে ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ জিতেছে সেরা অভিনেতাসহ ৩ শাখায়।