লস অ্যাঞ্জেলেস সিটি কন্ট্রোলার বলছে, ওই জায়গায় গাছ ছাঁটার অনুমতি দেওয়া হয়নি এনবিসি ইউনিভার্সালকে।
Published : 21 Jul 2023, 12:14 PM
হলিউডের লেখক ও অভিনয় শিল্পীদের যুগল ধর্মঘট সপ্তাহ পেরিয়েছে। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ তুলেছেন, এই গরমে রাস্তায় থাকা বিক্ষোভকারীদের দুর্ভোগে ফেলতে লস অ্যাঞ্জেলসে স্টুডিও কোম্পানি এনবিসি ইউনিভার্সাল তাদের কার্যালয়ের সামনের সড়কে গাছের পাতা ছেঁটে ফেলেছে।
বিবিসি বলছে, এনবিসি ইউনিভার্সাল কর্তৃপক্ষ ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, গাছ ছাঁটার বিষয়টি ছিল তাদের বার্ষিক কাজের অংশ, যা প্রতি বছর এ মৌসুমে করা হয়।
আর লস অ্যাঞ্জেলেস সিটি কন্ট্রোলার কেনেস মেজিয়া জানিয়েছে, ওই জায়গায় গাছ ছাঁটার জন্য এনবিসি ইউনিভার্সালকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি অভিনয় শিল্পী ও কলাকুশলীদের সংঘ ‘স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যান্ড দি আমেরিকান ফেডারেশন অব টেলিভিশন অ্যান্ড রেডিও আর্টিস্টস’ (এসএজি-এএফটিআরএ) লেখকের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আন্দোলন করছে গত ১৩ জুলাই থেকে।
এই কদিন ধরে আন্দোলনকারী ও তাদের সমর্থকরা লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ ইয়র্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরে, প্রধান প্রধান স্টুডিও এবং স্ট্রিমিং কোম্পানি- নেটফিক্স, প্যারামাউন্ট পিকচার্স, এনবিসি, ওয়ার্নার ব্রাদার্স ও ওয়াল্ট ডিজনির অফিসের বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে আসছেন।
এই আন্দোলনের শুরুটা করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফিল্ম ও টেলিভিশন লেখকদের সংঘ দ্য রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা (ডব্লিউজিএ), গত মে মাস থেকে তারা এই আন্দোলনে আছে।
এই ধর্মঘটে ‘ডব্লিউজিএ’ এবং ‘এসএজি-এএফটিআরএ’ এর বিপরীত পক্ষ হল ‘দ্য অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসারস’ (এএমপিটিপি)।
‘এএমপিটিপি’ বর্তমানে প্রধান স্ট্রিমিং স্টুডিও কোম্পানি যেমন- ওয়াল্ট ডিজনি, প্যারামাউন্ট এবং আমেরিকান টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ফক্স, এনবিসি, নেটফ্লিক্স ও অ্যামাজনের মতো স্ট্রিমিং জায়ান্টগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে।
এসএজি-এএফটিআরএ সংঘ এই ঘটনায় এক বিবৃতিতে বলেছে, “রেকর্ড তাপপ্রবাহের সময় মাথার ওপরের ছায়া সরাতে গাছের পাতা ছাঁটাই করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এসএজি-এএফটিআরএ তাদের সদস্যদের এনবিসি ইউনির্ভাসেলের সামনে পিকেটিংয়ে পাঠাতে পারছে না।“
অভিযোগ অস্বীকার করে এনবিসি বলেছে, বিক্ষোভকারীদের বিপদে ফেলার জন্য তাদের কার্যলয়ের সামনে ‘ফিকাস’ গাছটি ছাঁটা হয়নি।।
“এটা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। ঝড়ো বাতসের মৌসুম আসার আগে লাইসেন্সধারী গাছ কাটার কর্মীদের দিয়ে আমার প্রতি বছর এ সময় গাছগুলো ছাঁটাই করি।”
লেখক ও অভিনয়শিল্পীদের আন্দোলন নিয়ে এই স্টুডিও কোম্পানির ভাষ্য, “আমরা আন্দোলন করার অধিকারকে সমর্থন করি। গাছের পাতা ছাঁটাইয়ের পর কীভাবে ওই জায়গায় ছায়ার ব্যবস্থা করা যায়, সেটা নিয়েও কাজ চলছে।“
গাছ ছাঁটা নিয়ে ‘এসএজি-এএফটিআরএ’ এর অভিযোগ তদন্ত করে সিটি কন্ট্রোলার কেনেথ মেজিয়া বলেন, ”ব্যুরো অব স্ট্রিট সার্ভিসেসের মাধ্যমে আমার জানতে পেরেছি, ইউনিভার্সাল স্টুডিওর বাইরে ওই জায়গার গত তিন বছর কোনো গাছ ছাঁটাইয়ের অনুমতি দেওয়া হয়নি।“
এনবিসি ইউনিভার্সাল এখন তাদের কার্যালয়ের সামনে ফাঁকা জায়গায় বিক্ষোভকারীদের জন্য ছাউনির ব্যবস্থা করছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
কার কী অভিযোগ
লেখক-শিল্পীদের অভিযোগ, তাদের পারিশ্রমিক কমেছে এবং কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার কর্মক্ষেত্রে হুমকি তৈরি করেছে। এছাড়া কাজের ‘ভালো’ পরিবেশও চান তারা।
এআইকে ‘সৃজনশীল পেশার অস্তিত্বের জন্য হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করে এর ভবিষ্যৎ প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেছে অভিনয় শিল্পীদের সংগঠনটি।
তাদের দাবি, স্ট্রিমিং কোম্পানি এবং স্টুডিওগুলো পারিশ্রমিকের বিষয়ে আরও উদার হোক। এছাড়া বর্ধিত রয়্যালিটি এবং পেনশন ও স্বাস্থ্যসেবায় উল্লেখযোগ্য আার্থিক সুবিধা দিক।
আর লেখকদের অভিযোগ, এআই ডেভেলপাররা লেখকদের অনুমতি ছাড়াই তাদের কাজ ব্যবহার করছে এবং কপিরাইট লঙ্ঘন করছে। এটা বন্ধ করতে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা চান তারা।
কনটেন্ট তৈরিতে কোথায় কোথায় এআই ব্যবহার করা হল, সেটা স্পষ্ট করা হচ্ছে না, এটাও একটি অভিযোগ। এআই এর করা খসড়া স্ক্রিপ্ট লেখকদের পুনর্লিখন করতে বলা হবে না, সেই নিশ্চয়তাও চাইছেন তারা।
অন্যদিকে দ্য অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসারস’ (এএমপিটিপি) এর প্রযোজকরা বলছেন, ‘এসএজি-এএফটিআরএ' এর ধর্মঘট চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তে তারা হতাশ।
আন্দোলনের একাল-সেকাল
হলিউডে লেখক ও অভিনেতারা প্রথম যৌথ ধর্মঘটে গিয়েছিলেন ১৯৬০ সালে। সে সময় লেখকরা কাজ বন্ধ রেখেছিলেন ২১ সপ্তাহ, আর অভিনেতারা ছয় সপ্তাহের মত তাদের কাজে বিরতি নিয়েছিলেন।
এরপর কেবল অভিনয়শিল্পীরা ধর্মঘটে গিয়েছিলেন ১৯৮০ সালে। সেবার ১০ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় ওই কর্মবিরতি। ওই ধর্মঘটে ৩৭০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল।
এছাড়া ২০০৭ ও ২০০৮ সালে একশ দিন ধর্মঘট পালন করেছিল ডব্লিউজিএ। সে সময় প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে যায় এবং বেকার লেখক, অভিনেতা ও প্রযোজকরা খরচ কমিয়ে দেন। তাতে ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতিতে আনুমানিক ২০০ কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হয়।
তবে এবারের সমস্যা দীর্ঘায়িত হতে পারে। কারণ প্রভাবশালী অভিনেতারা ‘এসএজি-এএফটিআরএ’কে দাবি আদায়ে কঠোর হতে চাপে রেখেছেন।
বিশ্বের সামনে নিজেদের সংকট তুলে ধরার জন্য ‘এখনই উপযুক্ত সময়’ বলে মনে করছেন অভিনেতারা। তারা বলেছেন, প্রয়োজনে বছরের ‘শেষ নাগাদ পর্যন্ত’ ধর্মঘট চলতে পারে।
এই ধর্মঘটের কারণে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে ‘অ্যাভাটার’, ‘ডেডপুল’, ‘গ্ল্যাডিয়েটর’ এর সিক্যুয়েলসহ বড় বাজেটের সিনেমায় এবং ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’, ‘ফ্যামিলি গাই’ এবং ‘দ্য সিম্পসনস' এর মত টেলিভিশন সিরিজের ওপরে। তাতে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
পুরনো খবর
ধর্মঘটে হলিউডের অভিনয় শিল্পীরা
হলিউডে ধর্মঘটে আটকে যাচ্ছে অনেক সিনেমা