অভিনয় শিল্পী-কলাকুশলীদের অভিযোগ, পারিশ্রমকিসহ নানা দিক থেকে স্ট্রিমিং কোম্পানিগুলো তাদের ‘নির্যাতন’ করছে।
Published : 16 Jul 2023, 05:47 PM
হলিউডের লেখক ও অভিনয় শিল্পীদের যুগল ধর্মঘটের তৃতীয় দিনেও দাবিদাওয়া এবং অভিযোগ নিয়ে শক্ত অবস্থানে আছেন অভিনয় শিল্পীরা।
বিশ্বের সামনে নিজেদের সংকট তুলে ধরার জন্য ‘এখনই উপযুক্ত সময়’ বলে মনে করছেন অভিনেতারা। তারা বলেছেন, প্রয়োজনে বছরের ‘শেষ নাগাদ পর্যন্ত’ ধর্মঘট চলতে পারে।
আন্দোলনে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় কমেডি ড্রামা ‘সাকসেশন’র কেন্দ্রীয় চরিত্র করা বর্ষীয়ান অভিনেতা ব্রায়ান কক্সের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি।
এই তরাকা বলেন, “চলমান ধর্মঘট বছরের শেষ পর্যন্ত চলতে পারে।“
স্ট্রিমিং প্লাটফর্মগুলোর ভূমিকার সমালোচনা করে কক্স বলেন, “বিনোদন মাধ্যমের ধারা বদলে দিয়ে নতুন মডেল তৈরি করেছেন স্ট্রিমিং পরিষেবা। এতে লেখক-অভিনেতাদের একটি ছকে আটকে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। বলা যায়, আমাদের একেবারে মাটিতে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কারণ স্ট্রিমিং স্টুডিও কোম্পানিগুলোর লক্ষ্য হল স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা। এবং সেই অর্থে লেখক বা অভিনয়শিল্পীদের কোনো ভাগ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের ফিল্ম ও টেলিভিশন লেখকদের সংঘ দ্য রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা (ডব্লিউজিএ) গত মে মাস থেকে এই আন্দোলনে আছে।
১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি অভিনয় শিল্পী ও কলাকুশলীদের সংঘ ‘স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যান্ড দি আমেরিকান ফেডারেশন অব টেলিভিশন অ্যান্ড রেডিও আর্টিস্টস’ (এসএজি-এএফটিআরএ) লেখকের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আন্দোলনে যোগ দেয় বৃহস্পতিবার মাঝরাতে।
এই ধর্মঘটে ‘ডব্লিউজিএ’ এবং ‘এসএজি-এএফটিআরএ’র বিপরীত পক্ষ হল ‘দ্য অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসারস’ (এএমপিটিপি)।
‘এএমপিটিপি’ বর্তমানে প্রধান স্ট্রিমিং স্টুডিও কোম্পানি যেমন- ওয়াল্ট ডিজনি, প্যারামাউন্ট এবং আমেরিকান টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ফক্স, এনবিসি, নেটফ্লিক্স ও অ্যামাজনের মতো স্ট্রিমিং জায়ান্টগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে।
লেখক-শিল্পীদের অভিযোগ, তাদের পারিশ্রমিক কমেছে এবং কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার কর্মক্ষেত্রে হুমকি তৈরি করেছে। এছাড়া কাজের ‘ভালো’ পরিবেশও চান তারা।
লেখক-শিল্পীদের দাবি, স্ট্রিমিং কোম্পানি এবং স্টুডিওগুলো আরও ‘ভালো’ পারিশ্রমিকের বিষয়ে উদার হোক। এছাড়া বর্ধিত রয়্যালিটি এবং পেনশন ও স্বাস্থ্যসেবায় উল্লেখযোগ্য আার্থিক সুবিধা দিক।
আর লেখকদের অভিযোগ, তাদের আগের কাজগুলো থেকে ধারণা নিয়ে নতুন স্ক্রিপ্ট তৈরি করছে এআই। ফলে এটি প্রতিরোধ করতে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা চান তারা।
সেইসঙ্গে এআই এর করা খসড়া স্ক্রিপ্ট লেখকদের পুনর্লিখন করতে বলা হবে না, সেই নিশ্চয়তাও চাইছেন তারা।
অস্কার জয়ী যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেত্রী সুসান সরান্ডন বিবিসিকে বলেন, “এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) এই শিল্পকে প্রভাবিত করছে।“
এই অভিনেত্রীর ভাষ্য, “আমরা মনে করি এই সমস্যা তুলে ধরার এটাই সঠিক সময়। এছাড়া এখনই যদি সমাধান না হয়, তবে ভবিষ্যতে আমরা কি করব? আমাদের দূরদর্শী হতে হবে।“
‘এসএজি’র প্রেসিডেন্ট ফ্রান ড্রেশার বলেন, 'আমরা খুব লোভী একটি মাধ্যমের কাছে (স্ট্রিমিং কোম্পানি) নির্যাতিত হচ্ছি। তারা যেভাবে আমাদের সাথে আচরণ করছে তাতে আমি হতবাক!”
বিবিসি লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রনাট্যকার এবং অভিনয়শিল্পীদের এমন ধর্মঘট গত ৬৩ বছরের মধ্যে প্রথম। এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে হলিউডের অধিকাংশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন প্রোডাকশন হাউজে ধীরে ধীরে কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।
এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে ‘অ্যাভাটার’, ‘ডেডপুল’, ‘গ্ল্যাডিয়েটর’র সিক্যুয়েলসহ বড় বাজেটের সিনেমায় কিংবা ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’, ‘ফ্যামিলি গাই’ এবং ‘দ্য সিম্পসনস' এর মত টেলিভিশন সিরিজের ওপরে। ফলে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
ধর্মঘটের অংশ হিসেবে ‘রেড কার্পেট প্রিমিয়ার’, ‘এমি অ্যাওয়ার্ডস’, ‘টরন্টো’, ‘টেলুরাইড’, ‘কমিক-কন’ এবং ‘ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’সহ আসন্ন অনুষ্ঠানগুলোও স্থগিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ধর্মঘট শুরুর পর শুক্রবার দুপুরের মধ্যে ‘এসএজি-এএফটিআরএ’ সংঘের সদস্য এবং তাদের সমর্থকরা লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ ইয়র্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরে প্রধান স্টুডিও এবং স্ট্রিমিং কোম্পানি- নেটফিক্স, প্যারামাউন্ট পিকচার্স, ওয়ার্নার ব্রাদার্স ও ওয়াল্ট ডিজনির অফিসের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন।
এরপর অভিনয় শিল্পীদের সংঘ, হলিউড স্টুডিও ও স্ট্রিমিং কোম্পানি সঙ্গে আলোচনায় বসলেও কোনো সমাধান ছাড়া ওই বৈঠক শেষ হয়।
এক সংবাদ সম্মেলেন ‘এসএজি-এএফটিআরএ’ জানায়, কোনো ধরনের মীমাংসায় পৌঁছানো যায়নি। তাদের অভিযোগ, এএমপিটিপি ‘ন্যায্য চুক্তি’ করতে অনিচ্ছুক।
এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউজ বলেছে, “প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্বাস করেন, অভিনেতাসহ সব শ্রমিক ন্যায্য বেতন ও সুবিধা পাওয়ার যোগ্য।“
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র রবিন প্যাটারসন বলেন, “প্রেসিডেন্ট শ্রমিকদের ধর্মঘটের অধিকারকে সমর্থন করেন এবং আশা করেন যে দলগুলি পারস্পরিক লাভজনক চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবে।"
এরপর কী হবে?
ধর্মঘট নিরসনের উপায় খুঁজতে আগামীতে অভিনয় শিল্পীদের সমিতি স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ডের (এসএজি) সঙ্গে অভিনয়শিল্পীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ও হলিউড স্টুডিওগুলোর মধ্যে বৈঠক হবে। ওই ধর্মঘট থেকে সংকটের সমাধান খোঁজার চেষ্টা হবে সব পক্ষ থেকে।
লেখক ও অভিনেতারা প্রথম যৌথ ধর্মঘটে গিয়েছিলেন ১৯৬০ সালে। সে সময় লেখকরা কাজ বন্ধ রেখেছিলেন ২১ সপ্তাহ, আর অভিনেতারা ছয় সপ্তাহের মত তাদের কাজে বিরতি নিয়েছিলেন।
এরপর কেবল অভিনয়শিল্পীরা ধর্মঘটে গিয়েছিলেন ১৯৮০ সালে। সেবার ১০ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় ওই কর্মবিরতি। ওই ধর্মঘটে ৩৭০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল।
এছাড়া ২০০৭ ও ২০০৮ সালে একশ দিন ধর্মঘট পালন করেছিল ডব্লিউজিএ। সে সময় প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে যায় এবং বেকার লেখক, অভিনেতা ও প্রযোজকরা খরচ কমিয়ে দেন। তাতে ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতিতে আনুমানিক ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি ক্ষতি হয়।
তবে এবারের সমস্যা দীর্ঘায়িত হতে পারে। কারণ প্রভাবশালী অভিনেতারা ‘এসএজি-এএফটিআরএ’কে দাবি আদায়ে কঠোর হতে চাপে রেখেছেন।
এদিকে প্রযোজকরা বলেছেন, ‘এসএজি-এএফটিআরএ'র ধর্মঘট চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তে তারা হতাশ।
ধর্মঘটে হলিউডের অভিনয় শিল্পীরা