রাত সাড়ে ৩টায় গোপালগঞ্জ শহরের বাসায় খালিদের মরদেহ পৌঁছালে পরিবারের সদস্য, সহপাঠী, বন্ধু ও ভক্তরা একনজর দেখার জন্য ভিড় করেন। অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
Published : 19 Mar 2024, 04:53 PM
যাদের জন্য এসেছিলেন পৃথিবীর আলোয়, সেই বাবা-মার পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন চাইম ব্যান্ডের কণ্ঠশিল্পী খালিদ।
মঙ্গলবার দুপুরে গোপালগঞ্জে জোহরের নামাজের পর জানাজা শেষে মা-বাবার কবরের পাশে শায়িত করা হয় এ শিল্পীকে।
জানাজার আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোহসিন উদ্দিন এবং খালিদের বড়ভাই মেজবা উদ্দিন হাসান, জেলা উদীচীসহ বিভিন্ন সংগঠন শ্রদ্ধা জানিয়ে এ গুণী শিল্পীর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
সোমবার সন্ধ্যায় নিজের বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন খালিদ। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাতে গ্রিন রোড জামে মসজিদে প্রথম জানাজার পর খালিদের মরদেহ নিয়ে রাতেই গোপালগঞ্জের গ্রামের বাড়ি নেওয়া হয়।রাত সাড়ে ৩টায় গোপালগঞ্জ শহরের বাসায় খালিদের মরদেহ পৌঁছালে পরিবারের সদস্য, সহপাঠী, বন্ধু ও ভক্তরা একনজর দেখার জন্য ভিড় করেন। অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
মঙ্গলবার বাদ জোহর গোপালগঞ্জ কোর্ট মসজিদে শিল্পী খালিদের জানাজা হওয়ার কথা থাকলেও পড়ে যে বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন সেই এস এম মডেল সরকারি হাই স্কুল মাঠে জানাজা হয়।
জানাজায় অংশ নেন গীতিকার-সুরকার প্রিন্স মাহমুদ, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশি, ভক্ত, শুভাকাংখী, গোপালগঞ্জের বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যসহ সহস্রাধিক মানুষ।
পরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা উদীচী সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন শিল্পীর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এরপর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গেটপাড়া এলাকার পৌর কবরস্থানে। সেখানে তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে শায়িত করা হয়।
খালিদের বাল্যবন্ধু গোপালগঞ্জ জেলা উদিচির সভাপতি মো. নাজমুল ইসলাম এ সময় স্কুলজীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, “আমরা এক সাথে পড়তাম। খালিদ সাইফুল্লাহ ছাত্রজীবন থেকে গান গাইত। একদিন ওর গান শোনার জন্য প্রধান শিক্ষকের কাছে ছুটির আবেদন করেছিলাম, কিন্তু ছুটি দেননি। ছুটি শেষে আমরা সবাই মিলে তার গান শুনতাম।
“বাল্যবন্ধু খালিদ আজ চলে গেল। তার অভাব কোনোভাবেই পূরণ হবে না।”
যার লেখা ও সুরে কণ্ঠ দিয়েছেন খালিদ, সেই প্রিন্স মাহমুদও এসময় স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন।
“খালিদ ভাইয়ের সাথে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। খালিদ ভাইয়ের সাথে আমি ছোটবেলায় গোপালগঞ্জে এসেছি। আজও এসেছি খালিদ ভাইয়ের জন্য, তবে ভাইকে চিরবিদায় জানাতে। খালিদ ভাইয়ের শূন্যতা অন্য কারও দ্বারা পূরণ হবে না।
এই শিল্পীর পুরো নাম খালিদ সাইফুল্লাহ। আশি ও নব্বইয়ের দশকের ব্যান্ড সংগীতের শ্রোতারা তাকে খালিদ নামেই চেনেন।
১৯৬৫ সালের ১ অগাস্ট গোপালগঞ্জে জন্ম নেওয়া এ শিল্পী স্ত্রী ও এক ছেলে রেখে গেছেন।
গানের জগতে খালিদের যাত্রা ১৯৮১ সালে। ব্যান্ড দল ‘চাইম’- এ যোগ দেন ১৯৮৩ সালে।
'সরলতার প্রতিমা’, ‘যতটা মেঘ হলে বৃষ্টি নামে’, ‘কোনো কারণেই ফেরানো গেল না তাকে’, ‘হয়নি যাবারও বেলা’, ‘যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে’, ‘তুমি নেই তাই’ এমন বহু শ্রোতাপ্রিয় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন খালিদ।
১৯৮৯ সালে ‘নাতি খাতি বেলা গেল’ গানটির তুমুল জনপ্রিয়তার পর প্রথম বিদেশ সফরের ডাক আসে। সেবার কাতারের দোহায় একটি অনুষ্ঠানে গান করতে গিয়েছিলেন খালিদ।
গত কয়েক বছর ধরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন। সেখান থেকে সম্প্রতি দেশে ফেরেন। খালিদের স্ত্রী ও ছেলে যুক্তরাষ্ট্রেই রয়েছেন।