“আমার মাথায় যত চুল আছে তার একটি চুলের সমান জ্ঞান মোরশেদুল ইসলামের নেই।”
Published : 11 Jan 2023, 08:42 PM
চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানহানির মামলার ঘোষণা দিয়েছেন আরেক চলচ্চিত্র নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। তিনি বলেছেন, আগামী রোববার মামলাটি করা হবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নৌ-সেক্টরে পরিচালিত সফলতম গেরিলা অপারেশন নিয়ে ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নামে নির্মিতব্য সিনেমা নিয়ে দুই নির্মাতার মধ্যে এই রেষারেষি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমকে মোরশেদুল ইসলাম বলেছিলেন, “সম্মান রেখেই বলছি, স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে এমন একটি সিনেমা দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর নির্মাণের যোগ্যতা নেই।”
সেই মন্তব্যে বেজায় চটেছেন ঝণ্টু। তিনি বুধবার গ্লিটজকে বলেন, “মোরশেদুল ইসলাম কে? সে আমার বিরুদ্ধে এমন কথা বলবে কেন? আমি মনে করি, আমার মাথায় যত চুল আছে তার একটি চুলের সমান জ্ঞান মোরশেদুল ইসলামের নেই।
“তার কথায় আমার সম্মানহানি হয়েছে। আমি ৫০ কোটি টাকার মানহানি মামলা করব। কাগজপত্র সব রেডি। আগামী রোববার মামলা করব।”
‘অপারেশন জ্যাকপট’ নির্মাণ বন্ধ?
‘অপারেশন জ্যাকপট’ সিনেমাটি নির্মাণের উদ্যোগটি নিয়েছিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। সেই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছিলেন ‘মনপুরা’খ্যাত নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম। চিত্রনাট্য তৈরিতে কয়েক বছর কাজও করেন তিনি। সেই চিত্রনাট্য প্রস্তুত কমিটির সদস্য ছিলেন মোরশেদুল ইসলাম।
ওই সময় বিশাল বাজেটের কারণে সিনেমাটি পিছিয়ে যায়। এখন নতুন করে সেই প্রকল্পটি নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তাতে বাদ পড়েছেন সেলিম। নতুন প্রকল্পে সিনেমার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ২৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
বছর দেড়েক আগে দায়িত্ব নেওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় গত বছরের মাঝামাঝিতে সিনেমাটির জন্য দরপত্র ডাকে। তাতে ‘যোগ্য’ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয় কিববীয়া ফিল্মস। তারা দেলোয়ার জাহান ঝন্টুসহ চারজন পরিচালকের নাম প্রস্তাব করেছেন।
তার পরিপ্রেক্ষিতেই মোরশেদুল ইসলামের মন্তব্য আসে ঝন্টুকে নিয়ে। তিনি আরও বলেন, “টেন্ডার দিয়ে এসব কাজ হয় নাকি? আমি বিষয়টি মেনে নিতে পারছি না। সম্মান রেখেই বলছি, স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে এমন একটি সিনেমা দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর নির্মাণের যোগ্যতা নেই। আমরা এটা প্রতিহত করব।”
ঝন্টু গ্লিটজকে বলেন, “অপারেশন জ্যাকপট সিনেমার জন্য আমি তো কোনো দরপত্রে অংশগ্রহণ করিনি। কিবরীয়া ফিল্মস অংশগ্রহণ করেছে এবং তারা নির্মাতা হিসেবে আমার নাম দিয়েছে। মোরশেদুল ইসলাম কেন না জেনে আমার বিরুদ্ধে কথা বলবেন?”
ঝন্টু আরও বলেন, “মোরশেদুল ইসলাম যে সিনেমা বানিয়েছে, তা কেউ দেখে না। ওসব সিনেমা চলে না। দুই একটা চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় শুধু। আমার সিনেমা দীর্ঘদিন হলে চলে। দর্শক আনন্দ নিয়ে সিনেমা দেখে। আর সে কি না বলে আমি সিনেমা বানাতে পারব না!”
চলচ্চিত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা মোরশেদুল ইসলাম ১৯৮৪ সালে ‘আগামী’ চলচ্চিত্র তৈরি করে নির্মাতা হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে নির্মাণ করেন দীপু নাম্বার টু ও দুখাই। দীপু নম্বর টুর জন্য সেরা চলচ্চিত্রকারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। দুখাই শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়।
এছাড়া দূরত্ব, খেলাঘর, প্রিয়তমেষু, আমার বন্ধু রাশেদ, অনিল বাগচীর একদিনসহ তার কয়েকটি চলচ্চিত্র দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়।
অন্যদিকে এফডিসিকেন্দ্রিক নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু ১৯৭৮ সালে ‘বন্দুক’ সিনেমা দিয়ে নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
এরপর শিমুল পারুল, প্রেমগীত, হারানো প্রেম, ঝিনুকমালার প্রেম, বউমা, সকাল-সন্ধ্যা, পালকি, জজ ব্যারিস্টার, মুজাহিদ, হাতি আমার সাথী, কন্যাদান, রূপসী নাগিন, নাচে নাগিন, রূপের রানী গানের রাজা, বিষে ভরা নাগিন, হেডমাস্টার, সবাই তো ভালবাসা চায়সহ অনেক সিনেমা নির্মাণ ও প্রযোজনা করেন তিনি।
ঝন্টু গরিবের রাজা চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
ঝন্টুর করা মন্তব্য ও মামলার বিষয়ে জানতে নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে বুধবার কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে ঝন্টুর মামলার ঘোষণা নিয়ে গিয়াস উদ্দিন সেলিম গ্লিটজকে বলেন, “মোরশেদ ভাই বড় মানুষ, ঝণ্টু সাহেবও বড় মানুষ। বড়দের ঝামেলা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।”
অপোরেশন জ্যাকপট নির্মাণের দরপত্রে সেলিমের প্রতিষ্ঠান ‘আশীর্বাদ চলচ্চিত্র’ অংশ নিলেও তারা কাজটি পায়নি।
সেলিম বলেন, “আমি সিনেমার সঙ্গে শুরু থেকেই যুক্ত ছিলাম। অনেক কাজ করেছি। এখন আমার নাম আসেনি। আপাতত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ছাড়া আমার কিছু করার নেই।”