‘লৌহকপাট’ বিতর্ক: এ আর রহমান তবু চুপ

‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটির নতুন সংগীতায়োজন নিয়ে নজরুল সংগীতের বাঘা বাঘা শিল্পীরা যেমন সমালোচনা করছেন, আপত্তি জানিয়েছেন খোদ কবি পরিবারের সদস্যরাও।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2023, 04:46 AM
Updated : 14 Nov 2023, 04:46 AM

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটির সুর বিকৃতির অভিযোগ নিয়ে দুই বাংলায় তুমুল সমালোচনার মধ্যে প্রযোজনা কর্তৃপক্ষ ‘ক্ষমা’ চাইলেও এখনও মুখ খোলেননি ভারতীয় সুরকার এ আর রহমান। 

রাজাকৃষ্ণ মেনন পরিচালিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক হিন্দি সিনেমা‘পিপ্পা’র জন্য নজরুলের ওই গানটির নতুন সংগীতায়োজন করেন অস্কারজয়ী এ আর রহমান। কিন্তু শ্রোতাদের অনেকের অভিযোগ, এ আর রহমানের হাতে পড়ে গানটি থেকে বিদ্রোহই হারিয়ে গেছে।

সোশাল মিডিয়ায় নজরুল সংগীতের বাঘা বাঘা শিল্পীরা যেমন তীব্র সমালোচনা করছেন, আপত্তি জানিয়েছেন খোদ কবি পরিবারের সদস্যরাও। এমনকি রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করারও হুমকি এসেছে।

এমন পরিস্থিতিতে সোমবার ‘পিপ্পা’ সিনেমার অন্যতম প্রযোজনা সংস্থা রায় কাপুর ফিল্মস একটি বিবৃতি দেয়। 

সেখানে বলা হয়, কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং তার সৃষ্টির প্রতি পিপ্পা টিমের ‘গভীর শ্রদ্ধা’ রয়েছে। যাবতীয় নিয়ম মেনেই কবি পরিবারের কাছ থেকে গানের স্বত্ব নেওয়া হয়েছিল। সেই চুক্তি মেনেই গানের কথা ব্যবহার এবং সুরের পরিবর্তন করা হয়েছে। গানটির ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে শ্রদ্ধা জানানোই ছিল পিপ্পা টিমের উদ্দেশ্য। 

“আমরা মূল গানটি ঘিরে শ্রোতাদের আবেগকে সম্মান করি। শিল্প যেহেতু ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভরশীল, সেখানে আমাদের পদক্ষেপ যদি কারও আবেগে আঘাত করে থাকে বা অনিচ্ছাকৃত কষ্টের কারণ হয়ে থাকে, তাহলে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।"

রায় কাপুর ফিল্মস বিবৃতি দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলেও যাকে ঘিরে সমালোচনা, সেই সুরকার এ আর রহমান এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। 

সোমবার ‘পিপ্পা’ টিমের পাশাপাশি সকলকে দীপাবলির শুভেচ্ছা জানাতে এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করেন এ আর রহমান। শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি অ্যামাজন প্রাইমে শীর্ষ দশ সিনেমার তালিকায় ‘পিপ্পা’র নাম থাকার সুখবর দেন।

সেই পোস্টে ‘পিপ্পা’র দুই মুখ্য চরিত্র ঈশান খট্টর, মৃণাল ঠাকুরসহ পরিচালক রাজা মেননকে শুভেচ্ছা জানালেও নজরুলগীতি বিতর্ক নিয়ে কোনো কথা বলেননি এ আর রহমান।

১৯২১ সালে ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটি লিখেছিলেন নজরুল, যা পরের বছরের ২০ জুন ‘ভাঙার গান’ শিরোনামে প্রকাশিত হয় ‘বাঙ্গলার কথা’ পত্রিকায়।

ওই পত্রিকার সম্পাদক ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশ যখন কারারুদ্ধ হন, তখন তার স্ত্রী বাসন্তী দেবীর অনুরোধে বাংলার মানুষকে নিয়ে কবিতা হিসেবে সেটি লিখেছিলেন জাতীয় কবি। ১৯৪৯ সালের জুন মাসে গিরীন চক্রবর্তীর কণ্ঠে গানটি রেকর্ড করা হয়েছিল। 

নজরুলের নাতনি, প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী কল্যাণী কাজীর কন্যা অনিন্দিতা কাজী শনিবার ফেইসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্টে মূল গানের স্বত্ব হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। 

নিউ জার্সি প্রবাসী অনিন্দিতা লেখেন, “দাদুর 'কারার ওই লৌহ কপাট' গানটির সুরবিকৃতি ঘটিয়েছেন বিশিষ্ট গীতিকার সুরকার শিল্পী এ আর রহমান। গোটা বিশ্ব জুড়ে বিতর্কের ঝড়, তোলপাড়। আমার মা কল্যাণী কাজী, যার বেঁচে থাকাই ছিল নজরুলকে নিয়ে, নজরুলকে ঘিরে, নজরুলকে তিনি ধারণ করেছিলেন... তিনি ২০২১ সালে গানটি অবিকৃত রেখে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিলেন বলে জানতে পারি। কিন্তু এর পরিণতি এমন হবে, তিনি মৃত্যুর পরেও ভাবতে পারেননি বোধ হয়।’’ 

অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, প্রচুর টাকার বিনিময়ে নাকি গানটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফেইসবুক পোস্টে তারও উত্তর দেন অনিন্দিতা।

তিনি বলেন, “সে ক্ষেত্রে ২০২১ সালে কী এগ্রিমেন্ট হয়েছিল, সেটা জানা খুব প্রয়োজন, তা হলে সব বিতর্কের অবসান হবে। এবং যারা এগ্রিমেন্ট-এর বিপক্ষে গিয়ে এই কাজটি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।’’ 

অনিন্দিতা লেখেন, চুক্তির কাগজ তার ভাই কাজী অনির্বাণের কাছে রয়েছে বলে তিনি সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছেন। পরিবারের অন্যতম সদস্য হিসেবে চুক্তিপত্র দেখে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট করতে চান তিনি। আর তাই সকলের সহযোগিতা চান তিনি।

এছাড়া নজরুলের নাতনি খিলখিল কাজীও গত শুক্রবার এ আর রহমানের কঠোর সমালোচনা করেন। তার ভাষায় ‘লৌহ কপাট’ গানের সুর বদলে ‘গর্হিত অপরাধ’ করেছেন এ আর রহমান।

আর গানের ‘ক্রেডিট লাইন’ থেকে কবি পরিবারের নাম মুছে ফেলার দাবি জানিয়ে নজরুলের নাতি অনির্বাণ কাজী সম্প্রতি বলেন, “আমরা বুঝতে পারিনি যে রহমানের মত একজন শিল্পী এতটা অসংবেদনশীল হতে পারে; গানটিকে হত্যা করতে পারে।”

আরও পড়ুন:

Also Read: ‘লৌহ কপাট’: এবার চুক্তিপত্র নিয়ে প্রশ্ন কবির পৌত্রীর

Also Read: ‘কারার ওই লৌহ কপাট’: এ রহমানের সমালোচনায় হৈমন্তী, অজয় ও অনির্বাণ