বৈরী দিন কাটিয়ে অর্থনীতি এগিয়ে যাবে, আশা অর্থমন্ত্রীর

প্রথম প্রান্তিকের বাজেট বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করে মন্ত্রী বলেছেন, অর্থনৈতিক চালকগুলোর অবস্থান ‘সন্তোষজনক’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2023, 03:54 PM
Updated : 12 Jan 2023, 03:54 PM

দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর অবস্থান ‘সন্তোষজনক’ দাবি করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে বলেছেন, চলমান অর্থবছরে সরকারের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হবে বলেই তিনি আশা করছেন। 

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাজেট বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন তুলে ধরে এ কথা বলেন মুস্তফা কামাল। 

তিনি বলেন, “বৈরী পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দেশ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে।” 

বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী প্রথম প্রান্তিকের বাজেট বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। 

মন্ত্রী বলেন, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আয়, প্রবাসী আয় এবং রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, এডিপির ব্যয়, ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ ইত্যাদি মৌলিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক চালকসমূহের অবস্থান ‘সন্তোষজনক’। 

“আমদানি-রপ্তানি আয় উভয়ক্ষেত্রেই ধনাত্মক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। চলমান অর্থবছরে সরকারের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হবে।” 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে উন্নত বিশ্বের মত বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে জানিয়ে, এই বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দেশ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন মুস্তফা কামাল। 

তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক হয়ে আসা এবং মধ্যবর্তী পণ্য ও মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বাড়ায় আমদানি ব্যয় গত অর্থবছরের একই সময়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে বর্তমানে বিলাস দ্রব্যের আমদানি পরিহার করা এবং সরকারের কৃচ্ছ্রসাধনে আমদানি ব্যয় কমেছে।” 

গতিপ্রকৃতি 

বিগত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি অর্থ বছরের একই সময়ে আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়েছে ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম। 

বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ২০২১ এর সেপ্টেম্বরের ৫ দশমিক ৫০ শতাংশের তুলনায় ২০২২ এর সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয় ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আর মাসওয়ারি (পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট) মূল্যস্ফীতি একই সময়ে ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ হয়। 

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও এলএনজির দাম কমতে থাকায় মূল্যস্ফীতির বর্তমান চাপ চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসার আশা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, “অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসপণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করার পদক্ষেপ নেওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও খুব দ্রুত আগের মত শক্ত অবস্থানে ফিরবে।” 

তিনি বলেন, “কোভিড পরিস্থিতি থেকে অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়ালেও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী তেল, গ্যাসসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য এবং গম, ভোজ্যতেলসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় উন্নত দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নানাবিধ বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়।”  

চলতি অর্থবছর রাজস্ব আহরণ আশানুরূপ হারে বাড়ার প্রত্যাশা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আর্থিক খাতে খেলাপি ঋণের মাত্রা কমিয়ে আনাসহ আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা করা এবং কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর মাধ্যমে বিনিয়োগের গতিধারা সমুন্নত রাখতে সরকার সচেষ্ট।” 

তিনি বলেন, “একজন অত্যন্ত আশাবাদী মানুষ হিসেবে বলতে চাই, আমাদের অর্থনীতির অন্তনির্হিত শক্তি, বিভিন্ন বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অভিঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের নেওয়া বাস্তবমুখী পদক্ষেপের ফলে অর্থনীতির প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।”