বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা ‘স্বস্তি’ আনবে অর্থনীতিতে: বাংলাদেশ ব্যাংক

অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি এবং মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার কথাও বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2023, 06:07 PM
Updated : 21 Nov 2023, 06:07 PM

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে অর্থনীতিতে যে চাপ তৈরি হয়েছে তা কাটিয়ে 'স্বস্তি' আসার বিষয়ের অনেকটুকু নির্ভর করছে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতার উপর।

বাংলাদেশের অর্থনীতির সবশেষ হালচাল বিশ্লেষণে এমন পর্যবেক্ষণই তুলে ধরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে এবং অর্থবছরের শেষ নাগাদ অর্থনীতি ঘুরবে বলেও প্রত্যাশার কথা এক বিবৃবিতে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান গতিধারা’ শীর্ষক এ বিবৃতিতে অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি এবং মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কয়েক মাস থেকে সবাইকে ভোগাতে থাকা উচ্চ মূল্যস্ফীতি আগামী জানুয়ারিতে ৮ শতাংশে এবং জুন শেষে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার চেষ্টা চালাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রবৃদ্ধির বিষয়ে বলা হয়েছে, সরকারের চলমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং কাঙ্খিত মাত্রায় কৃষি উৎপাদন বাড়ার ফলে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশের অধিক হবে বলে সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার বাজেটে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

মূল্যস্ফীতির বিষয়ে বলা হয়েছে, বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এ বিবৃতির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা নিয়ে তথ্য বিবরণী।’’

আমদানি ব্যয় দ্রুত বেড়ে যাওয়ার ফলে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের বৈদেশিক খাত বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিময় হারের উপর জোরালো চাপ পড়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, ‘‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে শীঘ্রই দেশের রপ্তানি ও রেমিটেন্সের প্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির বৈদেশিক খাতে স্থিতিশীলতা এবং মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিতে একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থা ফিরে আসবে।

‘‘বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যে শ্রীঘ্রই একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থা ফিরে আসবে, যা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণসহ মুদ্রা বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা আনায়নে আরো সহায়ক হবে।’’

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আগামীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি তাদের নীতি সুদহার আর না বাড়ায় কিংবা হ্রাস করে তাহলে আমাদের বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা আনয়নে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

অর্থনীতি চাপে পড়ার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘‘কোভিড-১৯ মহামারী, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ও উন্নত বিশ্বের নীতি সুদহারের ক্রমাগত বৃদ্ধির নানা প্রতিকূলতার প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির বৈদেশিক খাত সামপ্রতিকালে অনেকটা চাপের মুখে পড়ে।’’

এরপরও বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রকৃত খাতের প্রায় সব সূচকগুলো ‘স্বস্তিদায়ক অবস্থায়’ রয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ চাপ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নানামুখী উদ্যোগ নেয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়, ‘‘বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের চলতি হিসাবে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে এবং মুদ্রা বিনিময় হারের উপর বিদ্যামান চাপ অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে।’’

বৈদেশিক বাণিজ্য লেনদেনের চলতি হিসাবের ঘাটতি ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার থেকে গত সেপ্টেম্বরে প্রায় এক বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনার তথ্য দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টের পূর্বের একটা স্বস্তিদায়ক উদ্বৃত্ত অবস্থা থেকে ঘাটতি পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কারণে সার্বিক বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যে এখনো কিছুটা ঘাটতি রয়েছে।’’

চাপে থাকা অর্থনীতিতে অনেকটা লাগামহীন হয়ে পড়া মূল্যস্ফীতির উচ্চ হারের কারণ ব্যাখ্যা করে বলা হয়, ‘‘বৈশ্বিক পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, বাংলাদেশি টাকার অবমূল্যায়ন এবং অভ্যন্তরীণভাবে মৌসুমী আবহাওয়ার প্রতিকূল প্রভাব ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়াসহ সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়।

“মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় সংকোচন করেছে। সামাজিক নিরাপত্তা জালের (যেমন, এক কোটি ফ্যামিলি কার্ড, ট্রাক সেল ইত্যাদি) আওতা বৃদ্ধি করছে সরকার।”

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিময় হার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর বিষয়ে বলা হয়, নীতি সুদহারের বৃদ্ধি, আমানত ও ব্যাংক ঋণের সুদহারে সীমা তুলে দিয়ে তা বাজারমুখী করা, টাকা ছাপিয়ে সরকারকে লোন না দেওয়া, আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়ার মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

“এরসঙ্গে রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হারকে বাজারমুখী করা, আমদানি মূল্য যাচাইসহ বৈদেশিক মুদ্রা বাজার তদারকি বৃদ্ধি করা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হতে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানি ব্যয় মেটানোর ব্যবস্থা।”

ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারকে সঙ্গতিপূর্ণ মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ‘‘বিদ্যমান মুদ্রা বিনিময় হার প্রকৃত কার্যকর বিনিময় হার সূচকের সাথে অনেকটাই সঙ্গতিপূর্ণ রয়েছে।’’

বৈদেশিক মুদ্রার বর্তমান রিজার্ভ আইএমএফ এর বিপিএম-৬ অনুযায়ী প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মত আছে, যা দিয়ে প্রায় ৪ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।