“কী যে অসহনীয় অবস্থা দেশের, ঢাকায় থেকে আপনারা বুঝবেন না”, সংসদে বলেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ।
Published : 05 May 2024, 09:30 PM
লোডশেডিংয়ের চিত্র দেখাতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুকে নিজ নির্বাচনি এলাকা কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ ও তাড়াইলে নিয়ে যেতে চান জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তার এলাকা লোডশেডিংয়ের চিত্র তুলে ধরে প্রশ্ন রাখেন, ‘বিদ্যুৎ গেল কোথায়?’
রোববার বিকেলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু শুরু হয়। মাগরিবের বিরতির পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে গ্রামে লোডশেডিং পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব।
তিনি বলেন, “দেশের মানুষ অনেক সমস্যায় আছে। এখন দুটো সমস্যায় মানুষ আক্রান্ত। একটি হল বিদ্যুৎ। এখন গ্রামগঞ্জে লোডশেডিং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোথাও ১২ ঘণ্টা, কোথাও ৮ ঘণ্টা।”
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ-তাড়াইলে ২৪ ঘণ্টায় ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকার বলেছে ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সক্ষমতা আছে। তাহলে বিদ্যুৎ গেল কোথায়?”
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে চুন্নু বলেন, “গ্রামে লোডশেডিং হয় না চ্যালেঞ্জ করবেন কেন? আমার এলাকার মানুষ আমাকে বলেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে দাওয়াত দিতে, একটা দিন থাকার জন্য, লোডশেডিং হয় কি না তা দেখার জন্য।''
অন্য সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে জাতীয় পার্টির নেতা বলেন, “কী যে অসহনীয় অবস্থা দেশের, ঢাকায় থেকে আপনারা বুঝবেন না। সরকারি দলের যে সমস্ত এমপিরা গ্রামগঞ্জে আছেন তারা হয়ত এখন বলতে পারছেন না।”
ভারত থেকে বিদ্যুৎ আসা বিঘ্নিত হওয়ায় চলতি বছর এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ ৩১০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত ঘাটতি থাকলেও সাধারণভাবে উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ঘাটতি থাকছে এক থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট, যা চাহিদার ১৩ শতাংশের মত।
কিন্তু দেশের সব এলাকায় লোড শেডিংয়ের ‘সমবণ্টন’ হচ্ছে না। ফলে কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুতের যাওয়া আসা বেশ কম, কোথাও কোথাও মানুষ অতিষ্ঠ। কোথাও দিনে এক ঘণ্টা আবার কোথাও ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লোড শেডিংয়ের তথ্য মিলছে।
আবার অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থাপনা আছে, যেখানে বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়। এসব স্থাপনায় একাধিক লাইন থাকে, একটিতে বিদ্যুৎ না থাকলে আরেকটি চালু করা হয়। এগুলো বাদ দিয়ে যে ঘাটতি দেখা দেয়, তার বেশিরভাগই যায় পল্লী বিদ্যুতের ওপর দিয়ে। শহরাঞ্চলে পরিস্থিতি সহনীয় থাকলেও গ্রাম এলাকায় ঘণ্টায় ঘণ্টা বিদ্যুৎ যাওয়ার তথ্য মিলছে।
পল্লী বিদ্যুতেও আছে পার্থক্য। যেমন কুমিল্লার একটি উপজেলাতে ২৪ ঘণ্টায় এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের তথ্য মিলেছে, আবার আরেকটি উপজেলায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।
বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো কোনো পকেট এরিয়াতে সমস্যা হচ্ছে। সংকট হচ্ছে নেত্রকোণা বা অন্য কোনো অঞ্চলে। সেসব অঞ্চলে যেসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ দিত, কোনো কারণে এলাকায় কেন্দ্রগুলো হয়ত পুরোপুরি কার্যকর করা যাচ্ছে না। সেটি জ্বালানির অভাবও হতে পারে, কেন্দ্র শাটডাউনের কারণেই হোক, বা অন্য কোনো কারণে হতে পারে।”
সক্ষমতা সত্ত্বেও ভাড়ায় চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪১ শতাংশ বসে আছে জানিয়ে চুন্নু বলেন, “২০২২-২৩ অর্থবছরে বসে থাকার জন্য ভাড়া বাবদ ২৬ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।”
বিদ্যুতের দায়মুক্তি আইনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “'এ চুক্তি দয়া করে প্রত্যাহার করেন। উৎপাদন না করেও বসে বসে ভাড়া নেওয়ার যে চুক্তি, তা জনগণের স্বার্থে বাতিল করেন।
“ওই সমস্ত কোম্পানি বিদ্যুৎ দিলে বিল দেবেন, বসিয়ে বসিয়ে ২৬ হাজার টাকা বিল দেবেন, তাহলে লোডশেডিং থাকবে।”
বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করে, ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ।
‘দাম বাড়ানো বলতে লজ্জা পান প্রতিমন্ত্রী’
আইএমএফের প্রস্তাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েও কথা বলেন চুন্নু। তিনি বলেন, “মন্ত্রী (প্রতিমন্ত্রী) দাম বৃদ্ধিকে বলেন ‘সমন্বয়’। দাম বাড়ানো বলতে ‘লজ্জা পান’, তাই সমন্বয় বলেন তিনি।
এক বছরে চার বার সমন্বয়ের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আগামী তিন বছরে ১২ বার করবেন। ভর্তুকি পুরো তুললে বিদ্যুতের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাবে। মানুষ কিনতে পারবে কি না জানি না।
“দাম বৃদ্ধি না করে এমন পদক্ষেপ নেন, যেটাতে জনগণের উপর চাপ না পড়ে সহনীয় পর্যায়ে আপনারা সরকারেও থাকতে পারেন, আর বিদ্যুৎ ও যাতে পাওয়া যায়।”
দেশে অব্যাহত সড়ক দুর্ঘটনার নিয়েও কথা বলেন জাতীয় পার্টির নেতা। তিনি বলেন, “গাড়ির ফিটনেস নাই, ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।”
এ বিষয়ে সড়ক মন্ত্রীকে শক্ত অবস্থান নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে চুন্নু বলেন, “পুরানো, ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও অটো রাস্তায় না চললে মানুষ এইভাবে মারা যাবে না।”
‘দুর্বল-ভালোর একীভূত নয়’
জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলেন ব্যাংক একীভূতকরণের উদ্যোগ নিয়ে।
শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না করে দুর্বল ব্যাংকগুলোর সমন্বয়ে নতুন ব্যাংক করা যায় কি না, সেটি ভাবার পরামর্শ দেন তিনি।
বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, “দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না করে খারাপ ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে নতুন ব্যাংক করা যায় কি না একান্তভাবে দেখা দরকার।”
আইএমএফের শর্ত পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংক দশটি ব্যাংক একীভূত করার জন্য চিহ্নিত করেছে উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির নেতা বলেন, “এসব ব্যাংকের দায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে ৫৪ হাজার কোটি টাকা হচ্ছে খেলাপি ঋণ।”
বেসিক ব্যাংকের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এতদিন বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো রকম বড় পদক্ষেপ নেয়নি। আজকে আইএমএফ যখন বলেছে, তখন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এর দায় দায়িত্ব কে নেবে?
“যারা এর জন্য দায়ী তাদের কী হবে? সে সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো কথা বলেনি। যারা দায়ী তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।”
আরো পড়ুন: