বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রযুক্তিতে: নসরুল হামিদ

সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে কম জ্বালানি দিয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব বলে মনে করেন নসরুল হামিদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2022, 12:40 PM
Updated : 3 Dec 2022, 12:40 PM

জ্বালানি তেল আমদানিতে চাপ কমানো এবং পরিবেশ রক্ষায় সরকার সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

শনিবার সচিবালয় সংলগ্ন বিদ্যুৎ ভবনে ‘জ্বালানি স্থানান্তর; বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এই তথ্য দেন তিনি।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজন, এমন সব জ্বালানি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। বর্তমানে জীবাশ্ম জ্বালানির মাধ্যমে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে তাতে জ্বালানির যোগান দিতে হলে ২০৩০ সালের দিকে বছরে ২০ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি আমদানি করতে হবে। এই বিপুল জ্বালানি পোড়ানো পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর।

“বর্তমানে সারাবিশ্ব- বিশেষ করে ইউরোপ বৈদ্যুতিক গাড়িকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। ব্যাটারিতে চলবে কোনোও দূষণ নেই। এমন পরিস্থিতিতে আমরাও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এতে একদিকে জ্বালানি আমদানির চাপ কমবে, আবার পরিবেশও রক্ষা পাবে।”

নসরুল হামিদ বলেন, আমাদের চাহিদা সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ। আবার পরিবেশ রক্ষা করতে হলে কার্যকর কৌশল হতে পারে কম জ্বালানি দিয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা।

সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এটি সম্ভব হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশের সফলতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেয়ে বেশি খরচ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা।

তিনি বলেন, “আবার এই বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে বিশাল এলাকা লাগে তাও আমাদের নেই। উপকূলীয় এলাকায় কিছুটা করা গেলেও তা নির্ভর করা যাচ্ছে না।

“আবার আমাদের রপ্তানির কেন্দ্র হচ্ছে ইউরোপ। তাদের ক্লিন এনার্জির শর্ত রয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা ২০৪০ সালের মধ্যে ক্লিন এনার্জির দেশ হতে চাই।”

এসব বিবেচনায় কম দূষণ ও কম জ্বালানি আমদানি করতে হয় এমন কৌশল হিসেবে প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করতে হবে, যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।

ক্লিন এনার্জি পেতে অবশ্যই সৌরবিদ্যুতে মনোযোগ দিতে হবে; এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এক প্রশ্নের উত্তরে নসরুল বলেন, “আমাদের দেশের গ্যাস উত্তোলনের জন্য দরপত্র আহ্বান করলেও ঠিকাদাররা আগ্রহী না হওয়ায় তা উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে না।”

বাংলাদেশ এনার্জি রিপোর্টার্স ফোরাম (এফইআরবি)- এর আয়োজনে এ সেমিনার হয়।

এর মূল প্রবন্ধে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ম তামিম বলেন, “সংকট মাথায় নিয়ে অর্থাৎ চলমান সংকটকে স্থায়ী হিসেবে ধরে নিয়ে পরিকল্পনা নেওয়া ঠিক হবে না। পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে গবেষণার ভিত্তিতে।

“২০৫০ সালে গিয়ে আমাদের কী পরিমাণ চাহিদা হতে পারে, ওই সময়ে জ্বালানি তেল, গ্যাস বা কয়লার দাম কত হবে; আবার ক্লিন এনার্জি হিসেবে সৌর ও বায়ুবিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদনের চেষ্টা, সবকিছু মিলিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনায় থাকতে হবে।”

তিনি বলেন, ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম এখন বাড়লেও ২০২৫ সালের দিকে এটি স্থিতিশীল হয়ে আসতে পারে। আবার ইউরোপ বলছে তারা আর তেলের ইঞ্জিনের গাড়ি না বানিয়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি বানাবে।

“বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তেল পুড়ছে গাড়ি। আর গাড়ি যদি তেল ছাড়া চলে তাহলে তেলের দাম কমে আসতে পারে। এর সঙ্গে সমন্বয় করে প্রযুক্তির মাধ্যমে কম তেল পুড়িয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রযুক্তি গ্রহণ উপযুক্ত হতে পারে।”

অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, সারা বিশ্বই এখন জ্বালানি সংকটে পড়েছে। যার কাছে জ্বালানি রয়েছে সেই শক্তিশালী। অথচ আমাদের মাটির নিচে প্রায় সাড়ে ৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস থাকলেও তা উত্তোলনে সরকারের কোনও পদক্ষেপ নেই।

সরকারকে মাটির নিচের গ্যাস উত্তোলনে উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি।

খনিজ ও জ্বালানি সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান সেমিনারে বক্তব্য দেন।