পোশাক শ্রমিকদের মূল মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা সর্বনিম্ন মজুরি চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
Published : 07 Nov 2023, 08:18 PM
পাঁচ বছর পর মজুরি বোর্ডের নির্ধারণ করা সর্বনিম্ন মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে তা পুর্নবিবেচনার দাবি জানিয়েছে এ নিয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের একটি জোট।
এর প্রতিবাদে ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন’ নামের জোটটি ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আগামী শুক্রবার ঢাকায় শ্রমিক সমাবেশ করার ঘোষণাও দিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে সর্বনিম্ন মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
এদিকে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনে থাকা অনেক শ্রমিক সংগঠনের নেতারা এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তারা এ নিয়ে পরে কথা বলতে চেয়েছেন।
তবে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের টঙ্গীর আঞ্চলিক কমিটির নেতারা এ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন।
অন্যদিকে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, “বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে এ পরিমাণ মজুরি বৃদ্ধি কোনভাবেই গ্রহণযোগ হতে পারে না, মেনে নেওয়া যায় না। ২০ হাজার টাকার নিচে মজুরি ঘোষণা করা ঠিক হয়নি। আমরা সরকার এবং পোশাক কারখানার মালিকদের প্রতি এ বিষয়ে পুর্নর্বিবেচনা করার অনুরোধ করছি।”
এর আগে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে গাজীপুরে পোশাক কারখানা অধ্যুষিত এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভ, রাস্তা অবরোধ ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলেও এদিন মজুরি ঘোষণার পর কোথাও অসন্তোষের খবর পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার মজুরি বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধিদের সম্মতিতে মূল মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে পোশাক শ্রমিকদের জন্য সাড়ে ১২ হাজার টাকা সর্বনিম্ন মজুরি চূড়ান্ত করা হয়। নতুন এ বেতন কাঠামো আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
মজুরি বোর্ডের ষষ্ঠ সভায় মালিকপক্ষ এদিন তাদের আগের প্রস্তাব ১০ হাজার ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ন্যূনতম মজুর ১২ হাজার ৫০০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়। মজুরি বোর্ডের বৈঠকে সেই প্রস্তাবই গৃহীত হয়।
সবশেষ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে পাঁচ বছরের জন্য পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি আট হাজার টাকা ঘোষণা করেছিল সরকার।
পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঠিক করতে গত এপ্রিলে নিম্নতম মজুর বোর্ড গঠন করে সরকার। সে অনুযায়ী আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নতুন মজুরি ঘোষণা করার দাবি ছিল শ্রমিকদের।
গত ২২ অক্টোবর এই বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করেন। আর মালিকপক্ষ ১০ হাজার ৪০০ টাকা মজুরির প্রস্তাব দেয়।
মালিক পক্ষের এ প্রস্তাব প্রত্যাখান করে ঢাকা, গাজীপুর ও সাভারে আন্দোলনে নামেন শ্রমিকরা। বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে; প্রাণহানিও হয়। তাদের বিক্ষোভের মধ্যে এদিন বোর্ডের ষষ্ঠ সভা হয়।
শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি ঘোষণা করেন। এর আগে তিনি তার দপ্তরে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।
এ প্রস্তাবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন বোর্ডে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা।
সরকারের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত আসার পর প্রত্যাখ্যান করে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করে ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন’। বিক্ষোভ থেকে অবিলম্বে ঘোষিত মজুরি পুনর্বিবেচনা করে তৈরি পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
এ জোটে রয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন, ওএসকে গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, জাতীয় সোয়েটার গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, গার্মেন্টস শ্রমিক সভা ও গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র।
জোটের আহ্বায়ক তাসলিমা আখতার বলেন, মালিকপক্ষ ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি এ সময়ে টেনে এনেছে। আইন মেনে ৬ মাসের মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি ফয়সালা না করে নভেম্বর মাস পর্যন্ত বিলম্ব করা হয়েছে। এখন এসে সাড়ে ১২ হাজার টাকা প্রস্তাব দেয়ার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে জর্জরিত শ্রমিকদের ক্ষোভকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে।
তারা নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে এ শিল্পে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করারও দাবি জানান।
শ্রমিক নেতা জলি তালুকদার বলেন, বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী এই মজুরি দিয়ে শ্রমিকের জীবন চালানো সম্ভব নয়। এ ধরনের মজুরি স্বাভাবিকভাবেই শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করবে।
প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে একটা ভালো সিদ্ধান্ত নেবেন বলে তার আশা।
টঙ্গীর নেতারা কী বলছেন
ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়াকার্স এর টঙ্গী আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি আবুল হাসেম মোল্লাহ জানান, আমাদের চাহিদার শেষ নেই। বিগত সময়ের চেয়ে মজুরি এবার অনেক বেড়েছে। আমাদেরও টিকে থাকতে হবে, কারখানা মালিকদেরও টিকে থাকতে হবে।
“আমাদের এ বার্তা নেতৃবৃন্দরা শ্রমিকদের বুঝালে আমার মনে হয় কোনো সমস্যা হবে না। কিছু বিএনপিপন্থি সংগঠন আছে তারাই সর্বদা সরকারের বিরুদ্ধে কাজে লিপ্ত থাকে। তাদের থেকে সকলকে সাবধান থাকতে হবে।”
জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক জোট, বাংলাদেশ এর টঙ্গী আঞ্চলিক কমিটির সেক্রেটারি মো. রাশেদ আলী জানান, “এ মজুরিতে আমরা নেতৃবৃন্দরা সন্তুষ্ট। শ্রমিকরাও সন্তুষ্ট হবে ইনশাল্লাহ। নতুন এ ঘেষণা নিয়ে শ্রমিকরা আমার এলাকায় আজকে কোন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেনি, বিশৃখংলা, ঝামেলা হয়নি।”
সম্মিলিত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের টঙ্গী আঞ্চলিক কমিটির অর্গানাইজার শেখ রুবেল প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আরও কিছু টাকা বাড়ালে ভালো হতো। যেই গতিতে বাড়ি ভাড়া ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে সেই তুলনায় এ মজুরি বৃদ্ধির পরিমাণ খুব বাড়েনি। বুধবার আমরা শ্রমিকদের মনোভাব বুঝতে পারবো।”
৫৬.২৫% বাড়িয়ে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২,৫০০ টাকা নির্ধারণ