বিদেশি মুদ্রায় ঋণ: সুদহার ফিরল আগের জায়গায়

এসওএফআর বা লাইবরের সঙ্গে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ শতাংশ যোগ করে এ সুদহার নির্ধারণ করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2022, 04:11 PM
Updated : 28 Sept 2022, 04:11 PM

বৈশ্বিকভাবে নীতি সুদহার বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে এক মাসের কিছু বেশি সময়ের ব্যবধানে বিদেশি মুদ্রায় নেওয়া ঋণের সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক; এতে তা ফিরে গেছে আগের অবস্থানে।

বুধবারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রায় স্বল্প মেয়াদে বিনিয়োগে সুদহার হবে এসওএফআর রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ শতাংশ।

এর আগে গত ১৬ আগস্ট এমন ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে লাইবরের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ যোগ করে র্নিধারণ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

এক মাস ১০ দিনের ব্যবধানে সিদ্ধান্ত বদলে সুদহার সাড়ে ৩ শতাংশ নির্ধারণ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এসওএফআর (সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট, আগে যা ছিল লাইবর) রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ শতাংশ যোগ করে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো।

তবে লাইবরের রেট যতদিন কার্যকর রয়েছে, ততদিন তা অনুসরণ করতে পারবে ডলারে বিনিয়োগের বেলায়।

এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের মুদ্রার সুদহারকে ‘বেঞ্চমার্ক রেট’ হিসেবে ধরতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বুধবার এ বিষয়ে সার্কুলার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বৈশ্বিক সুদহারের বর্তমান ধারা বিবেচনায় এ  সুদহার পুনর্নিধারণ করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক কয়েক মাসে মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার নিয়মিত বাড়াচ্ছে। গত জুলাইতে চতুর্থবারের  মত যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বাড়ায়।

এর চাপ পড়েছে এশিয়ার দেশগুলোর উপর। মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ ঋণের সুদহারের বর্তমান সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ থেকে তুলে দিতে পরামর্শ দিচ্ছেন।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্র বরাবরই ঋণের বেঁধে দেওয়া সুদহার সীমা তুলে দেওয়ার পক্ষে নন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গত ২৭ অগাস্ট বিআইবিএমের এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ঋণের সুদহার বাড়াবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

যুক্তি তুলে ধরে গভর্নর বলেছিলেন, ‘‘সুদহার সীমা তুলে দিলে অর্থ খরচ আরো বাড়বে উদ্যোক্তাদের। পাশাপাশি ব্যাংকেরও তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ বৃদ্ধি পাবে। আমরা উদ্যোক্তাদের কম খরচে ঋণ দিতে চাই। যাতে উৎপাদন খরচ কমে আসে।’’

তবে দেশি মুদ্রায় ঋণের সুদহার সীমা তুলে না দিলেও বিদেশি মুদ্রায় স্বল্প মেয়াদের ঋণের সুদহার বাড়িয়ে আগের অবস্থানে নিয়ে গেল বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিদেশি ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্বল্প মেয়াদে ট্রেড ফাইন্যান্সের বেলায় ডলারের ক্ষেত্রে লাইবর রেট (ইংল্যান্ডের আন্তঃব্যাংকের ৩ মাসের গড় সুদহার) অনুসরণ করা যাবে।

বুধবার ছয় মাস মেয়াদের জন্য এসওএফআর সুদহার ছিল ১ দশমিক ৪ শতাংশ। এরসঙ্গে সাড়ে ৩ শতাংশ সুদ যোগ করলে বিদেশি মুদ্রায় বিনিয়োগে বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বার্ষিক সুদহার যোগ করতে পারবে যেকোনো ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ঠিক একইভাবে ইউরো ‍মুদ্রায় বিনিয়োগে ইউরোবর, পাউন্ডের বেলায় সোনিয়া (স্টারলিং ওভারনাইট ইনডেক্স এভারেজ) এর সুদহারকে রেফারেন্স রেট হিসেবে নিতে হবে ব্যাংকগুলোকে।

এর আগে বিদেশি মুদ্রায় আমানত আনতেও সংশ্লিষ্ট দেশের মুদ্রার সুদহারকে বেঞ্চমার্ক ধরা হত। গত মাস থেকে ঋণ দেওয়ার বেলাতেও তা অনুসরণ করা শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।