ডলারের বিনিময় হার একেক ক্ষেত্রে একেক রকম হওয়ায় রপ্তানি বাণিজ্য ও রেমিটেন্স ‘কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে’ বলে মনে করেন তিনি।
Published : 19 Oct 2023, 07:06 PM
বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে স্থিতিশীলতার জন্য ডলারের বিনিময় হার বাজার ভিত্তিক করা এবং মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের সুদহারের সীমা তুলে সাহসী অর্থনৈতিক সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি আব্দুলায়ে সেক।
বৃহস্পতিবার আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) আয়োজিত ‘ইনক্লুসিভ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্ট ইকোনমিক গ্রোথ ইন বাংলাদেশ- দ্যা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকস এনগেইজমেন্ট’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে এ পরামর্শ দেন তিনি।
অ্যামচেম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অ্যামচেম সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। রাজধানীর শেরাটন হোটেলে এ অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংক প্রতিনিধিই মূল বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, “কোভিড ১৯ মহামারীর সময় বাংলাদেশ অনেকগুলো অর্থনৈতিক সংস্কার ও প্রণোদনা দিয়ে সফলভাবে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। কিন্তু এরপর বিশেষ করে গত অর্থবছর থেকে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাথে বাংলাদেশও অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
“উদীয়মান চ্যালেঞ্জ কমাতে এবং প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য হ্রাসের শক্তিশালী গতি বজায় রাখতে, সাহসী অর্থনৈতিক সংস্কার করতে হবে।”
আব্দুলায়ে সেক বলেন, গত অর্থবছর থেকে বাংলাদেশ বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
“আমি মনে করি সরকার একেক ক্ষেত্রে ডলারের একেক বিনিময় হার করার কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। যেমন রপ্তানিকারকের জন্য একটি, আমদানিকারকের জন্য একটি আবার রেমিটেন্স প্রেরণকারীদের জন্য আরেক বিনিময় হার কার্যকর করছে। এতে মুক্ত বাণিজ্যে আস্থাহীনতা সৃষ্টি করছে।”
এতে রপ্তানি বাণিজ্য ও রেমিটেন্স ‘কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে’ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর ‘চাপ সৃষ্টি’ হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
এ পরিস্থিতিতে ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন বিশ্ব ব্যাংক প্রতিনিধি।
গত এক বছর ধরে দেশে মূল্যস্ফীতির চাপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতই প্রয়োজনীয় মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে, বিশেষ করে সুদ হারের ক্যাপ তুলে দিয়ে বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।”
সেইসঙ্গে এই নীতি শক্ত হাতে বাস্তবায়নের পরামর্শও দেন তিনি।
আব্দুলায়ে সেক বলেন, “গত অর্থবছর মহামারী-পরবর্তী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছিল, বিশ্ব ব্যাংক চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কমিয়ে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ করেছে, যদিও আমরা আশা করি, মধ্যমেয়াদে প্রবৃদ্ধি ধীরে ধীরে ত্বরান্বিত হবে।”
তার মতে, ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে শুরুতে দাম আরও কিছুটা বাড়তে পারে। ওই অতিরিক্ত বিনিময় হার অভিবাসীদের আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠাতে এবং রপ্তানি আয় দেশে আনতে উৎসাহিত করবে।
রপ্তানি আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জিডিপির অনুপাতে রপ্তানির অংশ হ্রাস পাচ্ছে। যেমন ২০১১ সালে পোশাক রপ্তানি জিডিপির ১৬.৭ শতাংশ ছিল, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছে।
টেকসইভাবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হতে বাংলাদেশকে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে বলে মনে করেন বিশ্ব ব্যাংক প্রতিনিধি।
ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “এজন্য বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য অর্থনীতির আরও বহুমুখী, প্রতিযোগিতামূলক আনুষ্ঠানিক বেসরকারি খাত প্রয়োজন।”
বাংলাদেশের বৈদেশিক বিনিয়োগ যে জিডিপির মাত্র ১ শতাংশ, সে তথ্য তুলে ধরে আব্দুলায়ে সেক বলেন, কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
“কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সমপর্যায়ের দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ কম। তাই বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য অর্থনৈতিক সংস্কারের উপর গুরুত্ব দিতে হবে “