তারল্য সহায়তার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক; একই সঙ্গে টাকা ধার দেওয়া ব্যাংককে ‘গ্যারান্টিও দিচ্ছে’।
Published : 19 Sep 2024, 04:59 PM
নগদ টাকা না থাকায় ক্ষমতার পালাবদলের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গ্রাহককে অর্থ দিতে না পারা পাঁচ ব্যাংকের সংকট আপাতত কাটছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন মেলায় অন্য ব্যাংক থেকে টাকা ধার পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে এসব ব্যাংকের।
তারল্য সংকটে থাকা এই পাঁচ ব্যাংককে সহায়তা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য টাকা ধার দেওয়া ব্যাংককে ‘গ্যারান্টি দিচ্ছে’ কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আপাতত তীব্র সংকটে পড়া পাঁচ ব্যাংককে প্রথম ধাপে তারল্য সহায়তা দেওয়া হলেও আবেদনের প্রেক্ষিতে বাকি ব্যাংকগুলোকেও তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দিতে অনুমিত দেওয়ার তথ্য জানিয়ে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পাঁচ ব্যাংক তারল্য সহায়তা পাবে। যেসব ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা চাওয়া হয়েছে সেগুলো সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে অর্থ দেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊধ্বর্তন আরেক কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে এ বিষয়ে চুক্তি সইয়ের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মতি জানিয়ে পাঁচ ব্যাংককে বৃহস্পতিবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকগুলো হল- বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকগুলো এতদিন এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সরকার পতনের পর এগুলোর পর্ষদ এস আলম মুক্ত করা হয়েছে। আগের পর্ষদ ভেঙে নতুনদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এসব ব্যাংকের বাইরে ইসলামী ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক তারল্য সংকটে রয়েছে। এ পর্যন্ত বিশেষ ধার চেয়ে আট ব্যাংক চিঠি দিয়েছে বলে কর্মকর্তারা বলেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা বলেন, নানা অনিয়মে ধুকতে থাকা এই পাঁচ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। কারণ এসব ব্যাংকে তীব্র তারল্য সংকট চলছে। আপাতত এসব ব্যাংক আন্তঃব্যাংক থেকে টাকা ধার পেলে গ্রাহকদের চাহিদা মোতাবেক টাকা দিতে পারবে। তাতে তারল্য কিছুটা সংকট কাটবে।
গত ৫ অগাস্ট সরকারের পালাবদলের পর ব্যাংকখাতে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে। এস আলমের এসব শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোকে আগের সরকারের সময়কার গভর্নরের বিশেষ সুবিধায় দেওয়া তারল্য সহায়তা বন্ধ করে দেন নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
এতে ব্যাংকগুলোতে তীব্র তারল্য সংকট তৈরি হয়। অন্য দিকে অনিয়মের মাধ্যমে এস আলমের বিপুল ঋণ নেওয়ার তথ্য সামনে এলে গ্রাহকরা এসব ব্যাংকে নতুন করে আমানত রাখতে দ্বিধায় পড়ে। এতে এসব ব্যাংকের গ্রাহকরা চাহিদা মোতাবেক নগদ টাকা তুলতে না পেরে বিপাকে পড়েন।
এরপর গভর্নর আহসান মনসুর এসব ব্যাংকের গ্রাহকরা যাতে টাকা তুলতে ও লেনদেন করতে পারেন সেজন্য আন্তঃব্যাংক থেকে টাকা ধার নেওয়ার নির্দেশনা দেন। এজন্য যেসব ব্যাংক টাকা ধার দেবে তাদের গ্যারান্টি দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারল্য সংকটের বিষয়টি সব ব্যাংকে নয়, কিছু কিছু ব্যাংকে সমস্যা আছে। রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে যাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল সেই সব ব্যাংকে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। বোর্ডের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে অনেক ঋণ দেওয়া হয়েছে। আসলে অলিগার্করা ব্যাংক ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই আমরা গভর্নরের সাথে পরামর্শ নিতে কাজ করছি এসব দুর্বল ব্যাংকে কীভাবে ঠিক করা যায়।”
তিনি বলেন, “আমানত নিয়ে আসার জন্যও চেষ্টাও করা হচ্ছে। কারণ দুর্নীতির কারণে এসব ব্যাংকে অনাস্থা তৈরি হয়েছে। আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, তাইলে আমানত আসবে। আমানত আসলে ব্যাংক ঘুড়ে দাঁড়াবে।”