আর দুদিন বাদেই রোজার ঈদ; মুসলমানদের সবেচেয়ে উৎসব। অন্য সব কেনাকাটার পর এখন মানুষের ভিড় বাড়ছে কাঁচা বাজারে। আর সেখানে গিয়ে মাংসের দাম দেখে অসন্তোষ ঝরছে ক্রেতাদের কণ্ঠে।
ঈদের দিনে সেমাইয়ের পাশাপাশি ভালো খাবারের আয়োজন থাকে সব পরিবারেই; আর সেই খাবারের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান গরু কিংবা মুরগির মাংস। তবে গরুর মাংস আগের চেয়ে কেজিতে ৫০ টাকাও বেশি দেখা গেছে, বাড়তি ছিল মুরগির দামও।
ঢাকার মিরপুরের কাজীপাড়ার বাসিন্দা ব্যাংকার রাজু আহম্মেদ বৃহস্পতিবার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে হাজির হয়েছিলেন গরুর মাংস কিনতে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল দেখে গেছি উনি (বিক্রেতা) কিছু গরু নিয়ে এসেছেন। গরুগুলো সুন্দর, তাই তিন কেজি কেনার জন্য এসেছি। কিন্তু আমার কাছে গরুর দামের চেয়ে মাংসের দাম আনুপাতিক হারে বেশি মনে হচ্ছে। আমি গরুর বাজারের একটু আধটু খবর রাখি। আমার হিসাবে কি না পড়ে ৬৮০ টাকা।”
তার কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে উঠলেন মাংস বিক্রেতা মো. শাহীন। তিনি বললেন, “৭২০-৭৩০ টাকা কি না, একটা গরুতে সর্বোচ্চ ২০-৩০ টাকা লাভ হয়। আর আপনি বলতেছেন ৬৮০ টাকা কি না পড়ে! আমরা কিনি, আমরা বুঝি, লস টানতে টানতে জীবন শেষ।”
কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার এই দোকানের মালিক মো. সোহাগ তাদের থামিয়ে দিয়ে বলেন, “আজকে সকাল থেকে তিনটা গরু কাটছি। দুপুরে আরেকটা কাটলাম। আজকে সারাদিনই রেইট ৭৮০ টাকা।”
রোজার মধ্যে দুদিন আগেও বাজারে গরুর মাংসের দাম ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে ছিল। ঈদের আগে বৃহস্পতিবার মালিবাগ, মগবাজার ও মোহাম্মদপুরের কিছু বাজারে ৮০০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি হতে দেখো গেছে।
ঈদ উপলক্ষে হাটে গরুর দাম বাড়ায় মাংসের দামও বাড়াতে হয়েছে বলে দাবি করছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারা বলছেন, চাহিদা বেশি দেখে সুযোগ নিচ্ছে বিক্রেতারা।
চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তা দামে প্রভাব ফেলে, অর্থনীতির এই সূত্র না জানলেও চাহিদা বেড়ে যাওয়াকে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন বিক্রেতারা।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি মাংস বিক্রেতা জাহাঙ্গীর বলেন, “যার ঘরে গরু আছে সে ঈদ উপলক্ষে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি ছাড়া বিক্রি করছে না৷ আমাদের কেনাই এখন ৭০০ টাকা কেজির বেশি হয়ে যাচ্ছে। এই কারণে আজকে আমরা গরু বিক্রি করেছি ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায়।”
“লসে তো আর ব্যবসা করব, তবে দাম খুব বাড়াই নাই,” বলেন তিনি।
এই লাভ-ক্ষতির হিসাব কষাকষিতে পিষ্ট হওয়ার কথা জানান কারওয়ান বাজারে গরুর মাংস কিনতে আসা আহমেদ ফয়সাল।
তিনি বলেন, “আমি ভোক্তা, আমি এতকিছু কেন বুঝব, ভাববো। আমার মাথায় থাকবে আমার আয় কত। এর সাথে বাজারে দাম ঠিক আছে কি না। আয়ের সাথে তো দামের বিশাল ফারাক।
“সংসারই চালাই কষ্ট করে, ঈদেও যে একটু ভাল-মন্দ সাশ্রয়ে কিনবো সেই সুযোগ এই দেশে নাই।”
দামের দিক থেকে গরুর মতোই অবস্থা ছাগলের। কাজীপাড়ার বাজারে খাসির মাংসের দাম দেখে নীলিমা আক্তারের মুখই মলিন হয়ে গেল।
ঈদের দিনে মেয়ের জামাই আসবে বাড়িতে, তাই ভালো খাবারের আয়োজনে খাসির মাংস রাখতে চাইছিলেন তিনি।
নীলিমা বলেন, “রোজার মাঝেও ১১০০ টাকা কেজি নিলাম। এখন চাচ্ছে ১২০০ টাকা কেজি। এক লাফে কেজিতে ১০০ টাকা বাড়তি! এটা তো অমানবিক। সামাজিকতা রক্ষার জন্য কিনতেছি, নইলে এত দামে কখনোই কিনতাম না।”
কয়েক দিনের ব্যবধানে এক লাফে ১০০ টাকা বেড়ে গেল তা নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা দিতে রাজি না খুচরা বিক্রেতারা। তাদের একটাই যুক্তি- ‘কেনা বেশি পড়েছে’।
নীলিমা ১২০০ টাকায় কিনতে পারলেও মালিবাগ, বাসাবোর বাজারে ক্রেতাদের খাসি কিনতে কেজিপ্রতি গুণতে হছে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত। তবে পাইকারি বাজারে খাসি ১১২০ থেকে ১১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বকরি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা কেজিদরে।
চতুষ্পদী আমিষের উৎসের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে দ্বিপদীদেরও। বাজারভেদে হুট করেই ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে ব্রয়লার, লেয়ার, সোনালী, দেশি সব ধরনের মুরগির।
কাজীপাড়া, মালিবাগ, মহাখালী কাঁচাবাজারের মতো খুচরা বাজারগুলোতে এদিন ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা কেজিদরে, লেয়ার ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকায় আর সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা কেজিদরে।
বিক্রেতারা বলছেন, ঈদে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম।
সবজিতে স্বস্তি
ঈদে মানুষ ঢাকা ছাড়ায় চাপ কমেছে সবজি বাজারে, এর প্রভাবে দামও কমেছে।
মিরপুরের সবজি বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, “সালাদের আইটেম শসা লেবু টমেটো ছাড়া সব সবজির দাম কইমা গেছে। খাইবো কে, মানুষ তো সব বাইত গেছে।”
সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, দুই দিন আগে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া শসার কেজি ১০০ টাকায় উঠেছে। ভালো মানের লেবুর হালি ৫০ টাকা।
৫ থেকে ১০ টাকা দাম কমেছে লাউ, ঢেঁড়স, বেগুন, চিচিঙ্গা, কচুর লতি, বরবটি, পটল, করলা ও কাঁচামরিচের।
কারওয়ানবাজারের সবজির আড়তদাররা জানান, ঈদে চাহিদা কম থাকায় সবজির দাম মোকামগুলোতেই কমতে শুরু করেছে। তবে সালাদের আইটেমের দাম একটু বাড়তি থাকার কথা জানাচ্ছেন তারা।
বাজারের আগের মতোই বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে চাল, আটা, চিনি, ভোজ্যতেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য।