তিনি বলেছেন, বাজেট যেন মানুষের কল্যাণে আসে, সেই চেষ্টাই তিনি করছেন।
Published : 06 Jun 2024, 01:13 PM
অর্থ সংস্থানের চাপে বিগত বছরগুলোতে জিডিপির অনুপাতে বড় ঘাটতির বাজেট দেওয়ার যে ধারা তৈরি হয়েছিল, এবার তাতে যতি টেনে বাজেটকে ব্যাকরণে ফেরাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে মোটামুটি ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট তিনি প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন, তাতে ঘাটতির পরিমাণ থাকছে জিডিপির ৪.৫ শতাংশ।
অথচ ২০১৩-১৪ অর্থবছরের পর থেকে ঘাটতি সবসময়ই জিডিপির ৪ দশমিক ৯ শতাংশের বেশি ছিল। মহামারীর মধ্যে তা ৬ শতাংশেও উঠেছিল।
ছকে ফেলে প্রতি বছর বাজেট বাড়ানোর যে ধারা, সেখান থেকে সরে এসে মাহমুদ আলী এবার সরকারের খরচের ফর্দ সাজিয়েছেন কিছুটা সংযত হাতে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বৃহস্পতিবার দুপুরে অর্থমন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও যাতে মানুষের কল্যাণে একটা বাজেট দেওয়া যায়। যতদূর সম্ভব আমরা কমিয়ে দিয়েছি, কারণ বাজেটে অকারণে অর্থ বৃদ্ধি করে লাভ হবে না। সেটার প্রস্তুতিই এখন চলছে যা কিছুক্ষণ পর আপনারা দেখতে পাবেন।”
স্বল্প সময়ের জন্য অর্থনীতির শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করা আবুল হাসান মাহমুদ আলী জীবনের বড় অংশ কাটিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশের পক্ষে দূতিয়ালী করে। সাফল্যের সঙ্গে পররাষ্ট্র ক্যাডারের চাকরি শেষ করে রাজনীতিতে আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্বই দিয়েছিলেন।
সেই পর্ব শেষে করে মাঝে পাঁচ বছরের বিরতি। ঝুলিতে ৮১ বছরের অভিজ্ঞতার সঞ্চয় নিয়ে এবার তাকে সামলাতে হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। প্রথম বাজেটে প্রায় আট লাখ কোটি টাকা খরচের হিসাব মেলাতে গিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই অফিস আর বাসায় তার ব্যস্ত সময় যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদ শুরুর আগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল পাঁচটি এবং আরেক সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ১০টি বাজেট উত্থাপন করেছিলেন। আবুল হাসান মাহমুদ আলী যখন বাংলাদেশের ৫৪তম বাজেট দিতে যাচ্ছেন, সময়টা তখন খুব বেশি অনুকূল নয়।
মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, টাকার দরপতনসহ বেশ কিছু সমস্যায় জর্জরিত অর্থনীতিতে আইএমএফের বিভিন্ন সংস্কারমূলক পরামর্শ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কঠিন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে উত্তরণের পর্ব পাড়ি দিতে চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখা মাহমুদ আলী ১৯৬৪ সালে কিছুদিনের জন্য নিজের বিভাগে শিক্ষকতা করেছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি যোগ দেন পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে। দুই বছরের মাথায় তাকে নিউ ইয়র্কে ভাইস কনস্যুল হিসাবে পদায়ন করা হয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মাহমুদ আলী পাকিস্তানের আনুগত্য ত্যাগ করে জাতিসংঘে মুজিবনগর অস্থায়ী সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে নিযুক্ত হন। সেখানে স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
স্বাধীনতার পরেও বাংলাদেশ নয়া দিল্লি ও নিউ ইয়র্ক, বেইজিং, জার্মানি, নেপাল, যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এই পেশাদার কূটনীতিক।
২০০১ সালে অবসরে যাওয়ার পর ২০০৮ সাল থেকে সংসদ সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন মাহমুদ আলী। কিছুদিন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের পর তাকে দেওয়া হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এবার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বের সঙ্গে পেয়েছেন কঠিন সব চ্যালেঞ্জ। সেসব চ্যালেঞ্জ সামলাতে দেশের প্রথম নারী অর্থ প্রতিমন্ত্রী, সাবেক ব্যাংকার ওয়াসিকা আয়শা খানকে তিনি সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন।
সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে বাজেট নিয়ে আলাপকালে অর্থমন্ত্রী বলেন, “চ্যালেঞ্জ তো আছেই। মূল্যস্ফীতি আছে, রিজার্ভ, রাজস্ব আয়, ডলারের মূল্য, এরকম আরও অনেক। এখন ঋণ খেলাপিদের ধরতে হবে। আমি তো ধরতে চাই।”