এক বছরে বেড়েছে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি, যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের।
Published : 26 Feb 2025, 09:14 PM
দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণে ঊর্ধ্বগতির মধ্যে সবশেষ তিন মাসে আগের প্রান্তিকের চেয়ে ৬০ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা বেড়ে সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে। আর এক বছরে মন্দ ঋণের হিসাবে যুক্ত হয়েছে আরও ২ লাখ ১৩২ কোটি টাকা; ছয় মাসে বেড়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা।
হালনাগাদ তথ্য বলছে, ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সংবাদ সম্মেলনে দেশের ইতিহাসে প্রথমাবারের মত খেলাপি ঋণ তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়ানোর তথ্য প্রকাশ করেন। রেকর্ড এ ঋণ আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এ সংবাদ সম্মেলন তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ আগের চেয়ে বাড়বে। কারণ নিয়মে ১৮০ দিনের পরিবর্তে ৯০ দিন করা হয়েছে। বিভিন্ন কারণে আগে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম করে দেখানো হত, যেটা আগে ৯ শতাংশ করে দেখানো হত।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি হওয়ার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, "এটা ছাড়াও আমাদের ব্যাংকিং খাত নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। আমানত পর্যাপ্ত পরিমাণ বাড়ছে না। জনগণের আস্থা ব্যাংকিং খাতের ওপর ফিরিয়ে আনতে হবে। ব্যালেন্স অব পেমেন্ট, রিজার্ভের পরিমাণ বাড়াতে পারলে সার্বিক অবস্থার আরও উন্নতি হবে।“
২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসের সবশেষ খেলাপি ঋণের তথ্য দিয়ে গভর্নর বলেন, ডিসেম্বর শেষে মোট বিতরণ করা ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা (মোট ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ)।
আগের প্রান্তিকের চেয়ে প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা ছিল ওই সময়ের মোট ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ ছিল।
এ হিসাবে ওই বছর জুলাই-সেপ্টেম্বরের চেয়ে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৭ কোটি বা ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়েছে।
অপরদিকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে মোট খেলাপি ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে অর্থাৎ এক বছরের মধ্যে ২ লাখ ১৩২ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে। শতকরা হারে এ সময়ে বেড়েছে ১৩৭ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৪২ দশমিক ৮৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বর শেষে যা ছিল ৪০ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
আওয়ামী লীগ সরকার গত ৫ অগাস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ব্যাংকিং খাতে সংস্কার শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের সময় কমিয়ে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগের মত বড় ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ পুনতফশিলের সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে খেলাপি খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।
সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা ছুঁইছুঁই খেলাপি ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, আসলে খেলাপি ঋণ আগের থেকেই বেশি ছিল। আগের সরকারের আমলে তা কমিয়ে দেখানো হত।
”এছাড়া আগে খেলাপিদের নানা রকমের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যে ঋণ খেলাপি হওয়েছে সেটা খেলাপি হিসাবে দেখানো হয়নি। এখন আবার খেলাপি ঋণের সময় কমিয়ে আনা হয়েছে। সামনে আরও কমানো হবে। তাই খেলাপি ঋণ বাড়বে। তবে ব্যাংকের আসল চিত্র এমনই ছিল, যা এখন প্রকাশ হচ্ছে।"
জুলাই-সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ বাড়ল ৭৪ হাজার কোটি টাকা
মুদ্রানীতি: খেলাপি ঋণ ৩০% ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বাংলাদেশ ব্যাংক
শীর্ষ খেলাপি এখন বেক্সিমকো, এস আলম: ৫ ব্যাংকে ১০ গ্রুপেরই ৫২০০০ কোটি আটকে