অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করলে হুন্ডি কমানো যেত; এতে রেমিটেন্স বেশি এলে বাড়ত রিজার্ভও।
Published : 20 Oct 2023, 01:35 AM
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে থাকা বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে এক যুগের বেশি সময় ফুরফুরে থাকা বাংলাদেশ এখন গভীর উদ্বেগে। বৈদেশিক মুদ্রাভাণ্ডারের পতন কীভাবে ঠেকানো যাবে, চলছে সে কৌশলের সন্ধান। কিন্তু আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাতে কাঙ্ক্ষিত ফল আসছে না। অর্থনীতিবিদরা যে ‘সমাধানের’ কথা বলছেন, সে পথেও হাঁটছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বেশ কিছু দিন থেকে বিদেশি মুদ্রা আয়ের খাতের তুলনায় ব্যয়ের খাত বেশি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যে পরিমাণ ঘাটতি হচ্ছে, সরকারি হিসাবে প্রবাসী আয় এর চেয়ে বেশি আসতে পারত। কিন্তু সেই অর্থ আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের বদলে আসছে অবৈধ পথে, যা হুন্ডি হিসেবেই পরিচিত। একই পথে দেশ থেকে বড় অঙ্কের অর্থপাচারও হচ্ছে, যা চাপে ফেলেছে রিজার্ভকে।
এসব নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও হুন্ডি ঠেকাতে কার্যকর কোনো পথ বের করা যায়নি। প্রবাসীদের স্বজনরা টাকা পাচ্ছেন ঠিকই; কিন্তু যে অর্থ রিজার্ভকে নিরাপদে রাখতে পারত, তা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ একই মত দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার মান ‘কৃত্রিমভাবে ধরে রাখতে গিয়ে’ এ সমস্যায় পড়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের সঙ্গে সমঝোতাও আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। কিন্তু বিনিময়হার বাজারভিত্তিক করা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদা ডলারের দর নির্ধারণ করে দিচ্ছে। সময়ে সময়ে তাদের নির্ধারণ করে দেওয়া দর অনুযায়ী বিনিময় হার বারবার পাল্টাচ্ছে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিনিময় হার এতটা দোদুল্যমান হলে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠাতে পারবে না। তেমনি বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও ভয়ে থাকবেন।”
গত দেড় বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে ২০ শতাংশের বেশি অবমূল্যায়ন করা হয়েছে টাকার। কিন্তু খোলা বাজারের সঙ্গে এখনও ব্যাংকিং চ্যানেলে পার্থক্য ৭ থেকে ৮ শতাংশ। সরকারি চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠালে সরকার প্রণোদনা দেয় আড়াই শতাংশ। ফলে প্রবাসীরা হুন্ডিতে অর্থ পাঠালে ৫ শতাংশ বা এর চেয়ে বেশি অর্থ পায় পরিবার।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম যাদের সঙ্গে কথা বলেছে, তাদের একজন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, একজন ছিলেন বিশ্ব বাংকের বাংলাদেশ অফিসের অর্থনীতিবিদ এবং একজন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান।
তাদের মত হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থনীতির ‘মূল সূত্র ধরে’ সমস্যা সমাধানের পথে হাঁটছে না। এ কারণে সঙ্কুচিত হচ্ছে বিদেশি মুদ্রা আয়ের পথ।
তারা বলছেন, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যত দেরি হবে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তত সময় লাগবে।
রিজার্ভ কমছে কত?
কোভিড মহামারীর মধ্যে ২০২১ সালের অগাস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। সেসময় সরকার ৫০ বিলিয়নের রেকর্ডের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু সংক্রমণ কমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকলে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা আবার ঘুরতে শুরু করে। তখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও খাদ্যমূল্য বেড়ে যায়, জাহাজ ভাড়া হয়ে যায় কয়েক গুণ। চাহিদার বাড়ায় বেশি পরিমাণ আমদানি করতে গিয়ে ব্যয় বাড়ে অনেক।
তখন থেকেই কমতে থাকে রিজার্ভ। এর মধ্যেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষে ইউক্রেইনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। আরও চড়তে থাকে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম। অন্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও ডলারের টান পড়ে। দেশে দেশে পতন হতে থাকে রিজার্ভের। যুক্তরাষ্ট্র মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে গিয়ে বাড়াতে থাকে সুদের হার। ফলে ডলার হতে থাকে শক্তিশালী।
বাণিজ্য ঘাটতির পাশাপাশি রেমিটেন্স ও বিনিয়োগ কমায় চলতি হিসাব ভারসাম্যে ব্যাপক ফারাকের কারণে সংকট তৈরি হতে থাকে ডলারের। এসব কারণে দুই বছরের কিছু বেশি সময়ে বাংলাদেশের রিজার্ভ প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার কমে এখন দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলারে। আইএমএফ এর বিপিএম৬ পদ্ধতিতে গ্রস হিসাবে তা ২১ বিলিয়ন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর শেষে রিজার্ভের স্থিতি ছিল ২১ বিলিয়ন ডলার।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যয় সাশ্রয়ের সরকারি পদক্ষেপের পরও প্রতি মাসে রিজার্ভের ক্ষয় হচ্ছে মোটামুটি এক বিলিয়ন ডলার। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনও দিনে মোটামুটি ৩০ থেকে ৩৫ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করে যাচ্ছে। অর্থাৎ রিজার্ভকে আবার ঊর্ধ্বমুখী করতে হলে মাসে এই এক বিলিয়ন ডলারের ঘাটতির চেয়ে বেশি আয় বাড়াতে হবে বাংলাদেশকে।
এমন অবস্থায় আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার আলোচনা শুরু করে বাংলাদেশ। নানা শর্ত পূরণের সমঝোতা করে ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার নিশ্চয়তা পায় বাংলাদেশ। গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার ছাড় হয়।
তবে রিজার্ভ নিয়ে ঋণদাতা সংস্থাটির শর্ত পূরণ করা যায়নি। সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার নিট রিজার্ভ রাখার শর্তে এখন ছাড় চেয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে ঢাকা সফররত আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনার বিষয়ে বলা হয়েছে। এতে রাজিও হয়েছে সংস্থাটি বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে।
বৃহস্পতিবার আইএমএফের সঙ্গে কর্মকর্তা পর্যায়ের সমাপনী বৈঠকের পর ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে প্রথম কিস্তির অর্থের ব্যবহার দেখতে আসা রিভিউ মিশন।
এখন আইএমএফ বোর্ডের অনুমোদন পেলে দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পাবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "আজ আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় আমাদের সঙ্গে তাদের এগ্রিমেন্ট হয়েছে। আশা করছি আগামী ডিসেম্বরে আইএমএফ বোর্ড মিটিং তা অনুমোদন করবে।"
পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, বিনিময়হার বাজারভিত্তিক করাসহ আর্থিক খাতের অন্যান্য শর্ত পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বড় দুশ্চিন্তা রেমিটেন্স
বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত রপ্তানি ও রেমিটেন্স। এর বাইরে বিদেশি ঋণ ও অনুদানও বড় ভূমিকা রাখে। তবে গত দুই বছরে টাকার দরপতনের কারণে বিশেষ করে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ গ্রহণ কমেছে, পরিশোধ হয়েছে বেশি। এটাও তৈরি করেছে চাপ।
উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে যে ঋণ সরকার নিয়েছে, সেগুলোও পরিশোধ করা শুরু হয়েছে। কঠিন এই সময়ে ওই কিস্তি আরও চাপ হয়ে দেখা দিচ্ছে।
সুখবর হল, চ্যালেঞ্জের মধ্যেও রপ্তানি আয় বাড়ছে। সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। অর্থবছরের তিন মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশের কাছাকাছি। এ তিন মাসে রপ্তানি আয় এসেছে ১৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
তবে প্রবাসী শ্রমিকের সংখ্যা মাসে মাসে বাড়লেও রেমিটেন্সে দুই মাসে বড় ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ। গত অগাস্টে ২১ শতাংশের পর সেপ্টেম্বরে রেমিটেন্স কমেছে ১৩ শতাংশ।
এর মধ্যে ব্যাংকগুলোকে বাড়তি দরে রেমিটেন্স সংগ্রহের অনুমোদন দেওয়ার খবর এসেছে। এমন ‘ছাড়ের’ পর অক্টোবরে রেমিটেন্স প্রবাহও কিছুটা বাড়ছে বলে খবর আসছে। প্রথম ১৩ দিনে রেমিটেন্স এসেছে প্রায় ৮০ কোটি ডলার।
ভরসা রেমিটেন্সেই?
অর্থনীতিবিদদের ধারণা, প্রতি মাসে রিজার্ভের যে ক্ষয় হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসছে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেল ও হুন্ডিতে। কারণ হিসেবে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে ডলারের বিনিময় হারের পার্থক্যের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছেন তারা।
২০০২ সালের জুলাইয়ে দেশে ব্যাংকে ও খোলাবাজারে ডলারের বিনিময় হারে পার্থক্য ছিল ২ শতাংশ। কিন্তু আমদানিতে এলসি মার্জিন ১০০ শতাংশ আরোপের এক মাসের মধ্যেই বিনিময় হারের পার্থক্য বেড়ে হয় ১২ শতাংশ। এ পার্থক্যের প্রভাব পড়ে প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানোতে; সবাই পা বাড়ায় হুন্ডির দিকে।
২০২১ সালে ৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের সময় ডলারের বিপরীতে টাকার মান ছিল ৮৫ টাকা ২০ পয়সা। এখন ব্যাংকে ১১২ টাকা, খোলা বাজারে তা ১২০ টাকায় উঠেছে।
২০২২ সালের ৩ অগাস্ট সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “অনেক আগে প্ল্যানিংয়ে (পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়) থাকতে একটা স্টাডি করেছিলাম। তখন দেখেছি অফিসিয়াল চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসত ৫১ শতাংশ আর হুন্ডিতে (অবৈধ চ্যানেলে) আসত ৪৯ শতাংশ। আমি মনে করি সেই ধারাবাহিকতা এখনও আছে।”
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর একটি গবেষণাতেও হুন্ডির বিষয়টি উঠে এসেছে। ‘ইন দ্য করিডর অব রেমিটেন্স: কস্ট অ্যান্ড ইউজ অব রেমিটেন্স ইন বাংলাদেশ’ নামের প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রবাসীরা দেশে পাঠান ১ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। তাদের বিবেচনায় আরও ৪৩০ কোটি থেকে ৫৭০ কোটি ডলার এসেছিল অবৈধ পথে।
বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, মাসে বাড়তি এক বিলিয়ন ডলার আসতে পারে রেমিটেন্স থেকেই।
বাংলাদেশে ডলারের দর নির্ধারণের পদ্ধতিকে ‘প্রশাসনিক পদক্ষেপ’ আখ্যা দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক আগে যেভাবে প্রয়োজন অনুযায়ী ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ করত, তখন তো খোলা বাজারের সঙ্গে দরের এত পার্থক্য ছিল না। এখন পার্থক্য ৯ টাকাতেও চলে গেছে। আর পার্থক্য যখনই বেড়েছে, ওই সময়গুলোতে রেমিটেন্স সবচেয়ে বেশি কমেছে।”
এতে প্রবাসীরা হুন্ডিতে উৎসাহিত হন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “পার্থক্য কম হলে ঝুঁকি নিতে চাইবেন না তারা। এতে অর্থপাচারও কমে আসবে।’’
রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখতও মনে করেন, সমাধান ওখানেই।
আমদানি নিয়ন্ত্রণের কৌশলে অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি সঙ্কুচিত হয়ে যায় জানিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রিজার্ভ বাড়াতে যোগান বাড়াতে হবে। রেমিটেন্স বৃদ্ধি করতে হবে। হুন্ডি বন্ধে প্রশাসনিক উদ্যোগে যেতে হবে। আমাদের চেয়ে প্রায় সব সূচকে পিছিয়ে থাকা পাকিস্তানও রেমিটেন্স প্রবাহ ধরে রাখতে পেরেছে এভাবে।”
খোলা বাজারের সঙ্গে ব্যাংকে ডলারের দরে ৭ থেকে ৮ টাকা পার্থক্যটা ‘অনেক বেশি’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এখন আরেকটু সমন্বয় করা দরকার।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খোলা বাজারের সঙ্গে এত বেশি ব্যবধান হুন্ডিকে উৎসাহিত করে।’’
তিনি বলেন, “প্রবাসীরা যাতে ব্যাংকিং চ্যানেলে যৌক্তিক দরে রেমিটেন্স পাঠাতে পারে তার নিশ্চয়তা দিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। হুন্ডি ও অর্থপাচার বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের শক্ত পদক্ষেপে না গেলে হবে না। যতগুলো টুলস আছে তার সবগুলোই প্রয়োগ করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকে।’’
সামনে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিতে এক ধরনের ‘অনিশ্চয়তা রয়েছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বিদেশি বিনিয়োগের চেয়ে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ানোটা সহজ।”
কীভাবে বন্ধ করা যাবে হুন্ডি?
জায়েদ বখত বলেন, “হুন্ডি ধরাটা এখন সহজ। রেমিটেন্স কিন্তু সব জেলায় যায় না। যেসব জেলায় বেশি অর্থ যায়, তাদের এমএফএস (মোবাইল ফোনভিত্তিক আর্থিক সেবাদানকারী কোম্পানি) হিসাবগুলো দেখলেই বোঝা যায়। এসব বন্ধ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডেটা নিয়ে কাজ করতে পারে।
“প্রবাসীরা ডলার না পাঠালেও তাদের পরিবার কিন্তু টাকা ঠিকই পাচ্ছে। মোবাইল হিসাব বা ব্যাংকের মাধ্যমে পেয়ে যাচ্ছে। এই তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক যাচাই করে দেখতে পারে। তাহলেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।”
হুন্ডি বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে টাক্সফোর্স রয়েছে। সেই হিসাবে হুন্ডি বন্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়াটা বাংলাদেশ ব্যাংকের উপর বর্তায়।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে তৎপরতা খুব একটা দেখা যায়নি কখনও। জায়েদ বখত বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক হয়ত মনে করছে রিজার্ভের পতন ঠেকাতে এ উপায় ঠিক কাজ করবে না। কিন্তু প্রশাসনিক পদক্ষেপে না গেলে হুন্ডি বন্ধ সম্ভব না। এটি বন্ধ করা কোনো রকেট সায়েন্স না। সব লেনদেনের তথ্য ব্যাংক ও এমএফএস হিসাবে রয়েছে।’’
রিজার্ভের পতন ঠেকাতে ২০২২ সালের জুলাই থেকে আমদানি নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ির উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি আমদানির আড়ালে অর্থপাচার প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ যোগ হয়েছে রপ্তানির আড়ালে অর্থপাচার রোধের বিষয়টি দেখা। কিন্তু এতে দৃশ্যমান সাফল্য নেই।