“এ কথা অনস্বীকার্য যে দীর্ঘমেয়াদে এ পন্থা অবলম্বন করা হলে প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে যেতে পারে: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ তুলে ধরে সংসদে বলেন তিনি।
Published : 29 Jun 2024, 10:43 PM
মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে যেসব সংকোচনমূলক নীতি গ্রহণ করা হয়েছে তাতে প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে যেতে পারে বলে সংসদকে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে ধারাবাহিক উচ্চ প্রবৃদ্ধির বিষয়টি যে জরুরি, তা উল্লেখ করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য ‘আপাত বিপরীতমুখী লক্ষ্যের’ মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার কঠিন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
শনিবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনার সমাপনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন বলেও অর্থমন্ত্রী।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মুদ্রানীতিতে সংকোচনমূলক নানা পদক্ষেপ নীতি সুদহার (রেপো) বাড়িয়ে ৮.৫ শতাংশে উন্নীত করা, ব্যাংক সুদের হার বাজারভিত্তিক করা, রপ্তানিতে উৎসাহ ও প্রবাস আয়ে গতি আনার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে ডলারের বিনিময় হারের ক্ষেত্রে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি প্রবর্তনের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “বাজেট ঘাটতি হ্রাসকরণ, কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় নিরুৎসাহিতকরণ এবং বিভিন্ন খাতে কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্যোগ, আমাদের গৃহীত এসব নীতি-কৌশলের ফলে আশা করছি আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নেমে আসবে।”
তবে মূল্যস্ফীতি কমলেও প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখা নিয়ে সংশয়ে মাহমুদ আলী। বলেন, “এ কথা অনস্বীকার্য যে দীর্ঘমেয়াদে এ পন্থা অবলম্বন করা হলে প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে যেতে পারে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের প্রয়োজন ধারাবাহিক উচ্চ প্রবৃদ্ধি।”
গত দেড় দশকে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ৬.৭ শতাংশের বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, “জিডিপির মানদণ্ডে ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৩ তম বৃহৎ অর্থনীতি।”
আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬.৭৫ শতাংশে এবং মধ্যমেয়াদে ৭.২৫ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা করেন তিনি।
দেশে শিল্পায়ন ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য কাঙ্ক্ষিত অনুকূল ও সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলেও দাবি করেন মন্ত্রী। এর সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যের কথাও বলেন তিনি।
২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ মাথাপিছু আয় কমপক্ষে ১২ হাজার ৫০০ ডলার হবে দাবি করে তিনি বলেন, “চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে শূন্যের কোটায় এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে ৩ শতাংশেরও কম মানুষ।”
শিক্ষা-স্বাস্থ্যে ‘বরাদ্দ বৃদ্ধি’
এবারের বাজেটে এই দুটি খাতে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও জানান অর্থমন্ত্রী।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির হার ১১.৬ শতাংশ জানিয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য খাতে বাড়ানো হয়েছে ৩৯ শতাংশ।
“প্রস্তাবিত বাজেটে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইত্যাদি খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদানের চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপর আমরা যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করেছি।”
উন্নয়নের গতিকে টেকসই করতে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর উপর জোর দেওয়ার কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “আমরা কর অব্যাহতি কমিয়ে আনা, কর আহরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা কৌশল অবলম্বন করেছি।
“২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা হতে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ের বাস্তবতা মাথায় রেখে জাতীয় শুল্কনীতি সংস্কারের কথাও জানান অর্থমন্ত্রী। বলেন, “আমদানি শুল্কের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনা হচ্ছে যাতে তা রপ্তানি বিমুখতা কমাতে সাহায্য করে।”
কর রাজস্ব আহরণে গতি বৃদ্ধি এবং কর প্রশাসনকে আরো জনবান্ধব ও কার্যকর করতে আইনি কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন, রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমকে অটোমেশনের আওতায় আনার কথাও তুলে ধরেন মাহমুদ আলী।
তিনি বলেন, “কর রাজস্বের ন্যায় কর-বহির্ভূত রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ানোর উপরও আমরা নজর দিয়েছি।
“সকল কর-বহির্ভূত রাজস্ব (এনটিআর) আইটেমের ফি, চার্জ বা মূল্য এবং তা নির্ধারণের তারিখসহ একটি অনলাইন ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। ফলে কর বহির্ভূত রাজস্বের অন্তর্ভুক্ত সকল সেবা ও তার জন্য চার্জ বা ফি যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করার পাশাপাশি কর বহির্ভূত রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।”