সুদহার বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭ শতাংশ; বিদেশে ব্যয় করতে পারবেন হিসাবধারীর ওপর নির্ভরশীল স্বজনরাও।
Published : 03 Dec 2023, 09:19 PM
এখন থেকে ডলারের পাশাপাশি বিদেশ থেকে ফেরত আসার সময় সঙ্গে আনা আরও আট ধরনের বিদেশি মুদ্রায় ‘বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব’ খোলা যাবে। হিসাবধারীদের সঞ্চয়ের বিপরীতে সুদও দেওয়া হবে।
রোববার দেশে বসবাসকারীদের খোলা ‘বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব’ (রেসিডেন্ট ফরেইন কারেন্সি ডিপোজিট-আরএফএসডি) এ এসব সুবিধা যোগ করে সার্কুলার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আরএফএসডি হিসাবধারীদের উপর নির্ভরশীল স্বজনরা এ হিসাবের বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে নিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন।
একই সঙ্গে এ হিসাবে অনন্ত এক মাস সঞ্চয় রাখা অর্থের বিপরীতে প্রতি মাসের বৈদেশিক মুদ্রার বেঞ্চমার্ক সুদহারের সঙ্গে সর্বোচ্চ এক দশমিক ৫০ শতাংশ সুদ দিতে পারবে ব্যাংক।
বর্তমানে ডলারের এসওএফআর (সোফর) বেঞ্চমার্ক সুদহার পাঁচ দশমিক ৩ শতাংশ।
এতে করে মাস শেষে হিসাবধারীরা প্রায় ৭ শতাংশ সুদ পাবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারি মুখপাত্র ও পরিচালক সরোয়ার হোসেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, এতদিন বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবের বিপরীতে ইউরো বেঞ্চমার্ক সুদহার দেওয়ার সুযোগ ছিল। এখন থেকে প্রতিটি মুদ্রার নিজস্ব বেঞ্চমার্ক সুদহার অনুযায়ী সুদ দিতে হবে ব্যাংকগুলোকে।
বর্তমানে ইউরো এর বেঞ্চমার্ক ইউরিবর সুদহার ৪ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বেঞ্চমার্ক সোফর অনুযায়ী সুদহার দাঁড়িয়েছে গত নভেম্বর শেষে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে ছয় দশমিক ৮ শতাংশ সুদ পাওয়া যাবে।
একইভাবে অন্যান্য মুদ্রার বেঞ্চমার্ক সুদহার ইউরোর তুলনায় বেশি হওয়ায় তাদের বিপরীতেও প্রায় সাত শতাংশ সুদ পাবেন হিসাবধারীরা।
অন্যদিকে ডলার ছাড়াও আরও আট ধরনের বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খোলার সুযোগ খুলে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতদিন শুধু দেশে থাকা বাংলাদেশিরা বিদেশ থেকে ভ্রমণ শেষে এবং প্রবাসীরা দেশে ফেরার পর সঙ্গে আনা মার্কিন ডলার রাখতে হিসাব খুলতে পারতেন ব্যাংকে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইউরো, পাউন্ড, জাপানি ইয়েন, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, কানাডিয়ান ডলার, সুইস ফ্রাঙ্ক, চাইনিজ মুদ্রা ইউয়ান ও সিঙ্গাপুর ডলার রাখতে হিসাব খোলা যাবে।
রোববারের সার্কুলারে এ হিসাব থেকে হিসাবধারীর এবং তার উপর নির্ভরশীলদেরও প্রয়োজনে বিদেশে কয়েকটি খাতে অর্থ খরচের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে ভ্রমণ, সন্তানের শিক্ষা এবং চিকিৎসা খাতে খরচ। এসব খাতে খরচের কোনো সীমা রাখেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
নির্ভরশীলদের খরচ যোগাতে তাদের বিপরীতে সর্বোচ্চ দুটি সম্পূরক ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড ইস্যু করার সুযোগ চালু করতে পারবে।
এতদিন শুধু হিসাবধারীরা নিজ প্রয়োজনে বিদেশে অর্থ নেওয়ার পাশাপাশি খরচ করতে পারতেন। এখন তার উপর নির্ভরশীদেরও এ হিসাব থেকে কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করার সুযোগ খুললো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি অনুযায়ী, বিদেশ থেকে যেকোনো পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে নিয়ে আসতে পারেন বাংলাদেশিরা। এক্ষেত্রে বন্দরে এসে একটি নির্দিষ্ট ফরমে ঘোষণা দিতে হয়। ঘোষণার স্বপক্ষে অর্থের উৎসের প্রমাণাদি দিতে হয়।
কোনো ব্যক্তি ঘোষণা ছাড়া সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আনতে পারেন। সঙ্গে আনা এ মুদ্রা যেকোনো ব্যাংকে হিসাব খুলে রাখা যায়। আবার প্রয়োজনে এ হিসাব থেকে বৈদেশিক মুদ্রা পুনরায় বিদেশে নিয়ে যাওয়া যায়।
আগে শুধু নিজ প্রয়োজনেই এ হিসাবের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগ ছিল। এখন তার উপর নিভর্রশীল স্বজনরাও ব্যবহার করতে পারবেন।