নাছির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দল যাকে নৌকা দেবে, তাকেই বিজয়ী করতে তিনি কাজ করবেন।
Published : 19 Nov 2023, 08:37 PM
তিনটি সংসদীয় আসনের জন্য দলের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়ে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির বলছেন, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা যাকেই নৌকা প্রতীক দেবেন, তাকেই বিজয়ী করতে তিনি কাজ করবেন।
শনিবার চট্টগ্রাম-৯, ১০ ও ১১ আসনে দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র নাছির। রোববার তিনি তিন আসনেই ফরম জমা দেন।
পরে ‘চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এক বার্তায়’ তিনি নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। নগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই বার্তার বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানানো হয়।
সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন গতবার দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র পদে দলের মনোনয়ন চেয়েও পাননি। এরপর চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী ছিলেন। তবে সেবার মনোনয়নপত্র নেননি।
সবশেষ চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপ-নির্বাচনের সময় আ জ ম নাছির জানান, তিনি ওই আসনে দলের মনোনয়ন চাইবেন না। তিনি চট্টগ্রাম-৯ আসনের ভোটার। তাই জাতীয় নির্বাচনে তিনি সেই আসনে দলের মনোনয়ন চাইবেন।
শনিবার দলের মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হলে চট্টগ্রাম-৯, ১০ ও ১১ আসনের ফরম নেন নাছির। তার সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ। তিনি নগরের রাজনীতিতে নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
যে তিন আসনের মনোনয়ন নাছির চেয়েছেন, তার মধ্যে চট্টগ্রাম-৯ আসনে সংসদ সদস্য সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম-১০ আসনে সংসদ সদস্য নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু এবং চট্টগ্রাম-১১ আসনে সংসদ সদস্য নগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য এম এ লতিফ।
নাছির ওই তিন আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম নেওয়ার পর চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে নাছির বলেন, “শেখ হাসিনা যাকেই নৌকা প্রতীক দেবেন তাকে বিজয় করার প্রত্যয়ে আমিও নৌকা চেয়েছি।”
চট্টগ্রামবাসীর দোয়া চেয়ে নাছির বলেন, “তৃণমূলস্তর থেকে উঠে আসা বঙ্গবন্ধুর আর্দশের অনুসারী একজন সৈনিক হিসেবে আমি ও আমার মত যারা আছেন, তারা প্রত্যেকেই জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহে অধিকার রাখেন।
“আমি ছাড়াও বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে এই পর্যন্ত যারা মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছেন, অবশ্যই উনাদের যোগ্যতা আছে। যোগ্যতা, দক্ষতা এবং জনসম্পৃক্ততা বিবেচনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে নৌকা প্রতীক দেবেন, তাকেই বিজয়ী করার ব্রত নিয়ে আমিও আমার প্রার্থিত ৩টি আসনের যে কোনো একটিতে আমাকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হলে আমি ধন্য হব।“
নাছির বলেন, “তবে আমার প্রার্থিত আসনে তিনি আমাকে ছাড়া উনার বিবেচনায় যোগ্য যে কোনো প্রার্থীকে নৌকা প্রতীক দিলে, আমার সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সর্বশক্তি নিবেদন করব।
“আমি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক নির্বাচিত মেয়র ও সেবক হিসেব নগরবাসীর সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা জানি। কোথায় ব্যর্থ, কোথায় সফল তাও অনুভব করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশসহ বিশেষ করে চট্টগ্রামের উন্নয়নে যে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করেছেন, সেক্ষেত্রে আমার সামান্য অবদানও আছে।”
এখনো যে চট্টগ্রামের অনেক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নাধীন, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে নাছির বলেন, “তাই আমি এই অভিযাত্রায় অংশীদার হতে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম নগরীর তিনটি আসন থেকে যে কোনো একটিতে নৌকা প্রতীক পাই, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণে সচেষ্ট হব।
“এবং আমার প্রার্থিত আসনে আমাকে ছাড়া মাননীয় শেখ হাসিনা যাকেই নৌকা প্রতীক দেবেন, তাকেই বিজয়ী করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব।”
চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরোধে ২০১৪ সালের নভেম্বরে ঘোষিত নগর কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়ে যান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাছির। এর আগে নগর কমিটির কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন না তিনি।
এর এক বছর পর তিনবারের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ডিঙিয়ে সিটি মেয়র পদে দলের মনোনয়ন পান নাছির।
মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধ, প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতা, সিডিএ’র সাথে বিরোধ, বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা ঘিরে নগরীর সাংসদের সঙ্গে বিরোধ, রাজনৈতিক বিষয়ে বর্ষীয়ান নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বিরোধী পক্ষকে ইন্ধন দেওয়াসহ নানা অভিযোগে সমালোচিত হন নাছির।
সবশেষে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নের প্রশ্নে নগর কমিটির মহিউদ্দিন শিবিরের নেতাদের বিরোধিতার মুখে পড়েন তিনি।
এরপর চট্টগ্রাম ৮ উপনির্বাচনে আলোচনায় থাকলেও নাছির দলীয় মনোনয়ন চাননি। তখন তার অনুসারীরা বলেছিলেন, দলের হাইকমান্ডের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ না থাকায় তিনি দলীয় মনোনয়ন ফরম তোলেননি।
আরও পড়ুন
চট্টগ্রাম-৮: মোছলেমের অবর্তমানে আলোচনায় নাছির-ছালাম
চট্টগ্রাম ১০ উপ নির্বাচন: নৌকা পেতে পুরনোদের সঙ্গে তরুণ মুখও
চট্টগ্রাম ফিরে আ জ ম নাছির বললেন, হতাশ নই