সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ এ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম দিচ্ছে শনিবার থেকে; চলবে সোমবার পর্যন্ত।
Published : 26 Jun 2023, 12:16 AM
স্বল্প সময়ের জন্য হলেও চট্টগ্রামে ডা. আফছারুল আমীনের শূন্য আসন থেকে সংসদে যেতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী অনেকেই; যাদের মধ্যে নগরের রাজনীতির পুরনো মুখ যেমন আছেন, তেমনি আছেন একঝাঁক তরুণ।
সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম ১০ সংসদীয় আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম দিতে শুরু করেছে শনিবার; চলবে সোমবার পর্যন্ত।
এ আসনের তিনবারের এমপি ও নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ডা. আফছারুল আমীন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২ জুন মারা যান। নির্বাচন কমিশন এ আসনে উপ নির্বাচনের জন্য দিন ঠিক করেছে ৩০ জুলাই। আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারির শুরুতে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। সে হিসাবে নব নির্বাচিত সংসদ সদস্য আর মাত্র পাঁচ মাস দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন।
সেই উপ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেতে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, উপদেষ্টা, সদস্য ও সাবেক নগর যুবলীগ নেতাসহ একডজনেরও বেশি প্রার্থী আগ্রহের কথা জানিয়ে যোগাযোগ করছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে।
পাশাপাশি সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য আফছারুল আমীনের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তার স্ত্রী অধ্যাপক ডা. কামরুন্নেছা এবং তার বড় ছেলে ফয়সাল আমীন বাবার আসনে প্রার্থী হতে চান।
সবশেষ গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম ৮ আসনের উপ নির্বাচনে দলের নগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ মনোনয়ন পাওয়ায় এবারও প্রার্থী বাছাইয়ে তেমন কিছুরই আলোচনা স্থানীয় রাজনীতিতে।
মা ও ভাইয়ের পক্ষে মনোনয়ন ফরম নেওয়া আফছারুল আমীনের ছোট ছেলে মাহিদ বিন আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাবার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে আমাদের পরিবারের মধ্যে থেকে নেত্রী যে কাউকে সুযোগ দিলে আমরা সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব। গত তিন বছর বাবার সকল কর্মকাণ্ডে আমরা সঙ্গে ছিলাম।“
এ আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী ‘চট্টল শার্দুল’ খ্যাত প্রয়াত রাজনীতিক এম এ আজিজের সন্তান ও নগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার।
তিনি বলেন, “আমি ২৭ বছর ধরে দলের একজন সক্রিয় কর্মী। জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের সকল কর্মসূচি ও কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থেকেছি, যা দলীয় নেতাকর্মীরা এবং সাধারণ মানুষ জানে।
“আমার পিতা এম এ আজিজ এক দফার প্রবক্তা ছিলেন। উনার সন্তান হিসেবে চট্টগ্রামের মানুষ আমাকে চেনে-জানে। রাজনৈতিকভাবে যতটুকু করার করছি। এখন নেত্রী যা সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই চূড়ান্ত। আমি মনোনয়ন ফরম নিয়েছি।”
এ আসনে প্রার্থী হতে চান নগর যুবলীগের বিদায়ী আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু। বর্তমানে তিনি নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। ২০১৮ সালেও চট্টগ্রাম ১০ আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহ ছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, “৪০ বছর ধরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এলাকার মানুষের সাথে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তারাও আমাকে আস্থা-বিশ্বাসের জায়গায় রাখে। এই বোঝাপড়া পারস্পরিক।“
আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী নগর যুবলীগের বিদায়ী যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ বলেন, “সেই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে দীর্ঘদিন ধরে আমি মাঠে ময়দানে আছি। দলীয় মনোনয়ন চাইব।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাকে যোগ্য মনে করেন, তাকেই দিবেন। উনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।”
মনোনয়ন প্রত্যাশী নগর যুবলীগের আরেক সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা বলেন, “১৯৮২ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্য দিয়ে আমার রাজনীতি শুরু। এরপর ওয়ার্ড, থানা হয়ে নগর যুবলীগ ও কেন্দ্রীয় যুবলীগে দায়িত্ব পালন করেছি। আশাকরি দীর্ঘ ৪০ বছরের ত্যাগ তীতিক্ষা ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন দল করবে৷”
নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে কমিটির সহ সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন চট্টগ্রাম ১০ আসনের স্থায়ী বাসিন্দা।
হজ পালনে মক্কায় অবস্থানকারী ১৪ দল চট্টগ্রামের সমন্বয়ক সুজন বলেন, “সিদ্ধান্ত নিবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। যদি তিনি আমাকে উপযুক্ত মনে করেন, তাহলে অবশ্যই আছি। নির্বাচন করব। মানুষের সেবার চেষ্টা করব।“
চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের আরেক শীর্ষ নেতা নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নামও আলোচনায় আছে। এর আগে চট্টগ্রাম ৮ উপনির্বাচনে আলোচনায় থাকলেও তিনি দলীয় মনোনয়ন চাননি। তখন তার অনুসারীরা জানিয়েছিলেন, দলের হাইকমান্ডের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ না থাকায় তিনি দলীয় মনোনয়ন ফরম তোলেননি। এবারও তিনি এ আসনে প্রার্থী হতে চান না।
এ প্রসঙ্গে নাছির বলেন, "আমি চট্টগ্রাম-১০ এর ভোটার নই। তাই সেখানে মনোনয়ন চাইছি না। তবে দল যে কাউকে যে কোনো আসন থেকে মনোনয়ন দিতে পারেন।“
অন্যদের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এ কে এম বেলায়েত হোসেন ও সফর আলী, সহ সভাপতি আলতাফ হোসেন বাচ্চুর নামও আছে আলোচনায়।
এছাড়া চট্টগ্রামের প্রয়াত নেতা জহুর আহাম্মদ চৌধুরীর সন্তান হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তুফান, নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক সৈয়দ মাহমুদুল হক ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলামও মনোনয়ন চাইবেন বলে বিভিন্ন ফোরামে জানিয়েছেন। সাবেক সিটি মেয়র এম মনজুর আলম ও তার ছেলে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে গুঞ্জন আছে।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী আগ্রহীরা ৪ জুলাই পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন। মনোনয়ন বাছাই হবে ৬ জুলাই। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ১২ জুলাই পর্যন্ত। পরদিন হবে প্রতীক বরাদ্দ।
এ আসনে প্রচলিত পদ্ধতির পাশাপাশি অনলাইনে মনোনয়ন জমার সুযোগ রাখা হয়েছে।