বিএনপি-জামাতের ডাকা হরতাল বা রাত জাগার কষ্ট বড় দুর্ভোগ হয়ে দাঁড়ায়নি বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে পারাপার করা যাত্রী-চালকদের কাছে
Published : 29 Oct 2023, 10:28 AM
ঢাকার মুন্সীগঞ্জের ব্যবসায়ী জুয়েল রানা মাইক্রোবাস নিয়ে গিয়েছিলেন কক্সবাজারে। বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রথম দিনের যাত্রী হবেন বলে ফেরার পথে গভীর রাতে আনোয়ারার প্রান্তে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করেছেন তিন ঘণ্টা। অবশেষে টানেল পারাপারে প্রথম যাত্রী হিসেবে টোল দিয়ে দারুণ খুশি তিনি।
রানার মত অনেকে দেশের দূরদূরান্ত থেতে কাজের সূত্রে কক্সবাজার বা চট্টগ্রামে এসে ফেরার পথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন কেবল টানেলে প্রথমদিনের যাত্রী হতে। বিএনপি-জামাতের ডাকা হরতাল বা রাত জাগার কষ্ট বড় দুর্ভোগ হয়ে দাঁড়ায়নি এসব মানুষের কাছে।
চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু টানেলের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা দুই প্রান্তেই নদীর তলদেশের সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে পারাপারে উচ্ছ্বসিত সাধারণ মানুষ।
টানেল প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সকাল ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত ৭২ টি যানবাহন টানেল পার হয়েছে। টোল আদায় হয়েছে ১৯ হাজার ২৫০ টাকা।
১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ টানেল শনিবার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে পৌঁছে প্রথম যাত্রী হিসেবে সেখানে টোলে দেন সরকারপ্রধান।প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর রোববার সকাল ৬টায় সাধারণ যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় টানেলের দ্বার।
কর্ণফুলী নদীর একপাড়ে বন্দর নগরী, অন্যপাড়ে আনোয়ারা উপজেলার শিল্প এলাকা। ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ার উচ্চাভিলাসী লক্ষ্য নিয়ে বানানো এই টানেলের মাধ্যমে এই দুই পাড় যুক্ত হল। পথ খুলল বিশ্বমানের যোগাযোগের।
প্রথম পারাপারকারী হতে পতেঙ্গা প্রান্তে অপেক্ষা শুরু হয় রোববার রাত ১২টা থেকে। আর আনোয়ারা প্রান্ত থেকে গাড়ি নিয়ে যাত্রীরা আসতে শুরু করেন রাত ৩টা থেকে।
তবে বঙ্গবন্ধু টানেলের একমাত্র টোল প্লাজাটি আনোয়ারা প্রান্তে হওয়ায় প্রথম টোল দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন আনোয়ারা প্রান্তের অপেক্ষমাণরা।
আনোয়ারা প্রান্তের মাইক্রোবাসের চালক মো. শাহাদাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তিনি মুন্সিগঞ্জ থেকে যাত্রী নিয়ে এসেছিলেন। ফেরার সময় টানেলের প্রথম যানবাহন হতে রাত ৩টা থেকে অপেক্ষায় ছিলেন।
"খুব ভালো লাগছে। আমরা খুব খুশি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ এত সুন্দর টানেল করায়।"
এই মাইক্রোবাসের যাত্রী ব্যবসায়ী জুয়েল রানা বলেন, "আমরা মুন্সিগঞ্জ থেকে কক্সবাজার গিয়েছিলাম। ফেরার সময় টানেল দিয়ে যাব বলে প্রায় তিন ঘণ্টা এখানে ওয়েট করেছি। প্রথম টোলদাতা হতে পেরে খুব ভালো লাগছে।"
৫ যাত্রী নিয়ে একটি প্রাইভেট কার এবং ২৫ জন যাত্রী নিয়ে 'বিডি বাস লাভার' গ্রুপ নামের পর্যটকদের মার্শা পরিবহনের একটি বাস টানেল দিয়ে পারাপারের অপেক্ষায় রাত ১২টা থেকে ছিল পতেঙ্গা প্রান্তে।
ভোর ৬টায় টানেলের প্রবেশদ্বার খুলতেই পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে প্রাইভেট কার ও বাসটি দ্রুত গতিতে টানেল ধরে এগিয়ে যেতে থাকে। ওই সময় কার ও বাসের যাত্রীরা আনন্দ-উচ্ছ্বাসে হুল্লোড় তুলে দেন।
সঙ্গে আরো কয়েকটি প্রাইভেট কার প্রায় কাছাকাছি সময়ে টানেলে প্রবেশ করে।
৫ যাত্রীর প্রাইভেট কারের ড্রাইভিং সিটে থাকা নগরীর পতেঙ্গার বাসিন্দা মো. মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "গতকাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথম পতেঙ্গা থেকে টানেলে প্রবেশ করেছেন। এরপর এই প্রান্ত থেকে আজ আমরাই প্রথম টানেলে প্রবেশ করেছি। রাত ১২টা থেকে অপেক্ষায় ছিলাম প্রথম পারাপার করব বলে।"
'বিডি বাস লাভার' গ্রুপের সদস্য টিপু সুলতান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা সবাই চট্টগ্রামের বাসিন্দা। বাস নিয়ে প্রথম টানেল পাড়ি দিতে এজন্য রাত থেকে এখানে ওয়েট করছি। সবাই এক্সাইটেড।"
পর্যটকদের বাসের চালক সিরাজুল ইসলামের কাছে নদীর তলদেশ দিয়ে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা ‘অনন্য’।
তিনি বলেন, "বাস চালিয়ে অনেক জায়গায় গেছি। কিন্তু এরকম নদীর নিচের রাস্তা দিয়ে কোনোদিন যাইনি। খুব ভালো লাগতেছে যে বাস ড্রাইভার হিসেবে আমিই প্রথম বাস নিয়ে আসলাম।"
এরপর একে একে উভয় প্রান্ত থেকে আসতে শুরু করে নানা রকম যানবাহন। এরমধ্যে ছিল সাধারণ যাত্রী, পতেঙ্গা ও আনোয়ারার বাসিন্দা, বিমানবন্দরগামী ও বিমানবন্দর ফেরত প্রবাসী, ব্যবসায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
'মামুন এক্সপ্রেস' পরিবহনের একটি বাস সকাল ৬টা ৩৮ মিনিটে আসে টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে।
বাসের চালক মো নুরুদ্দিন (৬০) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এই বয়সে অনেক জাগায় গাড়ি চালাইছি। আইজ খুব খুশি। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। বহদ্দারহাট থেকে যাত্রীরা এসেছেন টানেল দেখতে।"
টানেলের প্রথম নারী চালক পতেঙ্গার বাসিন্দা আনিকা মোবাশ্বেরা । পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জিপ চালিয়ে পার হন বঙ্গবন্ধু টানেল। প্রথম নারী চালক হিসেবে টানেল পার হওয়ায় উচ্ছ্বসিত তিনি।
আনোয়ারা প্রাস্তে টোল প্লাজায় ১৬টি টোল বুথ থাকলেও প্রথম দিন চালু আছে ১২টি। চারটি বুথ রিজার্ভ রাখা হয়েছে।
এই ১২টি বুথের মধ্যে ৬টি আনোয়ারামুখী ও ৬টি পতেঙ্গামুখী যানবাহনের জন্য নির্দিষ্ট করা আছে।
টানেল প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, "প্রতিটি গাড়ি টোল দিতে ৩০ সেকেন্ড সময় লাগছে। তিন উপায়ে টোল দেয়া যাবে -ইলেকট্রনিক, কার্ড ও ম্যানুয়েল। তবে এখন শুধু ম্যানুয়ালি টোল আদায় করা হচ্ছে। "
প্রথম ঘণ্টায় বেশি গাড়ি থাকলেও পরের কয়েট ঘণ্টায় গাড়ি তুলনামূলক কম পারাপার হচ্ছে বলে উপ-প্রকল্প পরিচালক আজাদ বলেন।
টানেলের টোল ম্যানেজার মো. বেলায়েত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, "১৯০টি গাড়ি চলেছে সকাল ৯টা পর্যন্ত। আদায় হয়েছে ৪৬ হাজার টাকা টোল।
"হরতালের কারণে গাড়ি প্রত্যাশার চেয়ে কিছুটা কম। তবে আশাকরি দুপুরের পর থেকে গাড়ির সংখ্যা অনেক বাড়বে"
পুরনো খবর