Published : 29 Mar 2023, 08:06 PM
বিড়াল ছানা ধরতে গিয়ে আগের দিন সবজি বিক্রেতা রুবেলের ভ্যানের সঙ্গে ধাক্কা লাগে ১০ বছরের মেয়ে শিশুটির। বিড়াল ছানা এনে দেবে বলে তখন শিশুটির সঙ্গে মিনিট পাঁচেক কথাও বলে প্রতিবেশী ওই যুবক। পরদিন রাস্তায় আবার দেখা হলে শিশুটিকে বিড়াল ছানা দেবে বলে ভ্যান করে নিয়ে যায় ফাঁকা এক বাসায়; এরপর থেকেই সাত দিন নিখোঁজ ছিল শিশুটি।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যৌন নির্যাতনের অভিপ্রায় থেকেই শিশুটিকে তার বাসা থেকে কিছুটা দূরের ওই ফাঁকা বাসায় নিয়ে যায় রুবেল। পরে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে জানাজানির ভয়ে ‘শ্বাসরোধ করে হত্যা করে’ শিশুটিকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এমনটিই জানিয়েছে গ্রেপ্তার ওই যুবক।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক ইলিয়াস খানের দাবি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা ‘স্বীকার করে’ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে।
এক সপ্তাহ আগে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকা থেকে নিখোঁজ হয় ১০ বছর বয়সী ওই শিশু। মেয়ের সন্ধানে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন তার মা। কোনো প্রতিকার না পেয়ে মঙ্গলবার আদালতে অপহরণের মামলা করার পরদিন প্রতিবেশী সবজি বিক্রেতা মো. রুবেলকে (৩৫) আটকের পর পিবিআই শিশুটির লাশের খবর জানতে পারে।
বুধবার ভোরে পাহাড়তলী থানার সাগরিকা বাই লেইন মুরগি ফার্ম আলমতারা পুকুর পাড় এলাকার ডোবা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
মামলার এজাহারেও এসেছে বিড়াল ছানার বিষয়টি। শিশুটির মা বলেন, “ঘটনার দু-তিন দিন আগে স্কুলের এক বান্ধবী বিড়াল কিনেছে জানিয়ে আমার কাছে বিড়াল ছানা কিনে দেয়ার আবদার করে মেয়ে। তখন বলেছিলাম, বেতন পেলে বিড়াল ছানা কিনে দিব।
“তখন সে বলেছিল, রাস্তার এক তরকারি বিক্রেতা বলেছে, তার এক পরিচিত লোক আছে। সেখান থেকে আমাকে বিড়াল ছানা এনে দেবে।”
পিবিআই পরিদর্শক ইলিয়াস জানান, এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক রুবেল কাজীর দিঘী এলাকার বাসিন্দা। সেই এলাকায় ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করতেন। তারই প্রতিবেশী পোশাক শ্রমিক মা ও দাদির সঙ্গে থাকতেন শিশুটি।
আটকের পর পিবিআই কর্মকর্তাদের রুবেল জানায়, নিখোঁজের আগের দিন ২০ মার্চ দুপুরে রাস্তায় দৌঁড়ে একটি বিড়াল ছানা ধরার সময় তার সবজির ভ্যানে ধাক্কা খায় আয়নী। রুবেল তাকে তুলে দিয়ে কয়েক মিনিট গল্পও করে। সেসময় শিশুটি তার কাছে বিড়াল ছানার আবদারও করে।
পরদিন বিকালে মাদ্রাসা থেকে আরবি পড়ে বাসায় গিয়ে পোশাক পাল্টে বাইরে আসে শিশুটি। বিড়াল ছানা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে রুবেল শিশুটিকে তার ভ্যানের পেছনে করে কাজীর দিঘী এলাকাতেই একটি ভবনের চতুর্থ তলায় নিয়ে যায়। যেটি তার পরিচিত এক জনের খালি বাসা।
রুবেলের বরাত দিয়ে পিবিআই পরিদর্শক ইলিয়াস বলেন, ওই বাসায় নিয়ে গিয়ে রুবেল শিশুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ওই সময় চিৎকার করে দরজা খুলে বাসা থেকে বের হবার চেষ্টা করলে তাকে ভয়ভীতি দেখায় এবং বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য হুমকি দেয়।
“বিষয়টি অন্যদের জানিয়ে দেবে সেই ভয় থেকে রুবেল তার গলা চেপে ধরে। নিস্তেজ হয়ে গেলে বালিশ চাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং লাশ রেখে বাসার নিচে নেমে আসে।”
পিবিআইয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, বিকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে ছয়টার মধ্যে শিশুটিকে খুন করা হয়। কিন্তু লাশ গুম করে রাত সাড়ে নয়টার দিকে।
রুবেল তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, নাতনির খোঁজ না পেয়ে শিশুটির দাদি তাকে ফোন করেছিলেন। ওই সময় সে তার কাছে গিয়ে শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া যাবে বলে আশ্বস্ত করে। বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরা দেখিয়ে দাদিকে আশ্বস্ত করে সেগুলোর ফুটেজ দেখে শিশুটিকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
পুলিশ জানায়, প্রতিবেশী লোকজনসহ রুবেলও শিশুটিকে খুঁজেছিলেন। এরপর রাত নয়টার দিকে লোকজন কমে গেলে রুবেল ভ্যান নিয়ে আবার সেই বাসায় যায়, যেখানে শিশুর মরদেহ লুকিয়ে রেখেছিল। সেখান থেকে লাশটি বস্তায় ভরে আলমতারা পুকুর পাড় এলাকার ডোবায় ফেলে আসে।
পিবিআই পরিদর্শক ইলিয়াস জানান, ২১ মার্চ রাতে বস্তা ভরে ডোবায় লাশ ফেলার তিন দিন পর রুবেল আবার সেখানে যায়। লাশের বস্তাটি দেখা না যাওয়ার জন্য তার উপর কিছু খড়কুটা দিয়ে আসে।
পরিচয় লুকাতে খুলে রাখা হয় কাপড়
যে স্থান থেকে লাশ উদ্ধার করা হয় সেখান থেকে অন্তত দুই কিলোমিটার দূরে নালার মধ্যে একটি ব্যাগে করে ফেলা হয় শিশুটির পরিধান করা কাপড়।
বুধবার ভোরে রুবেলকে নিয়ে লাশ উদ্ধারের পর তল্লাশি চালিয়ে পাহাড়তলী পোর্ট কানেক্টিং সড়কে কলকা সিএনজি স্টেশনের পাশের একটি খাল থেকে শিশুটির কাপড় ও জুতা উদ্ধার করা হয় বলে জানান পিবিআইয়ের ওই কর্মকর্তা।
কবুতর দেখাশোনা করতে চাবি দেওয়া হয় রুবেলকে
যে বাসায় শিশুটিকে খুন করা হয় সেটি রুবেলের পরিচিত এক ব্যক্তির। যিনি প্রায় দেড় মাস ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, ঘরের মালিক কবুতর পালন করেন। তিনি ঢাকায় যাওয়ার সময় রুবেলকে চাবি দিয়ে যায় কবুতরগুলোকে খাবার দেওয়ার জন্য। ওই বাসাটি খালি থাকায় শিশুটিকে সেখানে নিয়ে যায়।