আদালতে অপহরণের মামলার পর শিশুর লাশ মিললো ডোবায়

শিশুটির খোঁজে থানায় ধর্না দিয়েও কোনো প্রতিকার না পেয়ে আদালতে অপহরণের মামলা করেছিলেন মা। তিনি যাকে সন্দেহ করছিলেন, সেই প্রতিবেশী সবজি বিক্রেতাকে আটক করার পরই পিবিআই শিশুটির লাশের খবর জানতে পারে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2023, 03:51 AM
Updated : 29 March 2023, 03:51 AM

এক সপ্তাহ আগে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকা থেকে নিখোঁজ ১০ বছর বয়সী এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই।

বুধবার ভোরে পাহাড়তলী থানার সাগরিকা বাই লেইন মুরগি ফার্ম আলমতারা পুকুর পাড় এলাকার ডোবা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

শিশুটির খোঁজে থানায় ধর্না দিয়েও কোনো প্রতিকার না পেয়ে মঙ্গলবার আদালতে অপহরণের মামলা করেছিলেন তার মা। তিনি যাকে সন্দেহ করছিলেন, সেই প্রতিবেশী সবজি বিক্রেতা মো. রুবেলকে (৩৫) আটক করার পরই পিবিআই শিশুটির লাশের খবর জানতে পারে।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক ইলিয়াস খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রুবেলকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করার পর তার দেওয়া স্বীকারোক্তিতে ভোর ৫টার দিকে ডোবা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

“প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল জানায়, রুবেল মেয়েটিকে প্রলোভন দেখিয়ে একটি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। মেয়েটি বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে। পরে লাশ বস্তাবন্দি করে ডোবায় ফেলে দেয়।

দশ বছর বয়সী মেয়েটি পাহাড়তলী এলাকার একটি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। পাহাড়তলীর আব্দুর কাজীর দীঘির পাড় এলাকায় তাদের বাসা। তার মা পোশাক কারখানার কর্মী। বাবাও ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন।

মেয়ে সাত দিন ধরে নিখোঁজ জানিয়ে তার মা মঙ্গলবার চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক শরমিন জাহানের আদালতে মামলা করেন। বিচারক তার আর্জি শুনে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে পাহাড়তলী থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।

Also Read: মেয়ে নিখোঁজ ৭ দিন, আদালতে অপহরণের মামলা মায়ের

বাদীর আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ সে সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ২১ মার্চ বিকেলে শিশুটি নিখোঁজ হয়। সে বিষয়টি জানিয়ে থানায় একটি জিডিও করা হয়। কিন্তু এক সপ্তাহ পরও মেয়ের খোঁজ না পেয়ে থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন মা। তখন তাকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেয় পুলিশ।

“আসামি রুবেলকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু তাকে আটক করেনি।”

শিশুটির মা সাংবাদিকদের বলেন, “আমার মেয়ে বিড়ালের জন্য পাগল ছিল। বিড়াল দেওয়ার কথা বলে আমার মেয়েকে নিয়ে গেছে। আপনারা যেভাবে হোক আমার মেয়েকে খুঁজে দেন।”

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২১ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আরবি পড়তে বাসা থেকে বের হয়েছিল শিশুটি। সে সময় সে বোরকা পরিহিত ছিল।

“ওই এলাকার সিসিটিভি ভিডিও এবং স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, আসামি রুবেলের হাতে তখন একটি বাজারের থলে ছিল, যাতে একটি বিড়াল ছানা ছিল। রুবেল বিড়াল ছানাটি দেয় মেয়েটির হাতে। এরপর থেকে রুবেল ও শিশুটিকে আর দেখা যায়নি।

“বিড়াল ছানা দেবার নাম করে আসামি রুবেল সহযোগীদের সহায়তায় মেয়েটিকে ভুল বুঝিয়ে বা ভয়ভীতি দেখিয়ে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আটকে রেখেছে অথবা অসৎ উদ্দেশ্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করেছে।”

মামলার এজাহারে শিশুটির মা বলেন, “ঘটনার দু-তিন দিন আগে স্কুলের এক বান্ধবী বিড়াল কিনেছে জানিয়ে আমার কাছে বিড়াল ছানা কিনে দেয়ার আবদার করে মেয়ে। তখন বলেছিলাম, বেতন পেলে বিড়াল ছানা কিনে দিব।

“তখন সে বলেছিল, রাস্তার এক তরকারি বিক্রেতা বলেছে, তার এক পরিচিত লোক আছে। সেখান থেকে আমাকে বিড়াল ছানা এনে দেবে।”

জানতে চাইলে পাহাড়তলী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিশু নিখোঁজের ঘটনায় আগে জিডি হয়েছে, সেটি ধরেই আমরা তদন্ত করছি।

“শিশুটির মা-বাবা আলাদা থাকেন। যে তরকারি বিক্রেতার কথা বলা হচ্ছে সে স্থানীয়। সব বিষয় বিবেচনায় রেখেই আমরা কাজ করছি। যাদের প্রয়োজন তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এখনই কনক্লুসিভ কিছু বলতে পারছি না।”